প্রথম কয়েক বছর বিবিসি, ভোয়া সহ বিদেশী রেডিও ষ্টেশনের বাংলা সার্ভিস আর লোকাল মিডিয়াম ওয়েভ ষ্টেশন ছাড়া আর তেমন কিছু শুনি নাই। বিবিসি, ভোয়া শুনতে গিয়ে আবিস্কার করলাম তারা শ্রোতাদের চিঠিপত্রে উত্তর দেন এবং নানা উপহার পাঠান। শান্তিনগর পোষ্ট অফিস খূব বেশী দূরে ছিলো না বাসা থেকে। একদিন সাহস করে কয়েকটা চিঠি লিখেই ফেললাম এবং পোষ্ট করে দিলাম। এরপর শুরু হলো অপেক্ষার পালা। কিন্তু অনুষ্ঠানে চিঠির জবাব তো পাই না। হঠাৎ একদিন বাসায় দেখি বিবিসি’র অনুষ্ঠানসূচি এসে হাজির। আমার আগ্রহ আরো বেড়ে গেলো।
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আরো কিছুটা স্বাধীনতা পেলাম বাইরে ঘোরাঘুরি করার। একদিন ভোয়ার এক অনুষ্ঠানে শুনলাম বাংলা সার্ভিসের কয়েকজন প্রেজেন্টার ঢাকায় আসছেন এবং তারা শ্রোতাদের সাথে মত বিনিময় করবেন। তখন ইউএসআইএস এর বাই সেন্টেনিয়াল হল ছিলো পূরানা পল্টনে, এখন যেখানে হোটেল প্রীতম। যথা সময়ে হাজির হয়ে গেলাম। কে এসেছিলেন ঠিক মনে নেই, তবে এরকম মত বিনিময় অনুষ্ঠানে রোকেয়া হায়দার, মাসুমা খাতুন সহ আরো বেশ কয়েকজনের দেখা পেয়েছিলাম। আর এসব অনুষ্ঠান আয়োজনে ইউএসআইএস এর সাথে সহযোগীতা করতো ভোয়া ফ্যান ক্লাব। আর ভোয়া ফ্যান ক্লাবের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন আকবর হায়দার কিরণ, এখন যিনি নিউইয়র্কে থাকেন। এসব মত বিনিময় অনুষ্ঠানে আরো একজন’কে পাওয়া যেতো – তিনি ভোয়া বাংলা সার্ভিসের ঢাকাস্থ প্রতিনিধি সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধূরী। এসব অনুষ্ঠানে নানা রকম কথা হতো, বেশীরভাগই হয়তো অনুষ্ঠান নিয়ে। আর অনুষ্ঠান শেষে থাকতো আপ্যায়ন। আর শ্রোতাদের জন্য থাকতো ছোট-খাট উপহার – অনুষ্ঠানসূচি, ক্যালেন্ডার, ষ্টিকার, পোষ্টার, পেনেন্ট ইত্যাদি। এগুলো অবশ্য তারা ডাকযোগেও পাঠাতেন।
কলেজে ভর্তি হওয়ার ফলে এদিক-সেদিক ঘুরতে পারি। একদিন ফুটপাতে দেখি এক লোক ঝাঁকা ভরে হেডফোন বিক্রি করছে। দাম কত ছিলো মনে নেই, তবে কিনতে পারি নাই টাকার জন্য। এরপর কলেজে যাওয়া আসার টাকা আর টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে আরেকদিন গেলাম। কিন্তু খূঁজে আর পাই না। বেশ অনেকদিন পর আবার আরেক জায়গায় দেখি বিক্রি হচ্ছে। সাথে সাথেই কিনে ফেললাম, এবার অবশ্য দাম বেশ কম ছিলো। পরে দেখলাম এগুলি সবই বিমানের, লোগো আছে। হয়তো কোন সমস্যার কারণে বাতিল করে লট হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিলো। আমি অবশ্য হেডফোনে কোন সমস্যা পাই নাই। এই হেডফোনের কারণে আমি রাত ১১টার পরেও রেডিও শোনার সূযোগ পেলাম। কারণ হেডফোন ছাড়া শুনতে গেলে আব্বা-আম্মা কেউ না কেউ বকা দিতো। সেই সাথে শুরু হলো আমার বিদেশী রেডিও ষ্টেশন শোনা, মানে ইংরেজীতে যারা অনুষ্ঠান প্রচার করে।
জানলাম সারা পৃথিবীতেই এই শর্টওয়েভ এ রেডিও শোনা একটা শখ। আর সাধারণভাবে ইংরেজীতে বলে SWLing বা শর্টওয়েভ লিসেনিং। আরো কিছুদিন পর নতুন আরেকটা টার্ম শিখলাম DXing – D হলো ডিসটেন্স বা দূরত্ব / দূর আর X হলো অজানা। ডিএক্সইং এর মানে হলো অজানা দূরত্বের কোন রেডিও ষ্টেশন থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান শোনা এবং সেই ষ্টেশনের আইডি বের করা। ধীরে ধীরে আরো সব বিষয় জানলাম। আর এগুলো সব জানলাম রেডিও শুনতে শুনতেই …
[চলবে]
ছবি : রেডিও থাইল্যান্ড থেকে পাওয়া কিউএসএল কার্ড এর সামনের এবং পিছনের অংশ
ফেসবুক মন্তব্য