অনেকেই এই রেডিও দু’টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বিশেষ করে রেডিও দু’টির ভাল-মন্দ তুলনা করতে বলেছেন। চেষ্টা করছি যতোটা সম্ভব গুছিয়ে লেখার।
প্রথমেই বলি এর দামের কথা। পিএল-৩৩০ এর দাম মোটামুটি ৬ হাজার টাকার মতো আর পিএল-৯৯০ এর দাম ২৪ হাজার টাকর মতো। মানে ৪ গুণ বেশী।
এখন প্রশ্ন হলো পিএল-৯৯০ কিনলে কি রিসেপশন ৪ গুণ ভাল হয়ে যাবে ? পিএল-৩৩০ রেডিও’তে কোন মতে শোনা যায় এরকম দূর্বল ষ্টেশন কি পিএল-৯৯০ তে দারুণ ভাবে শুনতে পারবো ? সোজা উত্তর হলো “না”।
রেডিও রিসেপশন অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। রেডিও সেটের সেনসিটিভিটি আর সিলেক্টিভিটি অবশ্যই একট বড় বিষয়। কিন্তু এর বাইরে সেট কোথায় রাখা আছে এবং আশে-পাশে বিল্ডিং ইত্যাদি কেমন আছে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। যেমন আমার রুম বিল্ডিং এর একদম পিছন দিকে। এর পরেই কয়েক ফিট দূরত্বে আরেকটি বিল্ডিং। আমার বিল্ডিং এর ৩ দিকে আরো ৩/৪টি ৬ তলা বিল্ডিং। কেবল বিল্ডিং সামনে ২০/৩০ ফিট রাস্তা। আর আমার রুম হচ্ছে দোতালায়। নরমালি আমার রুমে শর্টওয়েভ এবং এফএম রিসেপশন মোটেও ভাল না। টেলিস্কোপিক এন্টেনা দিয়ে এফএম প্রায় কিছুই ধরা পরে না। হাতে গোনা কয়েকটি ষ্টেশন পাই। শর্টওয়েভ কিছু শোনা গেলেও ব্যাপক ফেডিং হয়। একমাত্র মিডিয়াম ওয়েভ মোটামুটি ভাল পাই।
রেডিও রিসেপশনের ক্ষেত্রে এন্টেনা একটি অতি গুরুত্বপূ্র্ণ বিষয়। ২০/৩০ গজ লম্বা তার (লং ওয়্যার এন্টেনা) আপনার রিসেপশনকে অনেক ভাল করতে পারবে। সেই সাথে সেটি যদি উচুতে রাখতে পারেন। আমি প্রায় ৩০ গজ তার ৪ তলার ছাদের উপর টানিয়ে দোতালায় আমার রুম পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। এটিই এখন আমার শর্টওয়েভ এন্টেনা। তবে এটা দিয়ে এফএম রিসেপশন কিছুটা ভাল হলেও আশানুরুপ না।
পিএল-৩৩০ এবং পিএল-৯৯০ এর রিসেপশন যদি তুলনা করি তাহলে বলবো উনিশ-বিশ। পিএল-৯৯০ তে কিছুটা ভাল পাবেন। সেই সাথে অপেক্ষাকৃত বড় স্পিকার এর কারণে বেশ পরিস্কার শোনা যায়। আর ইয়ারফোন দিয়ে এফএম বা মিডিয়া প্লেয়ার এর ষ্টেরিও সাউন্ড এক কথায় অসাধারণ বলবো।
তাহলে পিএল-৩৩০ এর ৪গুণ দাম দিয়ে পিএল-৯৯০ কেনার কোন দরকার আছে কি ? আমি প্রথমত রলবো নাই। তবে এর কিছু এক্সট্রা ফিচার আছে সেগুলো হয়তো অনেকেরই কাজে লাগতে পারে। আপনার যদি অলস কিছু টাকা থাকে এবং কোন রেডিও না থাকে তবে পিএল-৯৯০ কিনতে পারেন। আর বাজেট যদি ৬/৭ হাজার টাকাই হয় তাহলে পিএল-৩৩০ হচ্ছে এই দামে বর্তমানে সবচেয়ে ভাল রেডিও।
এক্সট্রা ফিচার ১ : ইন্টারনাল / এক্সট্রার্নাল এন্টেনা সুইচ এবং এনস্টেনা গেইন সুইচ
প্রথম সুইচটি আপানকে শর্টওয়েভ এবং এফএম ব্যান্ডের জন্য টেলিস্কোপিক এন্টেনা থেকে এক্সটার্নাল এন্টেনা বা ভাইস ভার্সা চুজ করতে দিবে। পিএল-৩৩০ তে এক্সটার্নাল এন্টেনা পোর্টে ৩.৫ মিমি জ্যাক ঢুকালেই টেলিস্কোপিক এন্টেনার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জ্যাক বের করে নিলে টেলিস্কোপিক এন্টেনা আবার কার্যক্ষম হয়।
