কম্পিউটার সমস্যা

যন্ত্র থাকলে যন্ত্রনা থাকবে, এটা খূবই স্বাভাবিক। কম্পিউটার নিয়ে নানারকম সমস্যা মাঝে মধ্যেই হয়। আমি খূব সম্ভবত ১৯৯২ সালের দিকে প্রথম কম্পিউটার কিনি, সেকেন্ডহ্যান্ড ডেস্কটপ। সেটি ছিলো ৮০৮৮ মডেলের, কোন হার্ডডিস্ক ছাড়া। অপারেটিং সিস্টেম আর অন্য প্রোগ্রাম সব থাকতো ফ্লপিডিস্কে। তখন ছিলো ডস আর উইন্ডোজ ৩.১ এর যুগ। একে তো সেকেন্ডহ্যান্ড তারপর হার্ডডিস্ক ছাড়া, সেই কম্পিউটার নিয়ে নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সেগুলো নানা ভাবে সমাধান করতে হয়েছে। দোকানে নিয়ে গেলে ব্যাপকব বিপাকে পড়তে হতো। তাদের ভাষ্য ছিলো এটা ফেলে নতুন একটা নেন। চাইলেই কি আর সেটা সম্ভব। শেষ পর্যন্ত দোকানের ভরষায় না থেকে নিজেই টুকটাক সমাধানের চেষ্টা শুরু করতে হয়েছিলো। এ ব্যাপারে অবশ্য এক বন্ধু যথেষ্ঠ সাহায্য করতো এবং এখনও করে। এক সময় আবিস্কার করলাম ডেস্কটপ কম্পিউটার এ আসলে হার্ডওয়্যারগত সমস্যা খূব একটা নাই। বেশীরভাগই সফটওয়্যার এর। হার্ডওয়্যার যে সব সমস্যা হয় সেখানে ফল্টি পার্টসটি পাল্টে ফেলাটাই সহজ সমাধান। আর একটু সাহস করে কম্পিউটার খুলে এর পেরিফেরিয়ালসগুলো চিনে নিলে এগুলো খোলা আর লাগানো কোন ব্যাপারই না। আর এখন তো ইন্টারনেট এ প্রচুর রিসোর্স আছে।

তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কি কারণে সমস্যা হয়েছিলো সেটা আর খূঁজে পাওয়া যায় না। হয়তো কম্পিউটার এর সুইচ অন করেছি, কম্পিউটার ষ্টার্ট হচ্ছে না। ৯৯% ক্ষেত্রে দেখা যাবে সব কিছু খুলে ঝেঁঢ়ে-মুছে পরিস্কার করে আবার ঠিকঠাক মতো লাগালেই কম্পিউটার আবার আগের মতোই সচল হয়ে যায়। বাকি ১% ক্ষেত্রে হয়তো কোন পেরিফেরিয়াল হয়তো নষ্ট হওয়ার কারণে কম্পিউটার অচল হয়ে পরে।

গত পরশুদিন সারা সকাল ধরে উডেমি থেকে বেশ কিছু ভিডিও টিউটোরিয়াল ডাউনলোড করেছি। রাত্রে আবার যখন কম্পিউটার অন করলাম, সবকিছু চালু হলো। কিন্তু মনিটরে কোন কিছু শো করলো না। খেয়াল করে দেখলাম ষ্টার্ট / রিষ্টার্ট যাই করি বুট হওয়ার সময় যে বিপ করে সেটা করছিলো না। মানে বুটিং পর্যন্ত যাচ্ছিলো না। বায়োসও এক্সেস করা যাচ্ছিলো না। এরকম সমস্যা অবশ্য গত কিছুদিন থেকেই হচ্ছিলো রিষ্টার্ট এর সময়। হয়তো উইন্ডোজ আপডেট করার পর রিষ্টার্ট দিতে বলছে, কিন্তু রিষ্টার্ট এর পর আর বুট হচ্ছিলো না। সহজ সমাধান ছিলো শাটডাউন করা এবং কিছুক্ষণ পর আবার অন করা। সাথে সাথে অন করলে একই সমস্যা হতো। সবকিছুই চলছে, কিন্তু বুট হয় না।

