এক্সট্রিম ম্যাক্রো

এক্সট্রিম ম্যাক্রো ফটোগ্রাফির সংজ্ঞা আসলে কি ? সেভাবে আসলে এক্সট্রিম ম্যাক্রো সংজ্ঞায়িত করা হয় নাই। ম্যাক্রো বলতে সাধারণত আমরা ক্যামেরা / লেন্স ব্যবহার করে যদি কোন কিছুর ১:১ প্রতিচ্ছবি তুলতে পারি তবে সেটাই ম্যাক্রো। অনেকে বলে থাকেন মাইক্রোস্কোপের লেন্স ব্যবহার করে বা অন্য কোন ভাবে যদি ১০+ গুণ কোন প্রতিচ্ছবি তুলতে পারা যায় তবে সেটাই এক্সট্রিম ম্যাক্রো।

কন্টক মুকুট ফুলের একদম ভিতরের দিকে যে ছোট ছোট হলুদ অংশ দেখা যায় তার ছবি। লেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মাইক্রোস্কোপের ১০এক অবজেক্টিভ।

ম্যাক্রোর ব্যাপারে সবাই কম বেশী আগ্রহী। ক্যামেরা কেনার পর অনেকেই হয়তো চেষ্টা করেন এবং ব্যর্থ হন। একটা পর্যায়ে এসে বুঝতে পারা যায় যে সব লেন্স দিয়ে আসলে এই কাজটি করা সম্ভব নয়। আমিও একই দলের। ক্যামেরার খুটিনাটি বুঝতেই চলে গেলো প্রায় বছর খানেক। এরপর যখন ম্যাক্রো লেন্স নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করলাম শুরুতেই হোঁচট খেতে হলো এর দাম দেখে। তারপর আর কি !?! নানা বিকল্প খোঁজা এবং একসময় ‘অসাধারণ’ ম্যাক্রো ছবি তোলার আশা পরিত্যাগ।

Crown of Thorns (Euphorbia milii)

ইদানিং ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক কারণে। এটা-ওটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ম্যাক্রো ফটোগ্রাফির ইচ্ছে আবার জাগরুক হয়েছে। জিনিসপত্র বাছতে গিয়ে দেখলাম হুজুগে পরে  বেশ কিছু জিনিস কিনেছিলাম বটে, কিন্তু ব্যবহার আসলে সেভাবে করা হয়নি। তার মধ্যে একটি ব্যবহৃত মাইক্রোস্কোপ আছে, আছে সেই মাইক্রোস্কোপ অবজেক্টিভ ক্যামেরায় লাগানোর কনভার্টার। তাই আবার চেষ্টা শুরু।

মাইক্রোস্কোপের অবজেক্টিভ লেন্স, সাথে আছে ক্যামেরায় লাগানোর কনভার্টার।

এর আগে এক্সট্রিম ম্যাক্রো করতে গিয়ে পুরোই ব্যর্থ হয়েছিলাম। এবার পুরো ব্যর্থ না হলেও খূব ভাল কিছু হয়নি। আরো কয়েকবার চেষ্টা করতে হবে সময় সূযোগ মতো। তবে আগেরবার ব্যর্থ হওয়ার কারণ অবশ্য বুঝতে পেরেছি। আগেরবার শুরুতেই ১০০এক অবজেক্টিভ নিয়ে মেতেছিলাম। মাইক্রোস্কোপেও ১০০এক্স অবজেক্টিভ ব্যবহার করা খূব সহজ কাজ না। অবজেক্টিভের লেন্স সাবজেক্টের একবারে গা ঘেষে থাকে। মাইক্রোস্কোপে সাধারণ সেমি ট্রান্সপারেন্ট সাবজেক্ট থাকে, আলো দেয়া হয় নিচ থেকে। কিন্তু ফটোগ্রাফি করতে গেলে সেটি সম্ভব না, যদি না সাবজেক্ট সেরকম সেমি ট্রান্সপারেন্ট হয়। ফলে ১০০এক্স অবজেক্টিভ দিয়ে ম্যাক্রো প্রায় অসম্ভব একটি বিষয়। এবার তাই শুরু করলাম ১০এক্স অবজেক্টিভ দিয়ে। তারপরও দেখা গেলো সাবজেক্ট আর লেন্স টিপ এর মধ্যে দূরত্ব খূব বেশী হলে ১ -১.৫ সেন্টিমিটার। কষ্ট করে আলো কিছু দেয়া যায়। এখানে দ্বিতীয় সমস্যা হলো ডেপথ অফ ফিল্ড। সেটি বড় জোর ১/২ মিমি। হাতে নিয়ে ছবি তোলা অসম্ভব। সেই অসম্ভব কে সম্ভব করতে গিয়ে দেখা গেলো সব ছবি শেক এর কারনে ঝাপসা হয়ে গেছে। ট্রাইপডে রাখলেও দেখা যায় সেট করে হাত সরানোর পর ২/৩ মিমি সরে যায়। আসলে এর জন্য দরকার ফোকাসিং রেইল। ট্রাইপডে সেট করে মিলিমিটার বাই মিলিমিটার সামনে পিছনে করা যাবে।

আরেকটি সম্ভাবনার কথা মাথায় এসেছে। সেটি হলো অবজেক্টিভ লেন্স ক্যামেরা লেন্স এর সামনে ফিল্টারের মতো করে সেট করা। এর জন্য আরো একটি কনভার্টার লাগবে। আপাতত আলি এক্সপ্রেসে খূজতেছি। তবে লাইটিং এর জন্য নতুন কোন আইডিয়া দরকার। মনে হচ্ছে LED দিয়ে নিজেই হয়তো একটা বানাবো। খূব ভারিক্কি কিছু না। যে কোন LED ১টি বাটন সেল এ সংযোগ দিলেই জ্বলে। আপাতত এই রকম LED, বাটন সেল লেন্সের টিপে কিভাবে সেট করা যায় সেটি নিয়েই ভাবছি।

আজ এপর্যন্তই। ভাল থাকবেন।
(আমার তোলা ছবিটি ঠিকমতো ফোকাস হয়নি)

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।