এন্টেনা গেইন সুইচ মূলত এন্টেনার সাথে সংযুক্ত প্রি-এম্প এর কার্যকারিতা বাড়ায় কমায়। ভাল দিক হলো অনেক সময়ই শর্টওয়েভে দূর্বল ষ্টেশন কিছুটা ভালভাবে শোনা যায়। খারাপ দিক হলো মিডিয়াম ওয়েভে শক্তিশালী ষ্টেশন অনেকগুলি ফ্রিকোয়েন্সীতে শুনতে পারবেন, যাদের অস্তিত্ব আসলে নাই। পিএল-৩৩০ তে এন্টেনা গেইন খূব সম্ভবত অটো এবং সেটা পিএল-৯৯০ এর ডিএক্স এবং নরমালের মাঝামাঝি কিছু একটা। শক্তিশালি মিডিয়াম ওয়েভ ষ্টেশন অন্য ফ্রিকোয়েন্সীতে শোনা যায়, তবে সেটা পিএল -৯৯০ এর মতো খূব বেশী সংখ্যায় না। এখানে বলে রাখা ভাল পিএল-৯৯০ তে এন্টেনা গেইন ডিএক্স পজিশনে নিলেই কেবল এই সমস্যাটি প্রকট হয়।
আমি অফিসিয়াল শর্টওয়েভ চ্যানেলের গিলেসকে লাইভ প্রোগ্রামে এই সমস্যাটির কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে জানালো তার সব কয়টি পোর্টেবল রেডিও’তে এই সমস্যা আছে।
এক্সট্রা ফিচার ২ : টিউনিং এবং ফাইন টিউনিং
ডিজিটাল রেডিও’তে সাধারণত আলাদা করে ফাইন টিউনিং নব থাকে না। কারণ শর্টওয়েভ এবং মিডিয়াম ওয়েভে ১ কিলোহার্টজ করে ফ্রিকোয়েন্সী কমানো-বাড়ানো যায়। পিএল-৩৩০ রেডিও’তে টিউনিং নব একটাই। মিডিয়াম ওয়েভে ৯ কিলোহার্টজ আর শর্টওয়েভে ৫ কিলোহার্টজ ষ্টেপে সাধারণত টিউনিং করা যায়। অন-অফ সুইচের ঠিক নিচেই একটা ষ্টেপ সুইচ আছে যা দিয়ে ষ্টেপ ১ কিলোহার্টজ করে নেয়া যায়। পিএল-৯৯০ তে টিউনিং নব দিয়ে ৯ এবং ৫কিলোহার্টজ ষ্টেপ এ ফ্রিকোয়েন্সী কমানো বাড়ানো যায় আর ফাইন টিউন নব দিয়ে ১ কিলোহার্টজ করে।
এক্সট্রা ফিচার ৩ : অডিও আউটপুট পোর্ট
রেকর্ডিং এর জন্য আলাদা একটি অডিও আউটপুট পোর্ট আছে পিএল-৯৯০ রেডিও’তে।
মিডিয়া প্লেয়ার : পিএল-৯৯০ রেডিওর নিচের অংশে এসডি কার্ড স্লট আছে। রেডিও’র সাথেই সানডিস্কের ১৬ জিবির একটা কার্ড দেয়া হয়েছে কিছু গান আর ইনষ্ট্রুমেন্টাল মিউজিক সহ। যারা এই রেডিও’র রিভিউ দিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই বলেছেন মিডিয়া প্লেয়ার দিয়ে রেকর্ডিং ফ্যাসিলিটি না রাখা একদমই ঠিক হয় নাই। আমারও একই কথা।
মেমোরি : পিএল-৯৯০ রেডিও’তে ২৫টি পেজে মোট ৩১৫০টি ফ্রিকোয়েন্সী মেমোরিতে রাখা যায়। তবে পিএল-৩৩০ রেডিও’তে যে ETM+ সার্চ এবং ষ্টোর করার জন্য, আমি বলবো সেটি এক কথায় অসাধারণ। ধরুন আপনি সকাল ১০টায় ETM+ দিয়ে সার্চ করে ফ্রিকোয়েন্সীগুলো ষ্টোর করলেন। সেগুলো দেখা যাবে P10 এ ষ্টোর হয়েছে।আবার রাত ১০টায় করলে সেটি ষ্টোর হবে P22 এ। এভাবে আপনি প্রতি ঘন্টার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে ফ্রিকোয়েন্সী ষ্টোর করতে পারবেন আর সেই ঘন্টার একটিভ ফ্রিকোয়েন্সী সহজেই পেয়ে যাবেন। এই ETM+ সিষ্টেম পিএল-৯৯০ রেডিও’তে থাকলে খূবই ভাল হতো।
আপাতত আজ এপর্যন্তই। আরো কিছুদিন ব্যবহার করলে হয়তো আরো কিছু সূবিধা অসূবিধা বের করতে পারবো।
ফেসবুক মন্তব্য