স্মার্ট জীবন

গত কিছুদিন থেকে নিজের ওজন নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ করছি। ওজন এমনিতেই বেশী, তারপর আছে ডায়বেটিসের হাতছানি। বছর খানেক আগে একবার শুরু করেছিলাম। ওজন ৮৯ কেজি থেকে নেমে ৮১ কেজি হয়েছিলো। এরপর অনেক চেষ্টা করেও আর কমাতে পারি নি। ফলাফল – উৎসাহে ভাটা পরেছিল। ডেঙ্গুর সিজনে জ্বর এবং অন্যান্য কিছু প্রব এর কারণে মনে হয়েছিলো ডেঙ্গু হয়েছে। পরে জানা গেলো ডেঙ্গু না। কয়েকদিন আগে আবার শরীর খারাপ হওয়ায় ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। উনি ব্লাড সুগার চেক করতে বললেন। দেখা গেলো রক্তে শর্করার মাত্রা কিঞ্চিত বেশী। ওজন মাপালাম, সেটাও দেখা গেল বেড়ে ৮৫ কেজি হয়েছে।

আবার জোরেশোরে হাটা আরম্ভ করলাম। তবে এবার ঠিক করলাম এই নিয়মিত হাটা বা ফিজিক্যাল এক্সারসাইজের জন্য নিয়মিত একটা রেকর্ড থাকা দরকার। আর এজন্য দরকার একটা স্মার্ট ডিভাইস, যা অটো রেকর্ড করবে আমার সমস্ত কার্যক্রম। প্রথমে প্রিয়শপ থেকে ইনফিনিক্স এক্স ব্যান্ড ৩ কিনলাম। শিপিং সহ খরচ পরেছিলো ১৪৯০ টাকা। স্মার্ট ব্যান্ড হিসেবে এটি বেশ ভালই বলবো। ষ্টেপস, হার্ট রেট, ব্লাড প্রেশার সবই মোটামুটি ঠিকঠাক মতোই মাপতে পারে। যেমন আমার ব্লাড প্রেশার নরমালি ১২০/৮০  থাকে। এই এক্স ব্যান্ড ৩ দিয়ে প্রেশার মাপলে এই রেঞ্জেই থাকে, বড়জোর ২/৩ দাগ এদিক সেদিক হয়। প্রথম দিকে অবশ্য মনে হচ্ছিলো ষ্টেপস বেশী কাউন্ট করে। পরে পা মেপে মেপে দেখা গেলো ঠিকই আছে।

তবে এই ইনফিনিক্স এক্স ব্যান্ড ৩ এর যে এপ আছে ‘ইনফিনিক্স লাইফ’ সেটি একেবারেই যাচ্ছে তাই। ব্যান্ড থেকে স্মার্ট ফোনে ঠিকমতোই ডাটা নিয়ে আসে, কিন্তু দিন, সপ্তাহ বা মাসের কোন রেকর্ড থাকে না। মানে আপনি আগের দিন কত ষ্টেপস হেটেছেন বা পুরো সপ্তাহ বা মাসে কতটুকু হেটেছেন তার কোন হিসাব পাবেন না। দিনের হিসাব দিনেই শেষ। হার্ট রেট / ব্লাড প্রেশার অবশ্য শেষ ৭টি রিডিং পাওয়া যায়। আরেকটি বড় সমস্যা হলো এই ডাটা গুগল ফিট এপ এ আনা যায় না। আনা গেলে হয়তো ইনফিনিক্স লাইফ এর যে সমস্যা তা এড়ানো যেতো।

