বেইলী স্কয়ারে থাকতে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত গণপরিবহন ছিলো ৬ নাম্বার বাস। পরে অবশ্য ‘মুড়ির টিন খ্যাত’ ২ নাম্বার বাসেও যাতায়াত করতে হয়েছে। ফার্মগেট, মহাখালী, গুলিস্থান যেদিকেই যাই মগবাজার বা মালিবাগ থেকে ৬ নাম্বার বাসে উঠতাম।
তখন ফার্মগেট পর্যন্ত ভাড়া ছিলো মনে হয় ৫০ পয়সা। পরে আস্তে আস্তে বেড়েছে। ৬ নাম্বার বাসের দু’টো বিষয় খূব নজর কেড়েছিলো সেসময়। প্রথমটি ছিলো ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, হেলপারদের কাজের সময়। প্রতিটি বাসেই ২ সেট ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, হেলপার থাকতো। তাদের কাজ শুরু হতো মূলত দূপুর থেকে। দূপুর থেকে রাত, আবার পরদিন সকাল থেকে দূপুর – এই হলো একদলের কাজের সময়। অন্যদল আবার এক দূপুর থেকে শুরু করে পরদিন দূপুর পর্যন্ত। চমৎকার না ? সবারই গোসল খাওয়া এবং বিশ্রামের সূযোগ থাকছে। সরকারী অফিস / ব্যাংকে কোন কাজ থাকলে দূপুরের আগেই করে ফেলতে পারছে।
আরেকটি বিষয় ছিলো ঈদের সময়। সেদিন দূপুর পর্যন্ত তারা কোন ভাড়া নিতো না। আমি ২/১ বার জোর করে দেয়ার চেষ্টা করেও পারি নাই। তাদের কথা হলো সব সময়ও আপনারাই দেন, একদিন না হয় আমরা বিনা পয়সায় আপনাদের নিলাম। এখনও এই নিয়ম আছে কিনা আমার জানা নাই।
বাংলাদেশে সাধারণত হেলপার থেকে কন্ডাকটার, তারপর ড্রাইভার হয়। বেশ অনেক বছরের কষ্টকর সাধনার পরই একজন ড্রাইভার হয়ে বের হতে পারে। আগে তো নকল ড্রাইভিং লাইসেন্স খূব সহজেই পাওয়া যেতো। তাই হেলপার / কন্ডাক্টরের ড্রা্ইভার হওয়া লাইসেন্সের উপর নির্ভরশীল ছিলো না। ছিলো বড় ড্রাঈভার আর মালিকের ইচ্ছার উপর। সেই সাথে ট্রেড ইউনিয়নেরও হয়তো ভূমিকা ছিলো।
৬ নাম্বার রুটে একজন বেশ বয়স্ক কন্ডাক্টর পেয়েছিলাম। তাকে একদিন জিজ্ঞেসও করেছিলাম সে ড্রাইভার হয়নি কেন। সে হাসতে হাসতে বলে ‘আমার রাশিতে ড্রাইভারি নাই’। পরে অবশ্য বলেছিলো এক আধবার চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু মাথা আউলিয়ে যায় বলে ড্রাইভার কেবল বকা দিতো। শেষে সে নিজেই ঠিক করেছিলো ড্রা।িভিং এর জন্য আর পন্ডশ্রম করবে না। তার কন্ডাক্টরই ভাল।
আজ এপর্যন্তই। ভাল থাকবেন।
ফেসবুক মন্তব্য