মোবাইল বিভ্রাট

১.
বৃহস্পতিবার সকাল। বিছানায় শুয়েই মোবাইল হাতে নিলাম। মোবাইলের পিছন দিকটা কেমন যেন ঠেকলো। কালো ব্যাক কভার থাকাতে তেমন বুঝা যাচ্ছিলো না। ব্যাক কভার সরাতেই তো চক্ষু চড়ক গাছ। মোবাইলের পিছনে মাঝের অংশ বাঁকা হয়ে ফুলে আছে। এতোটাই ফুলেছে যে দুই সাইডের আঠা উঠে ভিতরের অংশ দেখা যাচ্ছে। উপর আর নিচের অংশটুকু কেবল লেগে আছে বডির সাথে। এর আগেও ইনফিনিক্স স্মার্ট ২ প্রো মোবাইলে একই সমস্যা হয়েছিলো। ব্যাটারী ফুলে যাওয়ায় সেটা আর ব্যবহার করি নাই। পরে শাউমি রেড মি নোট ৮ কিনেছিলাম। বছর ৩/৪ পরে এটাতেও একই সমস্যা হলো। 

২. 
আমি মোবাইলে পিছনের অংশটা যেটুকু আটানো ছিলো হালকা চাপে খুলে ফেলেছিলাম। ব্যাটারির উপরের অংশ বেশ নরম মনে হলো, ভিতরে কোন তরল জমা হয়ে আছে। পকেটে বা ব্যাগে রাখলে যদি আবার লিক করে তো মুশকিল। বেশ কিছু কাজ ছিলো। মোবাইল হাতে নিয়েই সারাদিন ঘুরলাম। পকেটে বা ব্যাকপ্যাকে রাখার সাহস হলো না। একবার রাজলক্ষীতে যাব মনে করলাম, পরে আবার মত পরিবর্তন করে বাসাতেই ফিরে আসলাম। 

৩.
কাজ ছিলো সেক্টর ১০ এ। সেখানকার কাজ সেরে হেটে যাচ্ছিলাম দারাজের পিকআপ পয়েন্টে। কয়েকটা পার্সেল এসে জমা হয়েছিলো। পিকআপ পযেন্টে পৌছানোর আগেই চোখ গেলো গ্যাজেট এন্ড গিয়ারে। পকেটে টাকাও ছিলো। মনে হলো ছোটখাট একটা মোবাইল তো কেনাই যায়। আমি অবশ্য কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম একটা ৮/৬ জিবি RAM আর ১২৮ জিবি ROM এর মোবাইল নেয়ার কথা। শাউমির মোবাইল ছিলো ৪ জিবি আর ৬৪ জিবির RAM / ROM এর। ইচ্ছে থাকলেও ইচ্ছেমতো এপ ইন্সষ্টল করা যায় না। রিয়েলমি সি৫৫ বেশ পছন্দ হয়েছিলো, ৮ জিবি RAM আর ২৫৬জিবি ROM এর জন্য। যদিও রিভিউ গুলোতে ক্যামেরা বা অন্যান্য ফিচার খূব উন্নত এমন কিছু বলা হয় নাই। আর আমি গেমস তেমন খেলি না, তাই এসব নিয়ে আগ্রহও কম। আর ছবি তোলার জন্য তো ডিএসএলআর আছেই।

গ্যাজেট এন্ড গিয়ার এ ঢুকে সি৫৫ এর খোঁজ করলাম। ৮/২৫৬ জিবি ভ্যারিয়েন্ট আছে, তবে কালার ব্ল্যাক আর সোনালী। আরো কিছু কথাবার্তা বলে দিতে বললাম। একজন এসে অবশ্য oppo এর একটা মডেল সাজেষ্ট করছিলেন, সেটা নাকি বেটার। তবে দামও ৩০+ হাজার। ওয়্যারলেস চার্জিং সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই জানালো সেগুলোর দাম লাখ খানেকের আশে-পাশে। 

আমার সমস্যা হলো কোন দোকানে ঢুকে কোন প্রোডাক্ট সম্পর্কে আলাপ করে বের হয়ে আসতে পারি না। পকেটে টাকা থাকলে কিনে বের হই। আর পকেটে টাকা না থাকলে আজাইরা আলাপ করার জন্য দোকানে ঢুকি না। অবশেষে রিয়েলমি সি৫৫ কিনে দারাজের পিকআপ পয়েন্টে গেলাম। 

