ছবি তোলার বিড়ম্বনা

ইদানিং কোথাও বেড়াতে গিয়ে ফটো তুলতে গেলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। দেখা যায় সেখানে সব জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে। কেবল বসে গল্প করলে কথা ছিলো। কিন্তু তাদের আচার-আচরণ দেখলে ছবি তোলার বদলে উল্টা দিকে হাটা দিতে হয়। ঢাকা শহর তো বটেই মফস্বলেও একই অবস্থা। মফস্বলে আবার বোরকাওয়ালীর সংখ্যা বেশী। তো সেদিন ইদ্রাকপুর দূর্গ দেখতে গিয়ে একই অবস্থা। যদিও সেরকম ভিড় ছিলো না। আর মাঝে মধ্যে টুকটাক কিছু কাহিনী তো থাকেই।

১. ঢোকার পর এদিক সেদিক দেখে শেষে গেলাম মাঝের বৃত্তাকার অংশে। সিড়ি দিয়ে ওঠার সময়ই কানে এলো কিচির মিচির কথাবার্তা। সামনে তাকিয়ে দেখি ৬/৭ জন বোরকাওয়ালী মোবাইলে ফটো তুলতেছে। বোরকা-নেকাব তো আছেই, সাথে হাত-পা সবই মোজায় আবৃত। আমি অবশ্য খেয়াল করি নাই তারা নেকাব সরিয়ে ছবি তুলছিলো কিনা। আমাকে দেখে একটু বিরতি দিলো, আমি সেই ফাঁকে উপরে উঠে গেলাম। 

ইদ্রাকপুর দূর্গ – বাইরের দৃশ্য

২. উপরে উঠার পর প্রথমেই চোখ গেলো সাদা স্কুল / কলেজ ড্রেস পড়া ২/৩টা মেয়ে আরেকটা ছেলে। তারাও বিভিন্ন পোজে ছবি তুলছে। আমি ওদের এড়িয়ে একদিক থেকে ছবি তোলা শুরু করলাম। অন্যান্যদের ছবি তোলায় যাতে ব্যাঘাত না হয় সেজন্য মাঝে মধ্যে বিরতি দিতে হচ্ছিলো। কিছুক্ষণ পরে একট পরিবার আসলো। ৩জন মহিলা, ২জন পুরুষ আর ৩জন বাচ্চা। মহিলারা সবাই বোরকা পড়া, সাথে নেকাব / মোজা আছে। ওনারা একদিকে আর আমি একদিকে। কিন্তু ২ পিচ্চি মারাত্মক চঞ্চল, চারিদিকে দৌড়াদৌড়ি করতেছে আর একটু উচু জায়গা পেলেই লাফ দিতেছে। যদিও খূব বেশী উচু না, হয়তো ২/৩ ইট সমান উচু। কোন কোন জায়গায় গর্ত আছে। আমি নিজেও দেখেশুনে পা ফেলছিলাম, যাতে বেকায়দা জায়গায় পা পড়ে না মচকায়। কিন্তু ২ পিচ্চির সেসব চিন্তা নাই। আমি ছবি তুলবো কি, পিচ্চিদের দুরন্তপনা দেখছিলাম। 

৩. গোলাকার এই অংশের এক পাশে একটা সিড়ি আছে, যেটা নিচের দিকে নেমে গেছে। আগে এই দূর্গের সাথেই ছিলো নদী। সৈনিকেরা নৌকায় করে এসে এই পথ দিয়েই এখানে উঠে আসতো বা নিচে নেমে নৌকায় করে চলে যেতো। এই সিড়িটা এক সাইডে, কিছুটা সরু এবং প্যাঁচানো, ওয়াল দিয়ে ঘেড়া। সেদিকে যেতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে সিড়ির মুখ আটকে দাঁড়িয়ে আছে, নিচের দিকে আরেক ছেলে। খূব সম্ভবত তাদের মধ্যে কোন অভিমান পর্ব চলছিলো। 