যাই হোক। শেষ পর্যন্ত শাউমির মি ব্যান্ড ৪ কিনলাম। এটি বেশ ভাল ফিটনেস ব্যান্ড এবং এর এপ মি ফিট বেশ আপটুডেট। মানে দিন, সপ্তাহ, মাস হিসেবে সব ডাটা পাওয়া যায়। আবার গুগল ফিট এর সাথে কানেক্ট করাও যায়। কেবল ষ্টেপস না, এটি অন্যান্য শারীরিক কসরতও রেকর্ড করবে, যেমন – জগিং, সাঁতার ইত্যাদি। আপনার মোবাইলে জিপিএস থাকলে আপনি কোন পথে দৌড়াচ্ছেন বা হাটছেন সেটিও ম্যাপে রেকর্ড করে রাখবে।

এই মি ফিট ব্যবহার করতে গিয়ে জানলাম আরো কিছু ডিভাইস আছে যেগুলো এই মি ফিট এর সাথে কানেক্ট করে ডাটা কালেক্ট করা যায়। প্রথমেই তো গেলো ফিটনেস ব্যান্ড। এরপর আসে স্মার্ট ওয়াচ, Amazfit এর কয়েকটি মডেল এই মি ফিট এপ এর সাথে কাজ করতে পারে। এপর আসে স্মার্ট স্কেল কথা। এনালগ স্কেল এর পর ডিজিটাল স্কেল ব্যবহার করেছি। ওজনের রিডিং ডিজিটালি দেখা যায়। এই স্মার্ট স্কেল নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানলাম এই স্কেলগুলোর জন্য আলাদা এপ থাকে এবং সেটি ওজন রেকর্ড করে রাখতে পারে। শাউমি’র বেশ কয়েকটি মডেল আছে। ঢাকাতেও পাওয়া যায়। তবে অনলাইনে আমি যখন খোঁজ করছিলাম দারাজ মলে তখন এটি ছিলো না। আমি পরে FitIndex নামে একটি স্মার্ট স্কেল অর্ডার করি। এটি মি ফিট এর সাথে কানেক্ট না করলেও গুগল ফিট এর সাথে এর নিজস্ব এপটি কানেক্ট করে। ফিটইনডেক্স নামের এপটি কেবল ওজন না, এর সাথে আরো কিছু ডাটাও আপনাকে দিবে, যেমন বডি ফ্যাট। যদিও এসব ডাটা ১০০% সঠিক না, তবে বিভিন্ন রিভিউ বলছে আপনি মোটামুটি একটি ধারণা পেতে পারেন।

মি ফিট এর সাথে কানেক্ট করা যায় এরকম আরেকটি ডিভাইস হলো শাউমি’র স্নিকার মানে জুতা। এর ইনসোলের ভিতর ছোট একটি চিপ থাকে যা আপনার হাঁটা / দৌড়ানো সবই রেকর্ড করবে। এই চিপটি অবশ্য আলাদা করেও কিনতে পারবেন। আলি এক্সপ্রেসে দাম দেখলাম ১১/১২ ডলার আর শুধূ স্নিকারের দাম ৫৫-৬০ ডলার। তবে এই চিপটি কিনে সাধারণ জুতার মধ্যে রাখলে কতটুটু কাজ করবে সেটি ভাবনার বিষয়।

