গরীবের ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি (১)

সাধ আছে সাধ্য নাই এই বিষয়টি মনে হয় বাংলাদেশের অনেক ম্যাক্রো ফটোগ্রাফারদের বেলাতেই খাটে। ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনার পর নেটে এবং বিভিন্ন সূত্রে বিভিন্ন ধরণের ছবি দেখার পর সবারই এক ধরণের ঝোঁক চাপে ঠিক সেই রকম একটি ছবি তোলার। তারপর নানা ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যখন দেখা যায় সে ধরণের ছবি তোলা যাচ্ছে না, তখন স্বভাবতই মন খারাপ হয়। কিছু সময় পর সবারই আসলে বোধোদয় হয় – ডিএসএলআরে বিভিন্ন ধরণের ছবি তোলার জন্য ভিন্ন ভিন্ন লেন্স ব্যবহার করতে হয়। পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরার মতো এক লেন্সেই সব কাজ করা সম্ভব নয়। ম্যাক্রো ফটোগ্রাফীর ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি আরো বেশী সত্য। সেই সাথে বাস্তব সত্য হলো ম্যাক্রো লেন্সের মূল্য। ভাল এবং কার্যকরী ম্যাক্রো লেন্সের দাম অনেক ক্ষেত্রেই এমেচার ফটোগ্রাফারের ক্যামেরা বডির চাইতে বেশী। কিন্তু তাই বলে কি শখ থেমে থাকবে। কখনই নয়। খূব সাধারণ কিছু টেকনিক বা টুলস / গ্যাজেট ব্যবহার করে মোটামুটি ভাল মানের ম্যাক্রো ফটোগ্রাফী করা সম্ভব। তবে এখানে বলে রাখা ভাল ম্যাক্রো ফটোগ্রাফীতে ভাল বা প্রফেশনাল ইকুইপমেন্টের চাইতে বেশী দরকার ধৈর্য্য এবং একাগ্রতা। এই দু’টির অভাব থাকলে আপনার ম্যাক্রো ফটোগ্রাফীতে আসাই উচিত না।

