ব্যাটারী রিকশা বিতর্ক

ইদানিং ঢাকা শহরে রিকশার সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। অধিকাংশই ব্যাটারী রিকশা। এগুলোতে রিকশাওয়ালার কায়িক শ্রম অপেক্ষাকৃত কম হয়। আবার যাত্রী সাধারণও কিছুটা দ্রুততার সাথে গন্তব্যে যেতে পারেন। ফলাফল ব্যাপক হারে রিকশা বাড়ছে। অবশ্য সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুলিশ প্রশাসন / ট্রাফিক পুলিশ কিছুটা ঢিলেঢালা ভাবে কাজ করাতে এসব রিকশার সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। আগে যেখানে রিকশাগুলি মূল সড়ক (অনেক জায়গায়) যেতে পারতো না, এখন এসব রিকশা অলিগলি ছাড়িয়ে মূল সড়কেও অবাধে চলাচল করছে।

দেশে তৈরী রিকশাগুলি খূব একটা শক্তপোক্ত না। আবার এদের ব্রেক সিষ্টেমও তেমন উন্নত মানের না। সেই সাথে চালকদের মধ্যে জোরে চালানোর একটা প্রবণতা কাজ করে। আর আগে যাওয়ার দৌড়ে তারা অহরহ লেন পরিবর্তন করে। তাদের মনোভাব অনেকটা গাড়ীর সাথে টেক্কা দেয়া। 

১. গাড়ী (যান্ত্রিক গাড়ী) রাস্তায় নামাতে হলে কয়েকটি নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। যেমন গাড়ীর ব্লুবুক (সাধারণভাবে যাকে আমরা লাইসেন্স বলি) থাকতে হয়। সাথে থাকতে হয় হালনাগাদ ফিটনেস সার্টিফিকেট। সেই সাথে চালকের গাড়ী চালানোর লাইসেন্স থাকতে হয়। আর এই লাইসেন্স তাকে পড়াশোনা করে, প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর পরীক্ষা দিয়ে অর্জন করতে হয়। অথচ ব্যাটারী রিকশার বেলায় এসবের কোন দরকার নেই। সেই কোন আমলে ঢাকা শহরে রিকশার লাইসেন্স দেয়া হতো সে মনে হয় কর্তৃপক্ষ ভুলেই গেছে। অথচ এই ব্যাটারী চালিত রিকশাগুলি যান্ত্রিক বিধায় এর লাইসেন্স এবং চালকের লাইসেন্স থাকাটা জরুরী ছিলো।

২. আগেই বলেছি দেশে তৈরী রিকশাগুলি মোটেই শক্তপোক্ত না। পত্রিকাতে দেখেছি চলতে চলতে হঠাৎ কোন একটা জোড়া ভেঙ্গে গিয়ে চালক / যাত্রী উভয়েই আহত হয়েছেন। আবার জোরে চলা অবস্থায় হঠাৎ ব্রেক করলে যাত্রী উড়ে গিয়ে সামনে পড়ার আশংকাও প্রবল। 

কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম এক রিকশার আঘাতে এক ছাত্রী নিহত হয়েছেন। এরপরই দেখলাম মহামান্য  হাইকোর্ট এর একটি বেঞ্চ আদেশ দিয়েছেন ৩ দিনের মধ্যে  এসব অবৈধ ব্যাটারী রিকশা রাস্তা থেকে অপসারণের।

কথা হলো আদেশ দিলেই তো হলো না। আরো কিছু বিষয় এখানে বিবেচ্য হওয়া দরকার….

১. বর্তমানে সবারই অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভাল না। সেই সাথে আছে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি। চাকরিজীবি মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোই কোন রকমে দিনাতিপাত করছে। সেখানে এইসব রিকশাওয়ালা শ্রেণীর অবস্থা কেমন সেটি সহজেই অনুমান করা যায়।

২. প্রাথমিক অবস্থায় ঢাকার মেইন রোড গুলি থেকে সবধরণের রিকশা এবং অযান্ত্রিক যানবাহন অপারেশন করা হোক। 

৩. ঢাকা শহরের জন্য রিকশার সংখ্যা নির্দিষ্ট করে লাইসেন্স প্রদান করা হোক। সেই সাথে চালকদের ও লাইসেন্স এর আওতায় আনা হোক। সাধারণ ট্রাফিক জ্ঞান এবং সেই জ্ঞানের প্রায়োগিক পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেই কেবল লাইসেন্স দেয়া হোক।

চীনের তৈরী ব্যাটারী চালিত রিকশা
চীনের তৈরী ব্যাটারী চালিত রিকশা

চীনে তৈরী কিছু রিকশা চলাচল করে যেগুলোর কাঠামো অনেক উন্নত, সেই সাথে ব্রেক সিষ্টেমও ভাল। এগুলোর কোন কোনটিতে শক এবজরভার ও আছে। এগুলো বেশ নিচু, স্থানীয় রিকশার মতো উচু না। ফলে যাত্রী সাধারণও আরামে উঠতে-নামতে-বসতে পারেন। সেই সাথে কমপক্ষে ৩ জন যাত্রী বসতে পারেন, প্রয়োজনে আরো যাত্রী বসার ব্যবস্থা করা যায়। ঢাকায় যেমন টেম্পো চলে, মফস্বলে এসব দিয়েই যাত্রী এবং মালামাল পরিবহন করা হয়। মফস্বল শহরগুলিতে এগুলো “অটো” নামে পরিচিত। দেশে প্রস্তুত রিকশার বলে এসব চীনা রিকশা আমদানী অথবা দেশেই এসেম্বল করে রাস্তায় নামানো যেতে পারে। 

সবশেষে বলি বর্তমানে ঢাকা শহরে রাস্তা পার হতে গেলে এইসব ব্যাটারী রিকশা আমার কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক। রাস্তা পার হতে গেলে গাড়ীর চালক গাড়ীর গতি কমিয়ে দেয় যাতে নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারি। কিন্তু ব্যাটারী রিকশার চালকরা লেন ফাঁকা দেখলে হুট করে এক লেন থেকে আরেক লেনে চলে আসে উল্কার মতো। এই পরিস্থিতি নিজের জন্য যেমন ভয়াবহ, তেমনি ভয়াবহ রিকশার চালক এবং যাত্রীর জন্য।

সবার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, যৌক্তিক সমাধানে আসুক সবাই।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।