মৃত্যু

করোনার এই সময়ে আমরা অনেকেই প্রিয়জন হারিয়েছি, হারিয়েছি সহকর্মী অথবা পরিচিত জন। আমার পরিবারও কয়েকজন আত্মীয়-বন্ধু এবং পরিচিত জন হারিয়েছে। আর স্বাভাবিক মৃত্যু তো আছেই। কয়েকদিন আগে এরকমই একটি মৃত্যু সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। বিশ্বাসই হচ্ছিলো না।

ফটিক ভাই সম্পর্কে চাচাত ভাই। আব্বার ফুফাতো ভাই এর ছেলে। চাচা-চাচি বহু পূর্বেই গত হয়েছেন। ফটিক ভাই বা তার অন্যান্য ভাই-বোনদের সাথে আমাদের বর্তমান যোগাযোগটা একটু ক্ষীনই বলা চলে। কয়েক বছর আগে হঠাৎ করেই ফটিক ভাই এর সাথে যোগাযোগ হলো ফেসবুকে। সামনা-সামনি দেখা সাক্ষাত নাই। যোগাযোগ বলতেই এই ফেসবুকই। মাঝে মধ্যে মেসেঞ্জারে কথা চালাচালি।

ফটিক ভাই এর লেখার হাত বেশ চমৎকার। তার ছেলেবােলার কথা, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কার কথা নিয়মিতই শেয়ার করতেন ফেসবুকে। আমিও বেশ আগ্রহ নিয়েই তার লেখা পড়তাম।

গত ২৫ তারিখ বেশ কিছু ছবি শেয়ার করলেন ফেসবুকে। ভাইবোন মিলে গিয়েছিলেন গ্রামের বাড়ী। সে সফরের ছবি। পরদিন মানে ২৬শে জানুয়ারী হঠাৎ করে চোখে টরলো তার ষ্ট্যাটাস “গতকাল থেকে পাগল করা অসহ্য ব্যথায় কাতর ! ডাক্তার বেশকিছু ঔষধ আর টেস্ট দিয়েছেন। সবার দোয়া চাই।” আমিও কমেন্ট করলাম সেই ষ্ট্যাটাসে। পরদিন আবারও চেক করলাম তার প্রোফাইল। তখন চোখে পরলো এই লেখা “গোটা বিশ্বটাও যথেষ্ট নয়
জীবিতের কাছে; মৃতের জন্য চাই বড়জোর সাড়ে তিন হাত মাটি। ” কি আশ্চর্য !!!২৮ তারিখেও তিনি ফেসবুকে পোষ্ট করেছেন। আমি ৩০ তারিখ তার প্রোফাইলে গিয়ে দেখি চেনা-পরিচিত মানুষজন তার ২৬ আর ২৭ তারিখের ষ্ট্যাটাসে ‘ইন্নালিল্লাহে …’ লিখে কমেন্ট করতেছেন। প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলাম। মানে কি !?!

ফোন বের কয়েক বার কয়েক তার নাম্বারে কল দিলাম। ফোন বাজতেছে, কিন্তু কেউ ধরছে না। পরে মেসেজ পাঠালাম। তার বড় ভাইকে মেসেজ দিলাম। কোন খবর নাই।

পরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে খবর পেলাম ফটিক ভাই আর নেই। শুক্রবারে নামাজ পড়তে গিয়েছেন। ফিরে এসে খাওয়া-দাওয়া করেছেন। পরে বিকালে ডাক্তারের কাছে যাবেন বলে রেডি হচ্ছিলেন। বাথরুমে গিয়েই পরে যান আর সাথে সাথেই মৃত্যু।

কি বলবো বুঝতেছি না। ফটিক ভাই আমার চাইতে বয়সে খূব বেশী বড় ছিলেন না। জীবিকার প্রয়োজনে অনেক দিন জাপানে ছিলেন। পরে দেশে চলে আসেন। বিয়ে করেছেন। একমাত্র মেয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো।

ফটিক ভাই, আপনার চমৎকার লেখনি মিস করবো !!!

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।