নয়-ছয় কারবার

স্নাতক পর্যায়ে অর্থনীতি নামে একটি বিষয় ছিলো বটে, তবে তাতে কোনদিনই ভাল কিছু করতে পারি নাই। বাস্তব জীবনেও যে অর্থনীতি ভাল বুঝি তাও কিন্তু না। জমা-খরচের হিসাব কোনদিনই ঠিক সুচারু ভাবে সমন্বয় করে চলতে পারি নাই। জমা খরচের হিসাব তাই কোনদিনই মিলে নাই।

তারপরও আজ এই অর্থনীতি নিয়ে লিখতে বসলাম। আমি নিজে বর্তমান অবস্থায় ব্যাপক দো’টানায় আছি। প্রথমত আমার একমাত্র আয়ের উৎস বর্তমানে সঞ্চয়পত্র। এ দিয়ে নিজে যেমন চলছি, আব্বা-আম্মার চিকিৎসা খরচও এখান থেকেই হচ্ছে। বলে রাখা ভাল এই সঞ্চয়পত্র ছিলো আব্বার নামে, পরে আমার আর বোনের নামে তা করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংকের ঋন এবং আমানতের সূদহার নয়-ছয় করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। ফলাফল এখনও স্পষ্ট না হলেও চারিদিকে নয়-ছয় হওয়ার আশংকা শুনতে পারছি। এই নয়-ছয় করতে গিয়ে যদি সঞ্চয়পত্রের সূদ শতকরা ছয় এ নেমে আসে তাহলে তো পুরাই মাথায় হাত। নিজে চলবো কি ভাবে আর বাবা-মায়ের চিকিৎসাই বা চালাবো কি ভাবে। তবে আশার কথা বর্তমান নিয়মে সঞ্চয়পত্র কেনার হার ব্যাপক কমে এসেছে। আশা করা যায় এখন কেবল বৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা দিয়েই কেবল সঞ্চয়পত্র কেনা যাচ্ছে। আর আশংকার কথা হলো লুটেরারা ব্যাপক তৎপর, তাদের কারণেই হয়তো বা এই সূদ হার সরকার কমাতে বাধ্য হবে। তাদের শক্তি (রাজনৈতিক / অর্থনৈতিক) আমাদের মতো ক্ষুদ্র আমানতকারীদের চাইতে অনেক বেশী।

আরেকটি খবর ইদানিং পত্র-পত্রিকায় খূব জোরে-শোরে আসছে, সেই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শেয়ার করছেন। ‘আমানত সুরক্ষা আইন’ এর প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে, যার ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হচ্ছে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়িত হলে আমানতকারীরা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ক্ষতিপূর্ণ পাবেন। এই ক্ষতিপুরনের জন্য বীমা করার ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন ব্যাংকে এক লাখ টাকাই থাকুক আর এক কোটি টাকাই থাকুক ক্ষতিপূর্ণ হিসেবে ছোট-বড় নির্বিশেষে সব আমানতকারীই সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এখন প্রশ্ন হলো এই ক্ষতিপূরণ আসলে কি ? যে বা যিনি এক কোটি টাকা ব্যাংকে আমানত রেখেছেন তাকে কি এই এক লক্ষ টাকা নিয়ে বাকি ৯৯ লক্ষ টাকার কথা ভুলে যেতে হবে ? সেরকম হলে তো লুটেরাদের হাতে দেশের অর্থনীতি ডোবানোর অব্যর্থ একটি হাতিয়ার তুলে দেয়া হলো।

অর্থনীতি / ব্যাংকিং যতই কম বুঝি না কেন, আমার জানা মতে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়িত হতে হলে সেখানে একজন প্রশাসক নিয়োগ করা হয় এবং তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানের সব দায়-দেনা নিরুপন করা হয়। এরপর যোগ-বিয়োগ করে যা থাকে তা দিয়ে প্রথমে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়, এরপর আসে বড় আমানতকারীদের প্রসঙ্গ। কেউ ই হয়তো তাদের আমানতের পুরো টাকা ফেরত পান না, তাই বলে এক কোটি টাকা রেখে কেউ এক লাখ টাকা নিয়ে বাসায় যান না। আমি নতুন আইনটি সম্পর্কে যতটুকু বুঝেছিলাম তাতে মনে হয়েছে ক্ষুদ্র আমানতকারীরা যাতে তাদের আমানতের পুরোটা বা সিংহভাগ ফেরত পেতে পারেন তার জন্য এই বীমা ব্যবস্থা। আর বড় আমানতকারীরা আইন মোতাবেক দায়-দেনা নিরুপনের পর তাদের টাকা শতকরা হিসাবে ফেরত পাবেন। কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডুবলে কম-বেশী সবাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, একমাত্র লুটেরা ঋণগ্রহীতারা ছাড়া। তারা হয়তো বিদেশে টাকা পাচার করে আনন্দেই থাকে।

হয়তো কেউ না কেউ এই নতুন আইন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিবেন। সেই আশাতেই রইলাম।
ভাল থাকুন।

১. দ্য ডেইলি ষ্টার এর খবর
২. বিবিসির খবর
ডয়েচেভেলের খবর

ফেসবুক মন্তব্য

About the author

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।