গরীব এবং মধ্যবিত্তের জন্য বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা খূব একটা সহজলভ্য না। সহজলভ্য এই অর্থে যে টাকা না থাকলে চিকিৎসাও নাই। সরকারী হাসপাতালগুলিতে হয়তো ১০ টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখানো যায়, কিন্তু এরপর !?! ঔষধ, পথ্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হয়। আর সরকারী হাসপাতালগুলিতে সব সূবিধাই সীমিত। ফলে অনেকেই বিনা চিকিৎসায় বা অপচিকিৎসায় দিনের পর দিন কাটান। ফলে সামান্য রোগও হয়তো এক সময় বিশালাকার ধারণ করে।
গত কয়েক বছরের মধ্যে দু’জন আত্মীয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দু’জনেই আবার হোমিওপ্যাথির দারুণ ভক্ত ছিলেন। শুরুতে তারা চিকিৎসার জন্য হোমিওপ্যাথির দ্বারস্থ হন। কিন্তু একসময় রোগের উপসর্গ এবং কষ্ট বাড়তে থাকলে ঠিকই এলোপ্যাথিক ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন। সার্জারির পর একজন প্রায় ৩ বছর ভালই ছিলেন, কিন্তু এরপর আবার অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে থাকে। অন্যজন চিকিৎসার জন্য ভারত গিয়েছিলেন, কিন্তু তার অবস্থা বেশ জটিল ছিলো। ফলে ভারতের ডাক্তারও তার সার্জারী করতে রাজী হননি। দেশে এসে কেমোথেরাপি দিয়ে কেবল ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। আর তেমন কিছুই করার ছিলো না।
দু’জনেই ছিলেন একই পরিবারের, খালা-ভাগ্নে সম্পর্ক। এই পরিবারের হোমিওপ্যাথি প্রীতি অসাধারণ। আরেকজন এর ছিলো গলব্লাডার ষ্টোন। ভাগ্নে’কে দেখতে গিয়ে হাসপাতালে তার সাথেও আমার দেখা হয়েছিলো। ষ্টোনের কথা শুনে সরাসরি বললাম সার্জারি করে ফেলে দিতে। উদাহরণ হিসেবে আব্বা-আম্মার কথা বললাম। তিনি হাসতে হাসতেই বললেন হোমিওপ্যাথি করছেন, অতো নাকি পয়সা নেই। আমিও হাসতে হাসতেই বললাম এখন বলতেছেন পয়সা নাই, কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখলে ঠিকই সার্জারি করাবেন আর তখন হয়তো কয়েকগুণ বেশী টাকা লাগতে পারে।
কয়েক মাসের মধ্যেই কথা ফললো॥ আমার বোন তাকে দেখে এসে জানালো দেখতে একেবারে লিকলিকে হয়ে গেছেন, সেই সাথে কেমন যেন ফ্যাকাসে। সার্জারির পর এখন আপাতত ভালই আছেন।
কিছুদিন আগে কোন এক জটিলতায় তারই ছোট মেয়ের বাচ্চা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। সেসময় ডাক্তার জানিয়েছিলেন তার ছোট একটি টিউমার আছে। তার পরামর্শ ছিলো যত দ্রুত সম্ভব যেন সার্জারি করা হয়। সেও নাকি হোমিওপ্যাথি করছিলো, সাথে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো। এর মধ্যে অবস্থা খারাপ হলে কয়েকদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । সার্জারি ভালমতোই হয়েছে, তবে ডাক্তার নাকি বেশ রাগ করেছিলেন এই অহেতুক সময় ক্ষেপনের জন্য। এখন সেই মেয়েকে আগামী ছয় মাস একটি বিশেষ ইনজেকশন দিতে হবে যার প্রতিটির মূল্য ১৩/১৪ হাজার টাকা করে।
আমি সব সময়ই দেখেছি চিকিৎসায় টাকা বাঁচাতে গেলে হিতে বিপরীত হয়। কারো একেবারেই চিকিৎসা করানোর সামর্থ না থাকলে সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু মোটামুটি কষ্ট করে হলেও চিকিৎসা করাতে পারবেন এমন ক্ষেত্রে টাকা সাশ্রয় করতে গিয়ে হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি এসব করতে যাওয়া ঠিক না। আপনার সাধারণ জ্বর হয়েছে, ঠান্ডা লেগেছে, মুখে ব্রণ দেখা যাচ্ছে – আপনি হোমিওপ্যাথি করেন সেটা মানা যায়। কিন্তু আপনার ক্যান্সার হয়েছে অথবা সার্জারি করতে হবে এমন কিছু, আপনি হোমিওপ্যাথি করার মতো বোকামি কেন করবেন।
আমার আশে-পাশে অনেকেরই দেখি এই মানসিকতা। মাঝে মধ্যে চিন্তা করি আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে হয়তো এই মানসিকতা গড়ে উঠেছে। খূব সহজেই হয়তো এর থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে না।
ভাল থাকুন ! সুস্থ থাকুন !!
ফেসবুক মন্তব্য