বর্বরতা

গতকাল এবং গত পরশুদিন খবরের কাগজে একটি খবর পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। সারাংশ হলো সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার এক স্কুলে শি্ক্ষকদের প্রহারে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৪ শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর এক শিক্ষক পলাতক।

বর্তমানে স্কুলে প্রহার করা নিষিদ্ধ। আমার প্রথম স্কুলে ক্লাসে দুষ্টামি করলে বা পড়া না পারলে বেঞ্চের উপর দাড়ানো, কান ধরা বা কান ধরে বা ছাড়া নিলডাউন করার মতো শাস্তি দেয়া হতো। খূব বেশী হলে পিঠে হালকা ২/১টা কিল। আর হোমওয়ার্ক না করলে ছুটির পর হোমওয়ার্ক করে দিয়ে যেতে হতো। আমি ক্লাসে কি করেছিলাম মনে নাই, আমার খাতায় ‘ক্লাসে আর দুষ্টামি করবো না’ এরকম কিছু ৫০০ বার লিখতে হয়েছিলো। পরে সেটা আবার অভিভাবকের সাক্ষর সহ শ্রেণী শিক্ষিকাকে দেখাতে হয়েছিলো। শেষ স্কুলেও সেরকম কোন শাস্তি ছিলো না। নবম / দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় একবার টিফিনের পর কোন এক কারণে আমরা প্রায় ৭/৮ জন ছেলে প্রায় মিনিট দশেক দেরী করে ক্লাসে ঢুকেছিলাম। স্যার শাস্তি সরুপ সবাইকে বারান্দায় নিলডাউন করেছিলেন। সেই স্যার অবশ্য মেয়েেরকেও রেহাই দিতেন না। বেঞ্চের উপর দাঢ় করাতে ছেলে-মেয়ে ভেদাভেদ করতেন না। 

পঞ্চম (শেষের দিকে), ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম (প্রথম দিকে) পড়েছি ময়মনসিংহের ২টি এবং ঢাকার একটি স্কুলে। এই স্কুলগুলিতে বেতের ব্যবহার ছিলো অপরিসীম। জালি বেত, সন্ধি বেত ছিলো আতংকের নাম। ময়মনসিংহের এক শিক্ষক এবং ঢাকার এক শিক্ষকের প্রিয় শাস্তি ছিলো চাবির এক মাথা কানের লতিতে চেপে ধরে গায়ের জোরে চাপ দেয়া। এখন ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। 

স্কুলে সহপাঠিদের নিয়ে জন্মদিন পালন কি খূব বড় অপরাধ ছিলো ? অপরাধ হতো যদি ক্লাসের সময় অন্য ক্লাসের ক্ষতি হতো। আমার মনে আছে দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় ক্লাসের ৪জন মেয়ের জন্দিন ছিলো একই মাসে। তারা আমাদের হাতে বানানো কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করেছিলো। সেদিন কি কারণে যেন স্কুল ছুটি ছিলো, কিন্তু আমাদের কি একটা পরীক্ষা দিতে যেতে হয়েছিলো। সব ক্লাসরুম তালা মারা। শেষে স্কুলের এক প্রান্তের এক ক্লাসরুমের গরাদহীন জানালা খোলা পাওয়া গেলো। স্কুলের গেটকিপার আর পিওনকে বলে আমরা জানালা দিয়েই সেই রুমে ঢুকেছিলাম। এরপর খাওয়া-দাওয়া, নাচ, গান, হৈ-হুল্লোর সবই হয়েছিলো। শিক্ষকরা শুনেছিলেন আমরা কি করছি, কিন্তু কিছু বলেন নাই। 

ছাত্ররা ঐ স্কুলে এমন কি অপরাধ করেছিলো যে এমন মার দিতে হলো !?! অকালে একটা ছেলে মরেই গেলো। শিক্ষক নামের এই নরপশুদের উপযুক্ত শাস্তি এখন সময়ের দাবী। 

খবরের স্ক্রিণশট : প্রথম আলো ইপেপার
ছবি : ইন্টারনেট

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।