নওয়াব প্যালেস

আমার এবারের গন্তব্য ছিলো ধনবাড়ীর নওয়াব প্যালেস। সাধারণ মানুষ এটিকে রাজবাড়ি অথবা জমিদার বাড়ী বলে।

আমি ধনবাড়ী গিয়েছি মধূপুর থেকে সিএনজি অটোরিক্সায়। ভাড়া নিয়েছিলো ৩০ টাকা। সিএনজিতে ৫ জন যাত্রী উঠতে পারে। এই ৫ জন পূর্ণ হওয়ার জন্য আমাকে প্রায় ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়েছিলো।

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী সদরে এই নওয়াব প্যালেসটি অবস্থিত। সৈয়দ নওয়াব আলি চৌধূরী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্রিটিশ ভারতের মন্ত্রী সভার প্রথম মুসলিম সদস্য। এই পরিবারের আবাসস্থল এই নওয়াব প্যালেস।

সামনের এই ভবনটি প্রশাসনিক কাজ এবং দর্শনার্থীদের সাক্ষাত দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। এখানে একটি দরবার হল আছে।

বিশাল টানা বারান্দার পাশে সারি সারি দরজা। কিন্তু সবই বন্ধ। আগত দর্শকবৃন্দের দেখার তেমন কিছু নাই। দেয়ালে অবশ্য বিবর্ণ প্রায় কিছু ফটোগ্রাফ আছে।

ভবনের মাঝামাঝি জায়গায় ছাদে উঠার সিড়ি। তবে ছাদে উঠা যায় না, তালাবদ্ধ থাকে সবসময়।

এবার অন্দর মহল। এটি ছিলো তাদের বসবাসের জন্য। গেটে নাম লেখা নওয়াব মঞ্জিল। পাশের এই দেয়াল ঘেরা অংশে মসজিদ অবস্থিত। মসজিদে প্রবেশের জন্যও এখানে একটি গেট আছে, তবে তালাবদ্ধ থাকে সবসময়।

এই হলো নওয়াব মঞ্জিল। বাইরে থেকে দেখে বুঝার উপায় নাই যে ভিতরে কি আছে। সবই তালাবদ্ধ। দর্শকদের কেবল বাইরে থেকে ভবনটি দেখতে হবে।

এবার আমরা দেখবো নওয়াব প্যালেসের ৩য় অংশ। ঢোকার মুখেই বড় একটি তোরণ। দুপাশে দুটি ঘর। একটি ঘরে বর্তমানে ছোট একটি অফিস আছে।

এই অংশেও সুদৃশ্য একটি দোচালা ঘর আছে। তবে এটিও তালাবদ্ধ। আশে-পাশে আরো কিছু ঘর আছে। এগুলো কর্মচারীদের থাকার জন্য। পুরাতন কিছু ঘর প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।

এই অংশে বড় বড় গাছ আছে কিছু। ফলে ছায়া ঘেরা। এই অংশে দেখবেন জোড়ায় জোড়ায় রোমিও জুলিয়েটরা বসে আছে। এটি তাদের প্রিয় একটি জায়গা। আমি গিয়েছিলাম ছুটির দিনে, তাই সংখ্যায় কম ছিলো।

এবার দেখবো এই নওয়াব প্যালেসের চমৎকার দীঘি। এতো বড় দীঘি এখন খূব কমই দেখা যায়। শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে বসলে মৃদুমন্দ বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

মসজিদের পূর্বদিকে এই দীঘির অংশ বিশেষ পাবেন। পূর্বদিকের তোরণের ছাদ থেকে এই দীঘির চমৎকার একট ভিউ পাওয়া যায়।

এবার ফেরার পালা। সৈয়দ নওয়াব আলি চৌধূরীর পরিবার তাদের এই বিশাল এষ্টেট চমৎকার ভাবেই সংরক্ষণ করেছেন বলা চলে। তবে এই নওয়াব প্যালেস দেখে আমি কিছুটা হতাশ। কারণ বাইরে থেকে কিছু ভবন দেখা ছাড়া আর কিছু দেখার নাই। তারা যদি কিছু ঘর দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে রাখতেন তাহলে খূব ভাল হতো। কেবল ভবন দেখার জন্য ১০০ টাকা টিকেট একটু বেশী মন হয়েছে। আর তাদের ওয়াশ রুমের কথা কি আর বলবো। জীবনে অনেক নোংরা ওয়াশরুমে যাওয়ার দূর্ভাগ্য হয়েছে। তবে নওয়াব প্যালেসের ওয়াশরুম এক কথায় জঘণ্যতম।

তবে ধনবাড়ীতে আসলে অবশ্যই নওয়াব শাহী জামে মসজিদ ঘুরে দেখবেন। আপনার চোখ আর মন দুই ই জুড়িয়ে যাবে।

https://youtu.be/r1RGqUY_XDs

 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।