আস্তে ধীরে গ্রীষ্মকাল শেষ হয়ে এলো। দিন ছোট আর রাত বড় হতে লাগলো। ষ্টকহোমে এসে দেখেছিলাম ভোর হয় সাড়ে ৩টার দিকে আর রাত হয় ১০টার পরে। পুরো শীতের সময় দেখা গেলো দিন হচ্ছে সাড়ে আটটারও পর, আর রাত হচ্ছে সাড়ে ৩টার দিকে। কোন কোন দিন সূর্যেরও দেখা পাওয়া যেতো না। তবে কাজের সূবিধার জন্য ইউরোপের সব দেশেই সময় গ্রীষ্মকালে এক ঘন্টা পিছিয়ে দেয়া হয় আর শীত কালে এক ঘন্টা এগিয়ে আনা হয়।
পোষ্ট অফিসের লোকজন অবশ্য আমাকে আগে থেকেই এই সময় পরিবর্তনের ব্যাপারটি মনে করিয়ে দিয়েছিলো। আমি অবশ্য আগ্রহ বোধ করছিলাম তুষারপাত দেখবো বলে। দেশে থাকতে অবশ্য ক্লাস টেনে পড়ার সময় একবার ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছিলাম। ক্লাস চলাকালিন সময়েই বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর সেই শিলাবৃষ্টি। মোটামুটি টেনিস বল সাইজের সব শিলা সেদিন পরেছিলো। পরে অবশ্য এই ধরণের শিলাবৃষ্টি আরো বার তিনেক দেখেছিলাম। তুষারপাতের সাথে শিলাবৃষ্টির সম্পর্ক কি ? দুটোই আকাশ থেকে পরে, আর কিছুই না। কিন্তু ষ্টকহোমে সেই ১৯৮৯ সালে শীতের শুরুতে যখন তুষারপাত দেখবো বলে অপেক্ষা করছিলাম তখন বার বারই ঘুরে ফিরে সেই ১৯৮০ সালের সেই ভয়াবহ শিলাবৃষ্টির কথা মনে হচ্ছিলো। এমন কি টিভি শো’তেও তুষারপাত দেখেছি কিনা মনে করতে পারছিলাম না। তবে তুষারপাতের পর সাদা হয়ে যাওয়া জনপদের ছবি বা ভিডিও দেখেছি।
আমি নিজে তো বটেই, পোষ্ট অফিসের লোকজনও আমাকে তুষারপাত সম্পর্কে নানা খবরাখবর দিচ্ছিলো। এরকমই একদিন আলাপে জিজ্ঞেস করে ফেললাম তুষার এর সাইজ কেমন। সবাই বুঝলো এই ব্যাপারে আমি বিশেষ অজ্ঞ। ক্রিষ্টিনা জিজ্ঞেস করেই ফেললো তোমার ধারণা বলো, কতটুকু হতে পারে। আমি যথারীতি সেই ভয়াবহ সেই শিলাবৃষ্টির গল্প বললাম। এরপর সবার হাসি দেখে বুঝলাম বোকার মতো গল্প ফেঁদে বসেছি। ক্রিষ্টিনা হাসতে হাসতেই বললো তাহলে তোমাকে এখন আর সাইজ সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। তুমি নিজের চোখেই দেখো, তারপর আমরা আরেকবার এ নিয়ে কথা বললো। বললাম তথাস্তু।
একদিন কাজ সেরে বের হবো ক্রিষ্টিনা তার রুম থেকে জোরে ডাক দিয়ে বললো আজ খেয়াল রেখো। যে কোন সময় তুষারপাত হতে পারে। আবহাওয়ার খবরে বলছে। কাজ শেষে আমি সেন্টাল ষ্টেশনে গিয়ে বার্গার খেলাম একটা। তারপর উদ্দেশ্যহীন হাটতে বের হলাম। কিছুক্ষণ পর মনে হলো ভেজা ভেজা লাগছে, বৃষ্টি হচ্ছে নাকি। আর তখনই মনে পড়লো তুষারপাত !!! ছোট ছোট তুষার কনা পরছে, জ্যাকেটের উপর পরে গলে যাচ্ছে। এবার দাড়িয়ে চারিদিকে ভালমতো তাকালাম। কয় মিনিট দাড়িয়ে ছিলাম মনে নেই। কেবল মনে আছে চোখের সামনে একটা রঙ্গিন ছবি ধীরে ধীরে সাদা হয়ে যাচ্ছে। পরদিন সকালে আলো ফোটার পর যেদিকে তাকাই কেবল সাদা আর সাদা। পোষ্ট অফিসে ক্রিষ্টিনা আমাকে দেখেই বললো কেমন লাগলো তুষারপাত। বললাম এতো ছোট সাইজ আশা করি নাই। ক্রিষ্টিনা হাসতে হাসতে বললো তোমার সেই টেনিস বল সাইজের কিছু পরলে তো মানুষ আর বাঁচতো না, ঘর-বাড়ি আর গাড়ীও ভাঙ্গতো নির্ঘাত। আমিও সায় দিলাম। গল্পে যে পেঁজা তুলোর মতো নরম তুষারের কথা পড়েছিলাম সেটা কেন মনে পরে নাই তাই ভাবছিলাম।
ক্রিষ্টিনা শেষে বললো যে তুষার কণা আর কিছুই না জাষ্ট জমে যাও্য়া বৃষ্টির ফোটা।
ফেসবুক মন্তব্য