১. রকিব ঢাকা আসলো দীর্ঘ ২৩ বছর পর। বিয়ে করার সময় বা পরে সেই যে এসেছিলো, আর আসে নাই। এর মধ্যে ওর ঠিকানা ভিয়েনা থেকে লন্ডন হয়েছে। তবে এবার আসার সময় দূঃখজনক একটা ঘটনা ঘটে গেলো। রকিব লন্ডন থেকে রওনা হবে ৩ তারিখ, ঢাকায় পৌছাবে ৪ তারিখ। আর ২ তারিখে তার বড় ভাই মোহসিন ভাই চলে গেলেন ওপারে। হার্টের সমস্যা ছিলো। চলাফেরা করতেন হুইল চেয়ারে। ২ তারিখ সকালেই হার্ট এটাক। বড় মেয়ে আর স্ত্রী কাছে ছিলেন। বাকি ২ মেয়ে বিদেশে।
আমরা যখন কলেজে পড়তাম তখন থেকেই রকিব আর ফিরোজের সাথে পরিচয়। ওদের দুজনের দেশের বাড়ি কাছাকাছি। রকিব থাকতো তিতুমীর কলেজের হোষ্টেলে। পাশ করে চলে আসে মোহসিন ভাই এর কাকরাইলের বাসায়। তখন থেকেই মূলতঃ রকিবের সাথে হৃদ্যতা শুরু। ও যেমন আসতো বেইলী স্কয়ারে, তেমনি আমরাও যেতাম কাকরাইলে। মোহসিন ভাই থাকতেন দোতালায়, এক তলায় রকিব, রকিবের চাচা আর চাচাত ভাই খোকন ভাই। পরে রকিবের ছোটভাই মাকসুদও চলে আসে। সে সময় কাকরাইলে গেলে একতলায় ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেয়া যেতো। রকিবের চাচা ছিলেন অত্যন্ত মিশুক। ফলে সবাই মিলে গল্পগুজব করতে কোন সমস্যাই হতো না। মোহসিন ভাই এর সাথে অবশ্য সেসময় সলাম বিনিময় ছাড়া আর তেমন কোন কথাবার্তা হতো না। বশ্য সেসময় তিনি ব্যবসা নিয়ে খূবই ব্যস্ত ছিলেন। তার সাথে দেখা হতো কালেভদ্রে।
রকিব, ফারুখ আর এহতেশাম মিলে যখন চেকোস্লোভাকিয়া যাওয়ার প্ল্যান করে তখনই মূলতঃ তার সাথে আলাপ। তখনই জানলাম মোহসিন ভাই আসলে খূবই মিশুক এবং আমুদে। সেদিন রমনা পার্কে ‘কিছুক্ষণ’ নামে প্রাতভ্রমন কারীদের এক সংগঠন মোহসিন ভাই এর জন্য দোয়ার আয়োজন করেছিলো। সেখানেও সবাই অকুন্ঠ চিত্তে মোহসিন ভাই এর এই মিশুকে এবং আমুদে স্বভাবের কথা বলছিলেন। সেই সাথে তিনি যে ভোজনরসিক ছিলেন, সে কথাটাও বলেছেন।
নিজের ভাই-বোনদের জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে যা করা প্রয়োজন সবই তিনি করেছেন। সেই সাথে আশে পাশের মানুষদের সাহায্য সহযোগীতা করেছেন।
২. আমরা রমনা পার্ক থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম বেইলী রোডে। বিভিন্ন দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা আছে নাটক সরণী। কিন্তু বর্তমান অবস্থা দেখে এটাকে খাদক সরণী বলাই শ্রেয়। আমরা যখন ছিলাম তখন দোকান বলতে ছিলো জেসমিন কনসোর্টিয়াম আর লাকী ব্রেড। কিছুদিন পর মনে হয় সুইস বেকারী, ষ্টারডাস্ট আর একটা ফটো ষ্টুডিও হয়েছিলো, সাথে ডাঃ মবিন খানের চেম্বার। যেদিন নাটক থাকতো সেদিন সন্ধ্যার পর একটু লোক সমাগম হতো। অন্যান্য দিন সন্ধ্যার পর এই রোড একেবারেই নিরব থাকতো।
৩. দূপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর গেলাম বেইলী স্কয়ারে, আমাদের নানা স্মৃতিবিজরীত আবাসস্থল। আমরা ছিলাম ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। বাকিরা কেউ আগে কেউ বা পরে বেইলী স্কয়ার ছেড়েছে। তবে এবার গিয়ে সরকারী কোয়ার্টার এর অবস্থা দেখে একেবারেই ভাল লাগে নাই। চরম ধরণের নোংরা হয়ে আছে চারিদিক। দেখে মনে হচ্ছিলো ময়লার ভাগাড়। আমরা গিয়েছিলাম বিকালের দিকে। পুরো কলোনী শুনশান নিরব। হতে পারে শীতের কারণে তেমন কেউ বাইরে বের হয় নাই। আমাদের সময়ে বিকালে হাটাহাটি আর মাঝের মাঠে নিয়মিত খেলাধূলা চলতো। আমরা ৪ আর ৬ নাম্বার বিল্ডিং এর মাঝে মাংকি রাইডে বসে আড্ডা দিতাম, সন্ধ্যার পর। এবার গিয়ে দেখলাম খেলার জিনিসগুলি ভাঙ্গা নয়তো উধাও। আর বাসাবাড়ীর নানারকম ময়লা দিয়ে ভরপুর।
ভাবতেও কষ্ট হচ্ছিলো যে এখানে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা থাকেন।
ফেসবুক মন্তব্য