৪.
শুক্রবার দিন সকাল থেকেই ফেসবুক আর ব্রাউজারে খোঁজ করতে থাকলাম শাউমির ব্যাটারী পাল্টাতে কতো খরচ পড়তে পারে। অথরাইজড সার্ভিস সেন্টারে থরচ ২.৫ হাজার টাকার মতো। আর সাধারণ সার্ভিস সেন্টারে হয়তো অর্ধেক। খোঁজ নিয়ে জানলাম। উত্তরায় পলওয়েল মার্কেটে অথরাইজ সার্ভিস সেন্টার। বিকাল ৫টার দিকে হাটতে হাটতে পৌছে গেলাম পলওয়েল কারনেশন সেন্টারে। এটা আবদুল্লাহপুরের কাছাকাছি। বৃষ্টির কারণে রাস্তার জায়গায় জায়গায় কাঁদা হয়ে আছে। সাথে ময়লা পানিও আছে কোন কোন অংশে। তবে বিআরটি লাইন ৩ এর কাজের জন্য নতুন ড্রেন করা হয়েছে, তার উপর স্ল্যাব বসানো। সেচার উপর দিয়ে দিব্যি হাটা যায়। 

পলওয়েল মার্কেটে এটাই আমার প্রথম আসা। ৭ তলায় উঠে ২১ নাম্বার দোকান খূঁজে বের করলাম। খোঁজার সময় দেখলাম আরো কিছু কোম্পানির অথরাইজড সার্ভিস সেন্টার আছে। সার্ভিস সেন্টারে ঢুকে দেখলাম অনেকেই ওয়েটিং এ আছে। বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে সিরিয়াল নিবো। একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই অদূরে নাখা একটা মোবাইল সেট দেখিয়ে দিলেন। বেশ সহজ, ফোন নাম্বার, নাম আর সার্ভিস না ডেলিভারী ইনপুট দিলেই সিরিয়াল নাম্বার পাওয়া যায়। আমার সিরিয়াল ৫৯, আগে আরো ৫/৬  জন আছে। 

আমার সিরিয়াল আসলে গিয়ে জানালাম সমস্যার কথা। মহিলা জানতে চাইলেন মোবাইল এর ক্যাশমেমো আছে কিনা। না বলতেই আইডি কার্ড চাইলেন। সেটা দিলাম। নাম, আইডি নাম্বার, বাসার ঠিকানা, ফোন নাম্বার, ইমেইল এড্রেস দিতে হলো। এরপর জানালেন আমার খরচ পড়বে ২৩২৫ টাকা, ব্যাটারির দাম + সার্ভিস চার্জ। ডেলিভারী দিবে ১ ঘন্টা পর, মানে প্রায় ৮টার দিকে। আমি জানালাম পরের দিন নিবো। কারণ রাতে রাস্তা পার হওয়া সমস্যাই বটে। এই রোডে বাস/ট্রাক চলতেছে, কাছাকাছি কোন ফুট ওভার ব্রিজও নাই। মহিলা সব কাগজপত্র ঠিক করে এডভান্স চাইলেন, ২০০০ টাকা এডভান্স দিলাম। অতঃপর বাসার দিকে রওনা দিলাম। রাস্তা পার হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। অদূরেই আবদুল্লাহপুর বাস ষ্ট্যান্ড বলে বাস গুলো থামতেছে। আমিও ধীরে সুস্থ্যে রাস্তা পার হলাম। তবে খেয়াল করলাম ষ্ট্রিট লাইট তেমন নাই বলে কেবল গাড়ীর হেড লাইট চোখে পড়ে, গাড়ী আর দেখি না।

৫.
এখন অপেক্ষায় আছি আগামীকাল মোবাইল ফেরত নেয়ার। রিয়েলমি সি৫৫ এর 8/256 GB RAM / ROM বেশ কাজে দিচ্ছে। বিশাল ষ্টোরেজ স্পেস। আমি আবার ROM থেকে ৮ জিবি নিয়ে মোট ১৬ জিবি RAM ব্যবহার করছি। এটা বেশ ইন্টারেষ্টিং ফিচার। আগে ডেস্কটপ পিসিতে উইন্ডোজে এরকম করা যেতো। প্রচুর এপ ইন্সষ্টল করার পরও মাত্র ৪৪ জিবি ইউজ হয়েছে, খালি আছে ২০০ জিবিরও বেশী। এখনও কোন মেমরি কার্ড ইউজ করছি না, তবে ইচ্ছে আছে ২৫৬ জিবির একটা কার্ড নেয়ার। 

ক্যামেরা খারাপ না। তবে ঘটনা হলো এই সেটে কোন EIS নাই, ফলে সেট হাতে নিয়ে ভিডিও করতে গেলে কেঁপে যায়। শাউমির সেটে এই EIS যথেষ্ঠ কাজ দেয়। হালকা-পাতলা কাঁপাকাঁপি সহজেই ওভারকাম করে। 

আপাতত এই পর্যন্তই। ভাল থাকুন নিরন্তর।

Photo by Omid Armin on Unsplash

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।