প্রায় প্রতিদিনই বিকালে হাটতে যাই পার্কে বা খেলার মাঠে। আগে পার্কেই যেতাম নিয়মিত, কিন্তু বিকালের দিকে মহিলাদের সংখ্যা একটু বেশীই থাকে। সমস্যা হলো তারা ২/৩ জন মিলে গল্প করতে করতে ধীরে হাটে। আমাকে প্রায়শই ‘এক্সকিউজ মি’ বলে পথ করে নিতে হয়। সেদিন হঠাৎ করেই খেলার মাঠে গেলাম। খোলামেলা, আলো বাতাস বেশ। সেই সাথে মুফতে প্লেন দেখা কিংবা প্লেনের ফটো তোলা তো আছে। আর আছে বিভিন্ন গ্রুপের ক্রিকেট, ফুটবল খেলা দেখা। কেউ কেউ আবার নিয়মিত নেট প্র্যাকটিস করছে। পার্কে আবার ক্যামেরা নিয়ে ঢোকা রীতিমতো ঝামেলা। গার্ডরা আপত্তি করে, কারণ মহিলারা নাকি ক্যামেরা নিয়ে ঢুকলে সোসাইটিতে অভিযোগ করে। তখন তাদের কৈফিরত দিতে দিতে জান শেষ।
আমি মোটামুটি ১০-১২ চক্কর দিয়ে এসব খেলা দেখি আর ফাঁকে ফাঁকে ফটো তুলি। ফটো তুলতে গেলে প্রায়ই দেখা যায় ছোট ছোট পিচ্চি পোলাপান ফটো তুলে দেয়ার আবদার করে। ক্যামেরার পিছনের এলসিডি স্ক্রিণে নিজের ফটো দেখে যে অপার্থিব একটা হাসি দেয় সেটা রীতিমতো অমূল্য। সাধারণ পিচ্চিরাই এই আবদার করে। বড়রা খূবই কম। আগে টিভি চ্যানেলের ছবি তোলা হচ্ছে মনে করে অনেক বড়রাও ছবি তুলতে বলতেন। এখন আর সে রকম আবদার খূব একটা পাই না। হয়তো বুঝে গেছেন এগুলো আসলে কোন চ্যানেলের ক্যামেরা না। আমি অবশ্য সব সময়ই চেষ্টা করেছি তাদের এরকম ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিতে।
আজ গোটা বার চক্কর দিয়ে এক কোনায় দাড়িয়ে প্লেনের অপেক্ষা করছি। পিছনেই মাঠের সীমানা গ্রীল দিয়ে ঘেরা। হঠাৎ একজন আঙ্কেল বলে ডাক দিলো। পিছনে ঘুরতেই দেখি কিশোর বয়সী এক ছেলে ওপাশ থেকে হাত নেড়ে বলছে একটু শুনবেন। কাছে যেতেই বলে উঠলো কয়েকটা ছবি তুলে দিবেন। বললাম ভিতরে আসো, তুলে দিবো অবশ্যই।
কিছুক্ষণ পর দেখি দুই জন এসে হাজির। এরপর শুরু হলো তাদের ছবি তোলা। দুইজনেই নানা ভাবে পোজ দিয়ে ছবি তুললো। আমি বেশ মজা পাচ্ছিলাম। ফটোশ্যুট শেষে জিজ্ঞাসা করলো ছবি পাওয়া যাবে কি ভাবে। বললাম মেমোরি কার্ড দিলে আমি কপি করে দিতে পারি। পরের দিন কার্ড নিয়ে আসবে জানালো। সেই সাথে বললো ভবিষ্যতেও মাঝে মধ্যে যেন এভাবে ছবি তুলে দেই। আমিও সম্মতি দিলাম। ভাবতেছি কাল এলে বলবো ওদের কোন বান্ধবী থাকলে নিয়ে আসতে। বেশ একটা নায়ক, নায়িকা আর ভিলেন টাইপ ফটোশ্যুট হতে পারে।
পরে জানলাম ছেলে দুটো কাছের এক কনফেকশনারি দোকানে কাজ করে। কয়েকদিন আমাকে ছবি তুলতে দেখে আজ সাহস করে বলেই ফেলেছে ছবি তোলার কথা। ফিরে আসার সময় দু’জনে বার বার করে দোকানে যেতে বলছিলো একটা ‘ঠান্ডা’ খাওয়ার জন্য। আমি হেসেই জানালাম বাইরে একেবারেই খাই না, আর ঠান্ডা তো একেবারেই না। আমি ছবি তুলে আনন্দ পেয়েছি এটা জানাতে ভুললাম না। আশে পাশের লোকজনও এই দু’জনকে নিয়ে হাসি মশকরা করছিলো ছবি তোলার সময়। মাঝে মধ্যে ভাবতে ভালই লাগে এই সামান্য ছবি তুলে দেয়ার জন্য মানুষ কত খুশী হয়। বেশীর ভাগ সময় হয়তো এই ছবিটা আর তার কাছে থাকে না, আমার নিজের কাছেই থেকে যায় অমূল্য এক স্মৃতি হিসেবে।
ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন।
ফেসবুক মন্তব্য