রিভার্স রিং
রিভার্স রিং

এখন গরীবের এই ঘোড়া রোগের জন্য প্রথমেই যে টেকনিকটি ব্যবহার করা যায় সেটি রিভার্স লেন্স নামে পরিচিত। মানে আপনার ব্যবহৃত লেন্সটি উল্টো করে ব্যবহার করা। লেন্সের যে অংশটি ক্যামেরার বডিতে আটকে থাকে সেটি উল্টে সামনের দিকে নিয়ে সামনের অংশটি (যে অংশে ফিল্টার লাগানো হয়) ক্যামেরা বডির সাথে লাগিয়ে ছবি তোলার পদ্ধতিই হলো রিভার্স লেন্স পদ্ধতি। সাধারণত এক হাতে লেন্স এবং আরেক হাতে ক্যামেরা ধরে ছবি তোলা হয়। তবে এই ভাবে ছবি তুলতে গেলে বেশ কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়। প্রথমত হাত পূরোপূরি ষ্টেডি রাখাটা কষ্টকর। দ্বিতীয়ত বাইরে লেন্স এভাবে খূলে রাখলে সেন্সরে ময়লা পড়ার সম্ভবনা ষোল আনা। এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের জন্য ছোট্ট একটি রিং ব্যবহার করা হয় যেটি লেন্সকে বডিতে আটকে রাখবে। এই রিং কে বলে রিভার্স রিং। ঢাকার মার্কেটে খূব সহজে পাওয়া যায় না, একটু খূজতে হয়। দাম গড়ে ৬০০ টাকার মতো। এই রিভার্স রিং এর এক সাইডে ক্যামেরা বডিতে লাগানোর জন্য মাউন্ট থাকে লেন্সের মতো। অন্য সাইডে ফিল্টারের মতো মেল থ্রেড কাটা থাকে লেন্সের গায়ে লাগানোর জন্য। প্রথমে এটিতে ক্যামেরা বডিতে লাগানো হয় লেন্স যেমন করে লাগাতে হয়। এরপর লেন্সটি উল্টো করে ধরে প্যাঁচ ঘুরিয়ে এর সাথে আটকে দেয়া হয়। নরমাল লেন্স ব্যবহার করতে গেলে সাবজেক্ট থেকে মিনিমাম ফোকাসিং ডিসট্যান্স সব সময়ই মেইনটেন করতে হয়। সাবজেক্ট থেকে দূরত্ব এই মিনিমাম ফোকাসিং ডিসট্যান্স এর চাইতে কম হলে লেন্স ফোকাস বা অটোফোকাস কোনটাই করতে পারে না। এক এক লেন্স ক্ষেত্রে এই মিনিমাম ফোকাসিং ডিসট্যান্স এক এক রকম। যেমন নাইকন ১৮-৫৫ মিমি লেন্সে এই মিনিমাম ফোকাসিং ডিসট্যান্স ১১ ইঞ্চির মতো। ৫৫-২০০ মিমি লেন্সে প্রায় ৩ ফিট, ৫০ মিমি প্রাইমে মোটামুটি দেড় ফিট। কিন্তু কোন কিছুর ম্যাক্রো ছবি তুলতে চাইলে সাবজেক্টের যতো বেশী কাছে যাওয়া যায় ততো বেশী বড় করে ছবি তোলা যায়। ম্যাক্রো লেন্সগুলিতে সাধারণত এই মিনিমাম ফোকাসিং ডিসট্যান্স খূবই কম থাকে, যার জন্য খূব কাছ থেকে ছবি তোলা যায়। রিভার্স রিং ব্যবহার করলে যে কোন লেন্স সাবজেক্টের খূবই কাছে নিয়ে যাওয়া যায়। ফলে আমরা সাবজেক্টের অনেক বড় বিবর্ধিত ছবি পেতে পারি।

রিভার্স রিং সেটআপ


রিভার্স রিং কেনার সময় আপনাকে অবশ্যই বলতে হবে কোন মাউন্ট দরকার। আপনার ক্যামেরা নাইকন হলে নাইকন মাউন্ট, ক্যানন হলে ক্যানন মাউন্ট। সেই সাথে বলতে হবে আপনি যে লেন্সটি ব্যবহার করবেন তার ফিল্টার এর থ্রেড সাইজ কতো। নাইকন ৫০ মিমি প্রাইম এর জন্য এটি ৫২ মিমি। সাবজেক্টের খূব কাছ থেকে ছবি তুলতে গেলে আলো একটি বড় ইস্যু। সে জন্য প্রাইম লেন্স ব্যবহার করা বেটার, এতে আপনি এপারচার এফ/১.৮ বা এফ/১.৪ ব্যবহার করতে পারবেন। তবে বড় এপারচার ব্যবহার করলে শ্যালো ডেপথ অফ ফিল্ড ও কিন্তু সমস্যা। এই পদ্ধতিতে ডেপথ অফ ফিল্ড এতোটাই শ্যালো (ছোট) হয়ে যায় যে ফোকাস পয়েন্টের হয়তো কয়েক মিলিমিটার ফোকাসে থাকে, বাকি সব আউট অফ ফোকাস হয়ে যায়। বর্তমানের লেন্সগুলিতে সাধারণত এপারচার রিং থাকে না। লেন্স থেকে খোলার পর এপারচার সবচেয়ে ছোট এপারচারে সেট হয়ে যায়। লেন্সের পিছনেই একটা ছোট লিভার থাকে যা দিয়ে এই এপারচার ছোট বড় করা যায়। ছোট কাগজের টুকরো বা ম্যাচের কাঠি দিয়ে এই লিভারটিআটকে বড় এপারচার এ স্থির রাখা যায়।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।