ইদ্রাকপুর দূর্গের মূল প্রবেশ পথ
ইদ্রাকপুর দূর্গের মূল প্রবেশ পথ

৪. কিছুক্ষণ পর এলো স্কুল ড্রেস পড়া একদল মেয়ে। তারা উপর উঠে হাসাহাসি, লাফালাফি করছিলো। উপরে তখন অন্য কেউ তেন ছিলো না। আমি মূল সিড়ি দিয়ে ভিডিও করতে করতে উপরে উঠলাম। শেষ মূহুর্তে ভিডিও’তে ওরাও ধরা পড়লো। আমি ভিডিও করা বন্ধ করে নিচে নামার সময় পিছন থেকে কে যেন আঙ্কেল বলে ডাকছিলো। ঘুরে তাকাতেই দেখি ৩/৪টা মেয়ে দৌড়ে আসছে। কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো তাদের ছবি তুলেছি কিনা। আমি বললাম ছবি তো না, ভিডিও করছিলাম, শেষ কয়েক সেকেন্ডে মনে হয় তোমরা আছো। সাথে সাথেই সমস্বরে বলে উঠলো আঙ্কেল ঐ অংশ টুকু কেটে দিয়েন প্লিজ। আমি আবার ক্যামেরা বের করে ভিডিও প্লেব্যাক করলাম। শেষে ঠিকই ওদের দেখা গেলো। সবাই মিলে হায় হায় করে উঠলো। আমি হেসে বললাম স্কুল ফাঁকি দিয়ে এসেছ ? বলে ঠিক ফাঁকি না, আজ আমাদের পরীক্ষা শেষ হলো, তাই একটু ঘুরতে আসছিলাম সবাই মিলে। স্কুল কাছেই। আমি তাদের বললাম ভয় নাই, আমি তোমাদের অংশটুকু কেটেই দিবো। 

৫. ভিতরের পুকুরের চারিদিকে ঘুরে ভিডিও করছি। এক ছেলে আর এক মেয়ে কিছু নিয়ে ঝগড়া করছিলো। মেয়েকে দেখলাম পায়ের স্যান্ডেল খুলে ছেলেকে থ্রেট করতেছে। কিছুক্ষণ পর দেখি ছেলে রাগ করে ঘাটে বসে আছে আর মেয়ে তার মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছে।

৬. নিচে দাঁড়িয়ে গুপ্ত পথের ছবি তুলছি এমন সময় উপর থেকে সিড়ির কাছে দেখা সেই দু’জন নেমে আসছে। অবশ্য কিছুক্ষণ আগে দেখছিলাম তারা ফটোশুট করছিলো সিড়িতে দাঁড়িয়ে। মেয়েটা আমাকে দেখেই জানতে চাইলো আমার কোন চ্যানেল আছে কিনা। আমি বললাম ঠিক সেভাবে নাই, টুকটাক ছবি তুলি, ভিডিও করি, আপলোড করি। তার চ্যানেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলে একটা পেজ আছে, তবে ভাইরাল না। নাম বললো মিস প্রজাপতি। 

৭. বের হয়ে পুরো সামনের অংশের ছবি তুলতে গেলে দেখি পুরোটা আসে না। সামনে একটা পুকুর ছিলো, ধারণা করলাম ঐপার থেকে পুরোটা হয়তো আসবে। সেখানে যেতে গিয়ে দেখি একটা গেট আছে, তবে ছোট গেট খোলাই আছে। আমি ঢুকে সামনে আগা্তেই ৩/৪টা কুকুর এসে ঘিরে ধরলো। আমাকে সামনে আগাতে দেখে ২/১ বার ঘেউ ঘেউ করে সরে গেলো। কিন্তু একটা তো সরেই না, উল্টা তীব্র স্বরে ঘেউ ঘেউ করা শুরু করলো। কাছেই এক মহিলা ছিলেন, তিনিই কি নাম ধরে ডেকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন কুকুরকে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কামড়ায় কিনা, বললেন কামড়াবে না। পরে ২/৩টা ছবি তুলে বের হয়ে আসলাম। 

আরো ২/৩টা ছোট ছোট ঘটনা আছে  মুক্তারপুর ব্রীজের উপর, সেসব আরেকদিন বলবো।

ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

ভিতরের অংশ
ইদ্রাকপুর দূর্গের ভিতরের অংশ। উপরের আর্চওয়েতে মিস প্রজাপতির ফটোশুট চলছে। নিচের দিকে সেই ২ পিচ্চি আর তাদের পরিবার। এক পিচ্চি দেখেন স্লোপ বেয়ে উঠতেছে। ২ জনে মিলে এই স্লোপে তারা কয়েকবারই চার হাত-পায়ে উঠে পড়ছিলো।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।