রান্নাবান্না কিছু শেখা দরকার মনে হয়। সারা জীবন কেবল অন্যের রান্না করা খাবার খেয়েই গেলাম। এটলিষ্ট বেসিক রান্না সব ছেলেদেরই শেখা উচিত, যেমন – ভাত, ডাল, ভর্তা-ভাজি, সাধারণ মাছ-মাংস এসব। বাইরের দুনিয়ায় ক্যাম্পিং ইত্যাদির সুবাদে সবাই কম-বেশী রান্না শিখে যায়। ওরা তো সেই কুটিকাল থেকেই ক্যাম্পিং এ যায়। আর মোটামুটি সবাই ১৮ বছর পার হলে নিজের মতো করে থাকতে শুরু করে।
আমার সাথে অবশ্য রান্নাবান্নার সম্পর্ক মাত্র ২/৩ বারের। তাও ভাত রান্না, যদি সেটাকে কেউ রান্নার পর্যায়ে ফেলে। এখন অবশ্য নিয়মিত পানি সিদ্ধ করি। সেই ভাত রান্নার প্রয়োজন হয়েছিলো হঠাৎ করেই। স্বল্পকালীন প্রবাসে বাসার সবাই বাইরে ঘুরতে যাবে। বাসায় থাকবো কেবল আমি আর এক কাজিন। আমার কাজ দুপুর ২টা পর্যন্ত। কাজিন তার ক্লাস শেষ করে বাসায় আসে রাত্রে। দুই ভাবী মিলে প্রয়োজনীয় রান্না করে ফ্রিজে রেখে দিয়েছেন। আমাদের কেবল ভাত রান্না করতে হবে। কাজিন অবশ্য টুকটাক রান্না পারে। আমি ইচ্ছে করলে দুপুরে বার্গার বা হটডগ খেতে পারতাম। কিন্তু সেসময় মনে হয়েছিলো, চেষ্টা তো করতে পারি। বড় খালা অবশ্য বলে দিয়েছিলেন কি ভাবে কি করতে হবে। তারপরও দেখা গেলে ভাত কিঞ্চিত নরম হয়ে জট পাকিয়ে আছে। তারপরও নিজের রান্না করা ভাত বলে সেটাই অমৃত সমান মনে হয়েছিলো। সেসময় মাইক্রোওয়েভ ওভেন বাসায় ছিলো বলে রক্ষা, চুলায় তরকারী গরম করতে হলে সেটা নির্ঘাত পুড়িয়ে ফেলতাম। রাত্রে অবশ্য ভাত রান্না কাজিনই করতো।
আমার বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে অনেকেই ভাল মতোই রান্না করতে পারে, বেসিক রান্না অবশ্য। তাদের মধ্যে কিছু আছে হলে বা মেসে থেকে রান্না শিখেছে। কেউ প্রবাস জীবনে শিখেছে। আবার কেউবা শখের বসে এক-আধটু পারে। আম্মা, বোন এবং ভাগ্নিরা বা ভাগ্নে বউ থাকায় আমার আর রান্না করা কোন প্রয়োজনই পরে না। আমি কেবল খাই। ছোট ভাগ্নি’কে দেখতাম বাসার রান্না পছন্দ না হলে নিজেই রান্নাঘরে গিয়ে নিজের মতো কিছু একটা বানিয়ে খেতো। আমার সেরকম শখ হলে বাইরে যেয়ে কোন রেস্তোরায় খাওয়া ছাড়া গতি নেই। বগুড়ার এক বন্ধু ছোট ভাই সহ জাহানারা গার্ডেনে থাকতো। সেখানে গেলে দেখতাম দুই ভাই টুকটাক রান্না করে। ওদের রান্না অবশ্য ভালই ছিলো, আমি কয়েকবারই খেয়েছি।
ঘটনা হলো সেদিন আব্বা ঘুম থেকে উঠার পর দেখি বাসার সবাই ঘুমিয়ে আছে। সাধারণত আব্বার খাবার দাবার বোনই ঠিক করে সামনে দেয়। রাত জাগার কারণেই হয়তো সেদিন গভীর ঘুমে। ভাগ্নী বড়জন বাবার বাড়িতে আসছে, সেও ঘুমে। বুয়া অবশ্য সকালে রুটি-ভাজি তৈরী করে রেখে গেছে। বোন সাধারনত রুটি-ভাজির সাথে ডিম পোঁচ, ভাজি নয়তো সিদ্ধ করে দেয়। ঠিক করলাম সিদ্ধ করেই দিব, কারণ পানি সিদ্ধ করার অভিজ্ঞতা আছেই। সমস্যা বাধলো কয় মিনিট সিদ্ধ করবো এটা নিয়ে – কিছুতেই মনে করতে পারলাম না। শেষ ভরসা গুগল … শেষ পর্যন্ত গুগল মামাই রক্ষা করলো এযাত্রা। শেষ পর্যন্ত ঠিকমতো ডিম সিদ্ধ করে আব্বার নাস্তা নিয়ে সামনে দিলাম। পরে জিজ্ঞাসা করায় বললো সিদ্ধ ঠিকমতোই হয়েছিলো।
তখন থেকেই রান্নার বিষয় মাথায় ঘুরছে। বোনের এই বাসা ডুপ্লেক্স। দোতালায় একটা এক্সট্রা রান্নাঘর আছে, সেটা কেবল প্রয়োজনেই ব্যবহার করা হয়, তবে নিয়মিত পানি সিদ্ধ করা হয়। কেবল পানির জন্য আবার কে একতলায় যাবে। এখানে ইচ্ছে করলে টুকটাক রান্না করাই যায়। আর ইউটিউবে প্রচুর রান্নার চ্যানেল আছে, বাঙ্গালী মহিলারাই সেগুলো চালান। সুতরাং চিন্তা কি !!!
ফেসবুক মন্তব্য