আপাতত এই শাউমি মি স্মার্ট ব্যান্ড ৪ এবং ফিটইনডেক্স স্মার্ট স্কেল নিয়ে জীবনযাপন স্মার্ট করার চেষ্টায় আছি। ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিনই কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাটছি। কোন কারণে বাইরে বের হতে না পারলে ঘরের মধ্যে হাটছি। আমার বয়স, উচ্চতা এবং ওজন অনুপাতে প্রতিদিন ৮০০০ ষ্টেপস হাটতে হবে। প্রথম কয়েকদিন দেখা গেলো ৬/৭ হাজার ষ্টেপস হয়, তার মধ্যে ২/৩ হাজার ষ্টেপস ঘরের মধ্যেই। মানে এ ঘর থেকে ও ঘর, বাথরুমে যাওয়া, খেতে যাওয়া, কেউ আসলে দরজা খুলতে যাওয়া – এসব যাওয়া আসাতেই ২/৩ হাজার ষ্টেপস হয়ে যায়। বাইরে গিয়ে আধ ঘন্টায় একটা চক্কর দিলে মোটামুটি আরো ৩০০০ ষ্টেপস। পার্কে ১০ চক্কর দিলে ৪-৫ হাজার ষ্টেপস হয়ে যায়। অন্য কোন কাজে বের হলে দেখা যায় সেই দিন হাজার দশেক ষ্টেপস এমনিতেই হয়ে গেছে। কোন কারণে কোনদিন বাইরে বের হতে না পারলে ঘরের মধ্যেই আধ ঘন্টা জোরে জোরে হাটি। তাতে মোটামুটি ৩০০০ ষ্টেপস হয়ে যায়। সাথে সারাদিনের ষ্টেপস যোগ হয়ে মোটামুটি ৬+ হাজার ষ্টেপস। তাই ডেইলি টার্গেট কমিয়ে ৫০০০ ষ্টেপস করে দিয়েছি। এটি পূরণ হলেই ব্যান্ড ভাইব্রেট করে জানান দেয়, মনটা ভাল হয়ে যায়।

তবে যারা একটু বেশী রকমের খূঁতখূঁতে স্বভাবের, একটুতেই টেনশন করেন তাদের মনে হয় এইসব ডিজিটাল বা স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করা উচিত হবে না। অনেক বছর আগে আব্বা যখন হাটাচলা করতে পারতো, আব্বা’কে একবার এক কাজিন ডিজিটাল ব্লাডপ্রেশার মেশিন উপহার দিয়েছিলো। দেখা গেলো আব্বা পারলে মিনিটে মিনিটে তার বিপি চেক করেন। সবচেয়ে খারাপ ছিলো সে বাইরে থেকে হেটে এসেই বিপি চেক করতো। ফলাফল তার প্রেশার এমনিই বেড়ে যেতো। পরে সেই মেশিন তার কাছে থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিলো। এখন আমি মাঝে মধ্যে তার ব্লাড প্রেশার চেক করি, কিন্তু ফলাফল জানাই না।

শেষ করি স্মার্ট স্কেল নিয়ে একটা মজার অভিজ্ঞতা দিয়ে। আমি গুগল ফিট ব্যবহার শুরু করেছিলাম গত ১৬ই অক্টোবর ২০১৯ থেকে। সেদিন বিকালেই ডাক্তারের চেম্বারে ওজন মেপেছিলাম – ৮৫ কেজি। এর মধ্যে ফিটনেস ব্যান্ড যুক্ত হয়েছে। হাটাচলা আর খাওয়াদাওয়া কনট্রোলের পর গতকাল যোগ হলো স্মার্ট স্কেল। সন্ধ্যায় ওজন মাপলাম -৮৩.৩৫ কেজি। মানে ১৯ দিনে ১.৬৫ কেজি ওজন কমেছে। রাত্রে ডিনার ছিলো বিরিয়ানি, একটু কিন্তু কিন্তু করেই খেলাম। সকালে উঠে ওজন মাপলাম – ৮৩.৭৫ কেজি। মানে রাতারাতি আমার ওজন ৪০০ গ্রাম বেড়ে গেছে। বুঝতে পারলাম খাওয়া দাওয়া ব্যাপক কন্ট্রোল করতে হবে। বেশ কয়েকবছর আগে থেকেই কোল্ড ড্রিংক্স আর চায়ে চিনি খাওয়া বন্ধ করেছিলাম। চকলেট আর মিষ্টি খাওয়াও বন্ধ করেছি কয়েকদিন হলো। আমার ওজন কমানোর টার্গেট হলো ৭০ কেজি আপাতত। তারমানে এই ওজন এ না আসা পর্যন্ত বিরিয়ানি, জাঙ্ক ফুড সহ আরো অনেক কিছুই বর্জন করতে হবে।

আজ এপর্যন্তই। ভাল থাকবেন।

 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।