গ্যাস ট্যাবলেট

কয়েক বছর আগে বাসায় হঠাৎ করেই ছাড়পোকার উপদ্রব বেড়ে গিয়েছিলো। কোন ভাবেই পুরোপুরি দমন করা যাচ্ছিলো না। শেষতক স্মরাণাপন্ন হলাম নেট দুনিয়ার। ফেসবুকে পোষ্ট দিতেই অনেকেই উত্তর দিলেন। তাদের মধ্যে পরিচিত একজন জানালেন গ্যাস ট্যাবলেটের কথা। তারা নাকি প্রতি ঈদে বাড়ীতে যাওয়ার সময় বাসার আনাচে কানাচে ছোট ছোট কাগজে এই ট্যাবলেট রেখে দরজা জানালা ভালমতো বন্ধ করে তারপর বের হয়ে যান। তারপর ঈদের ছুটি শেষে একজন নাকমুখ ঢেকে বাসায় ঢুকে জানালা দরজা সব ভালমতো খুলে দিয়ে ফ্যান চালিয়ে বাইরে চলে যান ২/৩ ঘন্টার জন্য। এর পর বাসায় এসে সব পরিস্কার করেন। ছাড়পোকা তো বটেই, বাসার সব তেলাপোকা, টিকটিকি, ইদুর সব মারা পরে এই গ্যাস ট্যাবলেটের বিষ ক্রিয়ায়। 

তার কথা শুনে নেটে খোজ খবর করলাম। এটার  নাম সোডিয়াম ফসফাইড। বাতাসের সংস্পর্শে আসলে এগুলো থেকে ফসফাইিন নামে একধরনের বিষাক্ত গ্যাস তৈরী হয়। এই বিষের কোন এন্টিডোট নাই, আক্রান্ত হলে মৃত্যু অনিবার্য়। আমেরিকায় সাধারণত ক্ষেত খামারে ইদুর নিধনের জন্য এই সোডিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করা হয়। 

আমি এসব তথ্য পেয়ে সেদিনই ঠিক করেছিলাম ছাড়পোকা থাকলে থাকবে কিন্তু ভুলেও এই জিনিস বাসায় ব্যবহার করবো না। বাসায় তখন অসুস্থ আব্বা আম্মা আর ভাগ্নীর ছোট বাচ্চা ছিলো। কোন দূর্ঘটনা ঘটলে বাকি জীবন হায় হায় করতে হবে। 

আমি যে দূর্ঘটনার ভয়ে বাসায় এই সোডিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করি নাই, সেই দূর্ঘটনাটি ঘটে গেলো অন্যত্র। ৯ আর ১৫ বছরের দুই ভাই মারা গেলো পেষ্ট কন্ট্রোল কোম্পানির অবিবেচক কর্মকান্ডে। পেষ্ট কন্ট্রোল কোম্পানির লোকজন মাত্র ২/৩ ঘন্টা পর বাসায় ঢুকতে বলেছিলো। কিন্তু পরিবারটি ৯ ঘন্টা পর বাসায় ঢুকেও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। 

প্রথমত এ ধরণের মারাত্মক বিষ বাসাবাড়ীতে ব্যবহার করার কথা না। দ্বিতীয়ত কি ধরণের বিষক্রিয়া হতে পারে সে সম্পর্কে মনে হয় না সংশ্লিষ্ট পরিবারটিকে জানানো হয় নাই। তৃতীয়ত ২/৩ ঘন্টা পরেই বিষক্রিয়া কমে যাবে এমন কথা কোথাও পেলাম না। চতুর্থত বাসায় ঢুকে আগে দরজা-জানালা খুলে, ফ্যান চালিয়ে দিয়ে গ্যাস বের করে দেয়ার কোন কথা বলেছিলো কিনা সেটাও জনা যায় নাই। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি এই ফসফাইন নামের এই গ্যাসটি কেবল বিষাক্ত কেবল তাই না, এটি দাহ্য। মানে আগুনের সংস্পর্শে আসলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে। 

বাসায় পোকামাকড়ের উৎপাত হলে যদি কোন পেষ্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিতে হয় তাহলে তাদের কাছ থেকে তারা কি কি জিনিস / কেমিক্যাল ব্যবহার করবে তার একটি লিখিত তালিকা নিবেন। তারপর নেটে সার্চ করে সেসব কেমিক্যাল বাসাবাড়িতে ব্যবহারোপযোগী কিনা, বিষাক্ততা কেমন, বাচ্চা বা পোষা প্রাণী থাকলে ব্যবহার করা যাবে কিনা এসব সম্পর্কে জেনে নিবেন। 

নেট ঘাটলে এমন অনেক পদ্ধতি পাবেন যেগুলি মানুষের জন্য মোটেও বিষাক্ত নয়। যেমন আমি ছাড়পোকা তাড়ানোর ব্যাপারে এমন একটি এসেনশিয়াল ওয়েল এর কথা জেনেছিলাম যা দিলে ছাড়পোকা টিকতে পারে না। আমি সেই এসেনশিয়াল ওয়েল (ল্যাভেন্ডার) সেসময় পাই নাই কিংবা দাম অসম্ভব বেশী ছিলো। কিন্তু সুপারশপে গিয়ে একটা এয়ার ফ্রেশনার পেয়েছিলাম যেটাতে সেই ল্যাভেন্ডার ওয়েল ছিলো। সেই এয়ার ফ্রেশনার বিছানায় ব্যবহার করে বেশ ভাল ফল পেয়েছিলাম। যদিও বছর খানেক পর আর এই জিনিস তেমন কাজ করে নাই। মনে হয় ছাড়পোকা এই ল্যাভেন্ডার ওয়েলে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো। 

সাবধানে থাকুন। নিরাপদে থাকুন।

খবরের লিংক এখানে
ছাড়পোকা নিয়ে লেখা এখানে

 

 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।