আজকাল তো বাসায় বাসায় ফ্রিজ, ডিপ ফ্রিজ কতো কিছু, কোরবানির মাংস সংরক্ষনে কোন সমস্যাই নেই। আর তাই ঈদ এলেই শুরু হয় এসব ফ্রিজ বা ডিপ ফ্রিজ কেনার ধূম। যার একটা আছে সে চেষ্টা করে ছোট হলেও একটা ডিপ ফ্রিজ কিনতে। কিন্তু আগের দিনে মানুষ তা’হলে কিভাবে কোরবানির মাংস সংরক্ষন করতো ? আমাদের বাসায় ফ্রিজ আছে সেই ১৯৭০ সাল থেকে, কিন্তু সে সময়ের ফ্রিজে যে ডিপ ফ্রিজটা ছিল সেটা এতোই ছোট ছিল যে সেখানে ৩/৪ কেজির বেশী মাংস রাখা যেত না। আম্মাকে দেখতাম বড় বড় পাতিলে মাংস রান্না করে সেগুলো প্রতিদিন জ্বাল দিতেন। জ্বাল দিতে দিতে সেগুলো এমন ঝুরা ঝুরা হয়ে যেতো যে আস্ত মাংসের টুকরা আর খূজে পাওয়া যেত না। আটার রুটি দিয়ে সেটা খাওয়ার মজাই ছিল আলাদা।
পুরান ঢাকার অধিবাসীরা ফ্রিজহীন আমল থেকে এক বিশেষ কায়দায় মাংস রান্না করে তা সংরক্ষন করে। এটা ঢাকাইয়া কোরমা নামে পরিচিত। সংরক্ষনের জন্য না হলেও ভোজনরসিক ঢাকাইয়ারা রান্নার এই পদ্ধতিটি ধরে রেখেছেন আজো। প্রথমে মাংস লবন, আদা, রসুন দিয়ে দিয়ে জ্বাল দেয়া হয়। জ্বাল দিতে দিতে একসময় পানিটা শুকিয়ে ফেলা হয়। তিনদিন পর এটাকে আবার ঘি, তেজপাতা, আদা, রসুন ইত্যাদি সহ আবার জ্বাল দেয়া হয়। তবে এবার জ্বাল দেয়ার সময় গরুর পেট থেকে পাওয়া চর্বি টুকরা টুকরা করে এতে দেয়া হয়। এই চর্বি গলে গেলে মাংসটা সেই তেলের মধ্যে ডুবন্ত অবস্থায় থাকে। আর এটাই এই মাংস সংরক্ষনের মূল কথা। প্রথমবার জ্বাল দেয়ার সময় পানিটা ঝরিয়ে বা শুকিয়ে ফেলতে হয়। আর তেলের মধ্যে পানি বিহীন এই মাংস থাকে অনেকদিন, ঠিকমতো করতে পারলে একবছর পর্যন্তও এই মাংস ঠিক থাকে। মাঝে মধ্যে কেবল একটু জ্বাল দিতে হয়। যারা কোরবানি দেন না তারা এই চর্বি পাবেন কোথা থেকে ? সেক্ষেত্রে অনেকেই বর্তমানে সয়াবিন তেল ব্যবহার করেন। মোদ্দা কথা এটা ডুবু তেলে থাকলেই অনেকদিন থাকবে।
এইরকম আরেকটি খাবার হলো জাহাজী কালিয়া। তবে সেখানে জয়তুনের তেল ব্যবহার করা হয়।
[উপরের লেখাটি লিখেছিলাম কোন এক কোরবানির ঈদের আগে বিবিসি বাংলা সার্ভিস থেকে শুনে। পরবর্তীতে জানতে পারি মূল লেখাটি ছিলো প্রথম আলো’র সাংবাদিক (প্রাক্তন) আজাহার হোসেন এর]
ফেসবুক মন্তব্য