রোহিঙ্গা শব্দের উৎপত্তি নিয়ে একটি গল্প প্রলিত আছে। কোন এক প্রাগৈতিহাসিক আমলে আরাকান উপকুলের কাছে এক জাহাজ ডুবির পর সব আরোহীরা তীরে উঠে আসতে সক্ষম হন। বলা হয়ে থাকে সৃষ্টিকর্তার ‘রহমত’ এর কারণে তারা জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই ‘রহমত’ শব্দ থেকেই নাকি রোহিঙ্গা শব্দটি এসেছে। ১৪৩০ সালে নরমিখলার আমলে বাংলাদেশ এবং ভারতের আসাম থেকে মুসলিম কৃষকরা সেখানে বসতি গড়ে তুলেন। তারাও পরবর্তীতে রোহিঙ্গা নামে পরিচিত হন। নরমিখোলা বাংলার সুলতানের ৩০ হাজার মুসলিম সৈন্যদের সহযোগীতায় মগদের দখল থেকে আরাকানের স্বাধীনতা উদ্ধার করেন। মূল লেখাটি এখানে পড়তে পারেন।
রোহিঙ্গা নামটির ব্যাপারে আরো একটি ব্যাখ্যা আছে, যেটি যথার্থ মনে হয়েছে আমার কাছে। স্বাধীন আরাকান রাজ্যের রাজধানী ছিলো স্রোহং। ম্রোহং > রোয়াং > রোয়াইঙ্গিয়া > রোহিঙ্গা। ১৭৮৪ সালে স্বাধীন আরাকান রাজ্য দখল করে রাজা বোডপায়া বার্মার করদ রাজ্যে পরিনত করেন। এসম্পর্কিত বিস্তারিত পাবেন এখানে।
৭ম-৮ম শতাব্দিতে আরব মুসলমান এবং আরাকানীদের সংমিশ্রনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উদ্ভব। পরবর্তীতে চাঁটগাইয়া, আরাকানী, রাখাইন, বার্মিজ, বাঙ্গালী, ভারতীয় ইত্যাদি মানুষের সংমিশ্রনে এই শংকর গোষ্ঠী ১৩শ-১৪শ শতাব্দিতে পূর্নাঙ্গ জাতি রুপে আত্মপ্রকাশ করে। মায়ানমার সরকারের দাবী রোহিঙ্গারা ভারতীয়, বাঙ্গালী, চাঁগাইয়া সেটেলার যাদের এই অঞ্চলে এনেছিলো ব্রিটিশরা। অথচ ঐতিহাসিক সত্য হলো ব্রিটিশরা বার্মা দখল করার কয়েক শতাব্দী আগে থেকেই রোহিঙ্গারা জাতি হিসেবে বিকশিত হয়েছিলো। পূরো লেখাটি পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
১৪৩০ সালে আরাকানে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসন দুইশ বছরেরও অধিককাল স্থায়ী হয়। এই উপমহাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সর্বপ্রথম যে কয়টি এলাকায় মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে; এমনকি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়; আরাকান তার মধ্যে অন্যতম। রোহিঙ্গারা সেই আরাকানি মুসলমানের বংশধর। আর ঐ মধ্যযুগেই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আলাওল-আরাকান রাজসভায় অমাত্য (মন্ত্রী) হিসেবে স্থান পান। তিনি পদ্মাবতী, সয়ফুলমুলুক ও বদিউজ্জামালসহ আরো বেশকিছু কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন। এখানে পূরো লেখাটি পড়তে পারবেন।
সুতরাং বার্মা / মিয়ানমার সরকার কিসের ভিত্তিতে দাবী করে এইসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে যাও সেটেলার ? কেবল ভাষাগত মিল থাকার কারণ যদি হয় এই দাবীর মূল, তাহলে তা সম্পূর্ণ অসার।
আজ এই পর্যন্তই। ভাল থাকবেন সবাই।
Photo by Adrien Taylor on Unsplash
ফেসবুক মন্তব্য