রাজবাড়ী মসজিদ

আমাদের গ্রাম (টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার পাছ চারাণ) এ একটি পূরানো মসজিদ আছে। গ্রামের প্রবীণ মানুষদের মতে এটা আনুমানিক ৩৫০ বছরের পূরানো। অনেকে অবশ্য আরো বেশী বলেন। এটি রাজবাড়ী মসজিদ নামে পরিচিত। পাশেই ছিল রাজবাড়ী, যেটা অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশ্য এটা কোন রাজার বাড়ী না আসলে। এখানে থাকতেন দেলদুয়ারের এক জমিদারের বোন। এই মহিলার অর্থানুকুল্যেই নাকি এই মসজিদ নির্মিত হয়েছিলো। নামটা সঠিকভাবে কেউ ই বলতে পারছেন না। কেউ বলছেন রাহাতুন্নেসা, কেউ আহাতুন্নেসা আবার কেউ বলছেন রাহারুন্নেসা।
রাজবাড়ী মসজিদ
রাজবাড়ী মসজিদ
 
বাংলাপিডিয়ায় পেলাম করিমুন্নেসা নামে একজন জমিদার পত্নী ছিলেন দেলদুয়ারে যার নায়েব ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন (বিষাদ সিন্ধু’র লেখক)। করিমুন্নেসার পূরো নাম করিমুন্নেসা খানম চৌধূরানী। তার মায়ের নাম রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধূরাণী। করিমুন্নেসার বাবার বাড়ী রংপুরে আর তার ছোট বোন হলেন বাংলায় নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। বাংলাপিডিয়া অনুযায়ী করিমুন্নেসার জীবন কাল ১৮৫৫ থেকে ১৯২৬ সাল। তার আমলে এটি নির্মিত হলে এই মসজিদের বয়স খূব বেশী হলে ১০০ বছর।
 
মীর মশাররফ হোসেন এর সুপারিশে এই রাজবাড়ীর নায়েব হয়েছিলেন আবদুল হামিদ খান ইউসুফজঈ (তখন ইউসুফজাই লেখা হতো ইউসুফজঈ / ইউসুফজয়ী), তিনি সেসময়ের একজন সাহিত্যিক ছিলেন। তার সাথে এই রাজবাড়ীর মহিলার {যিনি ছিলেন বিধবা} একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। যদিও জনশ্রুতি আছে তিনি গোপনে এই মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। তবে এই সম্পর্ক নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন দারুণ চটেছিলেন। তিনি এই নিয়ে তার এক কবিতায় তীব্র রাগ প্রকাশ করেছিলেন।
মসজিদের ভিতরের কারুকারজ
মসজিদের ভিতরের কারুকাজ
 
বাংলাপিডিয়ায় আরেক রহিমন্নেসার কথা আছে। চারান গ্রামের এক বিখ্যাত ব্যক্তি নওশের আলী খান ইউসুফজাই (ইউসুফজয়ী) ১৮৮৮ সালে পাকুল্লার জমিদারকন্যা রহিমন্নেসাকে বিয়ে করেন। তার সম্পর্কে আর কোন তথ্য নেই। এই মহিলা মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হলে মসজিদের বয়স ১০০ বছর আনুমানিক।
মার্বেল পাথরের টাইলস
মার্বেল পাথরের টাইলস
 
একজন গ্রামবাসী জানালেন এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা আরো ৩টি মসজিদ নির্মান করেন, যার একটি পাকুল্লার মসজিদ। টাঙ্গাইল জেলা তথ্য বাতায়নে দেখলাম পাকুল্লার এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছেন মতিবিবি নামে এক মহিলা এবং তিনি আরো ৩টি মসজিদ নির্মান করেছেন। কিন্তু সেই ৩টি মসজিদ কোথায় সে সম্পর্কে কোন তথ্য নেই। পাকুল্লার এই মসজিদটি আনুমানিক নির্মান কাল ১৬শ খ্রীষ্টাব্দ। এটার সাথে একই সাথে রাজবাড়ী মসজিদ নির্মিত হয়ে থাকলে রাজবাড়ী মসজিদের আনুমানিক বয়ন ৩০০-৩৫০ বছর।
মার্বেল পাথরের টাইলস
মার্বেল পাথরের টাইলস
 
ছবিগুলো ২০১২ সালের মে মাসে তোলা। সেসময় মসজিদের তিনদিকে এক্সটেনশন করতে গিয়ে মূল মসজিদটিকে আড়াল করে ফেলা হয়। ভিতরের কারুকার্য গুলিও আর আগের মতো নাই। মেঝেতে ছিলো মার্বেল পাথরের টাইলস। সেগুলো কিছু নষ্ট হলেও বেশীর ভাগই অক্ষত আছে। ভিতরের একটি পিলার প্রায় ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থায় ছিলো। সেটিও সংস্কার করা হয়েছে।
 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।