আসার একমাত্র বোনের যখন বিয়ে হয় তখন আমি সদ্য এইচএসসি পাশ করেছি। বোনের বিয়ের কয়েক মাস পরই আম্মা’র ষ্ট্রোক হয় এবং বোন-দূলাভাই আব্বা’র সরকারী বাসায় চলে আসেন আম্মা’র দেখাশোনার সূবিধার্থে। এক সময় তারা পুরোপুরিই আমাদের সাথে থাকা শুরু করেন। আব্বার রিটায়ারমেন্টের পরে আমরা চলে যাই বাবর রোডে, সেখান থেকে আদাবরে। বোন দূলাভাই আমাদের সাথেই ছিলেন। এর মধ্যে তাদের ৩টি সন্তান ও হয়েছে। আদাবর থেকে দূলাভাই চলে আসেন উত্তরায় নিজের বাড়িতে। আমরাও এবার তার সাথে তার বাসায়।
বিয়ের পর থেকেই দেখছি দুলাভাই খূব নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন। ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজের পর কিছুক্ষণ ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ। এরপর গোসল করে নাস্তা খেয়ে অফিসে। নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন। খাওয়া-দাওয়াও পরিমিত। রিটায়ারমেন্টের পর নিয়মিত হাটতে বের হন সন্ধ্যার পর। শীতকালে ব্যাডমিন্টন খেলেন। নেশা বলতে খেলা দেখা। ঢাকায় কোন খেলা হলে ছেলে-মেয়ে সহ ষ্টেডিয়ামে চলে যান খেলা দেখতে। আর টিভিতে খেলা দেখা তো আছেই।
মোটের উপর তাকে কখনই খূব একটা অসুস্থ্য হতে দেখি নাই। স্বাস্থ্যও বরাবরই হালকা-পাতলা। ইদানিং নিয়মিতই ডাক্তারের কাছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতেন। রুটিন পরীক্ষা। দুলাভাই এর কোলেষ্টেরল বেশী ছিলো। ডাক্তারের পরামর্শে ভাত খাওয়া কমালেন। হঠাৎ বুকে কিছুটা চাপ অনুভব করেন। কেমন যেন ভার ভার লাগছিলো। মেডিসিনের ডাক্তার পাঠালেন হার্ট স্পেশালিষ্টের কাছে। তিনি ইসিজি দেখে জানালেন আরো কিছু টেষ্ট করতে হবে। টেষ্ট রিপোর্ট দেখে বললেন খূব সিরিয়াস কিছু বুঝা যাচ্ছে না, আপাতত ঔষধ দিলেন। ৩ মাস পর আবার টেষ্ট। এবার অবশ্য জানালেন এনজিওগ্রাম করতে হবে। এনজিওগ্রাম (সিটি এনজিওগ্রাম) করার পর জানা গেলো একটা ব্লক আছে।
অতঃপর ষ্টেন্টিং …. রিং পরানোর পর বাসায় ফিরেছেন। ভাল ই আছেন এখন।
ভাবতেছি এতো নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেও যদি হার্টে ব্লক হয় তাহলে আর এতো সব নিয়ন্ত্রনের দরকার কি !?!
খাবো, দৌড়াবো, ঘুমাবো ।।। জীবন একটাই। মরতে যখন হবেই, জীবনটা উপভোগ করেই মরি।
ফেসবুক মন্তব্য