আজ লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিন শেষ হলো। কিন্তু এই লকডাউন আসলে কতটুকু সফল বা অসফল তা এখনই বুঝা যাচ৭্ছে না। সামনে আরো এক সপ্তাহের লকডাউন আসছে। আমি এই ৬দিনে একবারও বের হইনি। বাসার বারান্দা থেকে যতটুকু দেখা যায় লোকজন গাড়ী রাস্তায় ছিলো। তবে এগুলো ছিলো গলি / সেক্টরের ভিতরের রাস্তা। মেইনরোডের অবস্থা তো টিভি’তেই দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ অবশ্য নানা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও আপডেট করছেন। আশা করা হয়েছিলো সবাই কেবল প্রয়োজনেই ঘর থেকে বের হবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে অনেকে হয়তো (?) ঘোরার মুড নিয়েও বের হচ্ছেন। যেমন সেদিন অনলাইন পত্রিকায় এলো জনৈক ভদ্রলোক শিং মাছ কেনার জন্য উত্তরা থেকে মালিবাগ যাচ্ছিলেন মোটর সাইকেলে করে। কর্তব্যরত ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। আবার ডাক্তার সহ স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত লোকজনকেও জরিমানা করা হচ্ছে। এটা নিয়ে ফেসবুক বেশ গরম ছিলো / আছে কয়েকদিন।
আমার নিজেরও হয়তো কয়েকদিনের মধ্যে বের হতে হবে। আব্বার কিছু ঔষধ শেষ হওয়ার পথে। আমি এক সপ্তাহের হিসাব করে কিনেছিলাম। এদিকে আবার প্রতিদিন সকাল বেলা তার ব্লাডসুগার লেভেল বেশ কমে যাচ্ছে। কি করবো বুঝতেছিনা। আপাতত গ্লুকোজ কিনে রাখতে চাচ্ছি। যাতে প্রয়োজনে সেটা দেয়া যায়। আমি দুই দিন তাকে গ্লুকোজ ট্যাবলেট দিয়েছি। এগুলো বাংলাদেশে পাওয়া যায় কিনা জানি না, এক প্রবাসি কাজিন বিদেশ থেকে এনে দিয়েছিলেন। বিকল্প হলো চকলেট।
কঠোর ধকডাউনের ব্যাপারে সরকারের হয়তো কিছু সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক ছিলো, যেমন বেসরকারী অফিস / ব্যাংক খোলা কিন্তু জনপরিবহন বন্ধ। এর আগে মার্কেট ইত্যাদি খুলে রেখে লকডাউন দেয়া হয়েছিলো। দেখা গেছে লোকজন রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে কেনাকাটা করছে। মনে হচ্ছিলো এটাই তাদের জীবনের শেষ কেনাকাটা। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। করোনা আরো ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে, আজ মৃত্যুর সংখ্য ১১২ জন। তারপরও লোকজনের হুঁশ আদৌ হয়েছে বলে মনে হয় না। এদিকে স্বল্প আয়ের লোকজন আছে সমস্যায়। কাজে বের হতে না পারলে না খেয়ে মরবে, আবার বের হলে করোনা হয়ে মরার সূযোগও বেশী। আমাদের হয়তো ইউরোপ-আমেরিকানদের মতো জনে জনে সাহায্য দিয়ে বেশী দিন চলার মতো অবস্থা নেই। এই দোটানায় হয়তো লকডাউনের অবস্থা ছন্নছাড়া।
শেষ করছি ফেসবুকে একজনের ষ্ট্যাটাস দিয়ে
“এসব হাস্যকর বানিয়ে ফেলা লকডাউন বন্ধ করলেই ভালো। ইচ্ছা হলে কার্ফিউ দেন।
একটা নির্দিষ্ট ইঞ্জেকশান সিরিঞ্জ খুজে না পেয়ে দুই কিলোমিটার হাটতে হলো। গলিতে গলিতে ছেলেপেলের ধুন্ধুমার আড্ডা। মাস্ক থুতনিতে ; গলাগলি। দোকানদার ও বিরক্ত – যারা কিনতে আসে কিনেই চলে যায় ; জানালেন। মাঝে একবার হাতিরঝিল পুলিশের গাড়ি আসলো – আড্ডাবাজদের হুড়োহুড়িতে পারলে আমাদের চাপা দিয়ে দেয়।
অনেকে্ই আশা করছে মে মাস শেষে হয়তো অবস্থার উন্নতি হবে। আমিও করছি। তবে সবাই মিলে মাস্ক ব্যবহার, কিছুক্ষণ পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া আর সামিজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে সে আশায় গুড়ে বালি।
ফেসবুক মন্তব্য