চোখে চশমা দিয়ে বই পড়ছিলাম। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে উঠে গিয়ে দরজা খুলতে গেলাম। ফিরে এসে চশমা আর খূঁজে পাচ্ছি না। সত্যি কথা হলো, চশমা খুলে কখন কোথায় রেখেছি সেটাই আর মনে করতে পারছি না। এমন তো হয় মাঝে মধ্যে, তাই না ? একটা বয়সের পরে এটি কম-বেশী হয়তো সবারই হয়। এক ধরণের শর্ট মেমোরি লস। এর নানা কারণ আছে। তবে এধরণের ঘটনা ইদানিং অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে এবং বেশ ঘন ঘন। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যাধিক সময় দেয়া, বিশেষ করে লাগাতার ভিডিও দেখা। এই পরিস্থিতি’কে বলে ব্রেইন ফগ।
ব্রেইন ফগ হলো এক ধরনের মানসিক অস্পষ্টতা, যেখানে মনোযোগ ধরে রাখা, চিন্তা করা, বা স্পষ্টভাবে কিছু মনে করা কঠিন হয়ে যায়। এটি কোনো নির্দিষ্ট রোগ নয়, বরং বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক অবস্থার লক্ষণ। ব্রেইন ফগের সাধারণ লক্ষন
- মনযোগ ও ফোকাস কমে যাওয়া
- ভুলে যাওয়া বা স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া
- চিন্তা করতে বা সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হওয়া
- মানসিক ক্লান্তি অনুভব করা
- বিভ্রান্তি বা অস্থিরতা লাগা
ব্রেইন ফগের কারণ
- পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব – কম ঘুম বা খারাপ ঘুম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
- স্ট্রেস / উদ্বেগ – অতিরিক্ত মানসিক চাপ ব্রেইন ফগ তৈরি করতে পারে।
- পুষ্টির ঘাটতি – ভিটামিন B12, আয়রন, ওমেগা-৩ এর ঘাটতি থাকলে মনে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।
- ডিহাইড্রেশন (পানির অভাব) – শরীরে পানি কম থাকলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
- হরমোনের পরিবর্তন – গর্ভাবস্থা, মেনোপজ, বা থাইরয়েডের সমস্যায় ব্রেইন ফগ হতে পারে।
- ডিপ্রেশন ও উদ্বেগজনিত সমস্যা – মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হলে ব্রেইন ফগের অনুভূতি বেড়ে যেতে পারে।
- মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া – কিছু ওষুধ, বিশেষ করে অ্যান্টিহিস্টামিন, সেডেটিভ ও পেইন কিলার, ব্রেইন ফগ সৃষ্টি করতে পারে।
- ক্রনিক অসুস্থতা – কোভিড-১৯ পরবর্তী পোস্ট-ভাইরাল সিনড্রোম, ফাইব্রোমায়ালজিয়া, বা অটোইমিউন ডিজঅর্ডার থাকলে ব্রেইন ফগ হতে পারে।
ব্রেইন ফগ দূর করার উপায়
- পর্যাপ্ত ঘুম (প্রতি রাতে ৭-৯ ঘণ্টা
- মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম
- হাইড্রেটেড থাকা (প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা)
- সুষম খাদ্য গ্রহণ (ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া)
- নিয়মিত ব্যায়াম করা (বিশেষ করে অ্যারোবিক এক্সারসাইজ)
- স্ক্রিন টাইম কমানো (বেশি মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার না করা)
- ক্যাফেইন ও চিনি কমানো (অনেক বেশি চা, কফি বা মিষ্টি খাবার খেলে ব্রেইন ফগ বাড়তে পারে)
- সঠিক ওষুধ ও চিকিৎসা নেওয়া, যদি কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে
ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও দেখা ব্রেইন ফগের কারণ হতে পারে। এটি আপনার মস্তিষ্কের ওপর বেশ কয়েকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার ব্রেইন ফগ তৈরি করতে পারে
1️⃣ মস্তিষ্কের অতিরিক্ত তথ্যপ্রবাহ (Information Overload)
- সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রলিং করার সময় আমাদের মস্তিষ্ক দ্রুত ও একটানা নতুন তথ্য গ্রহণ করে। এই অতিরিক্ত তথ্যপ্রবাহ মস্তিষ্কের বিশ্রামের সুযোগ কমিয়ে দেয় এবং মানসিক ক্লান্তি সৃষ্টি করে।
2️⃣ মনোযোগ ও ফোকাস নষ্ট করা
- ছোট ও আকর্ষণীয় ভিডিও (যেমন: রিলস, শর্টস, টিকটক) দ্রুত মনোযোগ পরিবর্তনের অভ্যাস তৈরি করে, যা দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বিষয়ে ফোকাস করতে সমস্যা সৃষ্টি করে।
3️⃣ ডোপামিন অতিরিক্ত নিঃসরণ
- প্রতি নতুন ভিডিও দেখার সময় মস্তিষ্কে ডোপামিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের আনন্দিত করে। তবে এই অতিরিক্ত ডোপামিন নির্ভরতা তৈরি করে এবং পরবর্তীতে সাধারণ কাজকর্মে আগ্রহ কমে যায়, ফলে ব্রেইন ফগের অনুভূতি বাড়তে পারে।
4️⃣ ঘুমের ব্যাঘাত
- রাতে শোবার আগে বেশি সময় ভিডিও দেখলে ব্লু লাইট মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়, যা ঘুমের সমস্যা তৈরি করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ব্রেইন ফগ বেড়ে যেতে পারে।
5️⃣ প্রোডাক্টিভিটি কমিয়ে দেয়
- যখন কেউ দীর্ঘ সময় ধরে ভিডিও দেখে, তখন মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পায় না, ফলে নতুন কিছু শেখা বা সৃজনশীল চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যায়।
কীভাবে এই সমস্যা এড়ানো যায়
- সীমিত সময় নির্ধারণ করুন – প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ভিডিও না দেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- ডিজিটাল ডিটক্স করুন – সপ্তাহে অন্তত ১-২ দিন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নিন।
- ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন – রাতে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করলে ব্লু লাইট ফিল্টার চালু করুন।
- গভীর মনোযোগের চর্চা করুন – বই পড়া, ধ্যান করা, বা শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ান।
- সৃজনশীল কাজে সময় দিন – ভিডিও দেখা ছাড়াও ছবি তোলা, লেখা, বা গান শোনার মতো কাজ করুন, যা মস্তিষ্কের জন্য স্বাস্থ্যকর।
শেষ কথা
নিয়ন্ত্রিতভাবে ভিডিও দেখলে সমস্যা নেই, তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ব্রেইন ফগ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে ভারসাম্য রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আর ব্রেইন ফগ যদি দীর্ঘদিন চলতে থাকে এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সুস্থ জীবনযাত্রা মেনে চললে এটি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ডিসক্লেইমার : তথ্য উপাত্ত চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে।
ফেসবুক মন্তব্য