পরশু রাতেই কম্পিউটার খুলে ফেলেছিলাম। প্রসেসরের উপর যে হিটসিংক থাকে, সেটার পাশ দিয়ে দেখলাম থার্মাল পেষ্ট বের হয়ে পিনের কাছাকাছি লেগে আছে। বুঝতে পারছিলাম না পেষ্টের কারণে শর্ট সার্কিট হয়েছে কিনা। উপকারী বন্ধু জানালো পেষ্টের কারণে শর্ট সার্কিট হওয়ার সম্ভাবনা নাই। তাহলে …

সেদিন রাত্রে আর কিছু করলাম না। পরদিন খুলে রাখা সব কিছু পরিস্কার করলাম। প্রসেসরের যে সব জায়গায় থার্মাল পেষ্ট লেগেছিলো সেগুলো হেক্সিসল দিয়ে পরিস্কার করলাম। হিটসিংকও পরিস্কার করলাম। সব কানেকশন খুলে ধূলো পরিস্কার করলাম। নতুন করে থার্মাল পেষ্ট দিয়ে হিটসিঙ্ক বসালাম। সন্ধার পর আবার সব জায়গা মতো লাগিয়ে পাওয়ার দিলাম। বিপ করে আওয়াজ দিলো। কি একটা শান্তি।

এরপর সবকিছুর কানেকশন দিয়ে আবার চালু করলাম। সব ঠিক আছে। তাহলে সমস্যা কি ছিলো ? আমি এখনও জানি না আসলে কি হয়েছিলো। তবে ধারণা করছি পাওয়ার এবং অতিরিক্ত গরম হওয়া জনিত কোন সমস্যা ছিলো। পাওয়ার সাপ্লাই হিসেবে কোর্সেয়ার এর ৪৫০ ওয়াট পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করি।  এটাতে সহজে সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে আমার ইউএসবি রিলেটেড প্রচুর জিনিসপত্র আছে, সেগুলো কানেক্ট করাই থাকে ব্যবহার হোক আর না হোক। পরশু দিন কয়েকটি ইউএসবি পোর্ট খালি করার জন্য একটা হাব লাগিয়েছিলাম। পরে পরীক্ষা করে দেখলাম সেই হাব লাগালে আর বুট করে না। সাথে প্রসেসর এর ফ্যানও জোরে ঘোরা শুরু করে। হয়তো এই হাব দিয়ে পাওয়ার বেশী টানছিলো, সাথে প্রসেসরও গরম হচ্ছিলো বেশী। আপাতত সেই হাব এবং যেসব জিনিস ব্যবহার করছি না, সেগুলো খুলে রাখছি। কেবল কিবোর্ড আর মাউস, সাথে ওয়াইফাই এবং ব্লুটুথ ডঙ্গল লাগানো হয়েছে। একটা কমদামি গ্রাফিক্স কার্ড লাগানো ছিলো, সেটাও খুলে ফেলে এএমডি রাইজেন এর এপিইউ এর উপর গ্রাফিক্স এর দায়িত্ব আপাতত ছেড়ে দিয়েছি।

আপাতত আরও কিছুদিন এভাবে চালাবো। অন্য কোন সমস্যা হয় কিনা দেখার চেষ্টা করবো। করোনা ময় এই সময়ে যে বিশাল এক খরচ এর হাত থেকে বেঁচে গেলাম সেটা চিন্তা করলেও ভাল লাগছে। পুরাতন একটা ল্যাপটপ আছে, সেটাও আপাতত ব্যবহার করবো নিয়মিত। গতকাল ক্যামেরা এই ল্যাপটপের সাথে টিথার (Tether)) করে ব্যবহার করলাম। যেসব ক্যামেরায় আর্টিকুলেটেড স্ক্রিন নেই, সেগুলো ঘরে বা ষ্টুডিও’তে ব্যবহার করার জন্য এই পদ্ধতি অনেক ভাল।

আপাতত এই পর্যন্তই। ঘরে থাকুন, ভাল থাকুন।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।