আমি সুইডেন থেকে চলে আসি ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারীতে। সে সময় থেকে মিনোল্টা ক্যামেরা বেশ ভালই ব্যবহার হয়েছে। তবে ফটোগ্রাফি বলতে আসলে যা বুঝায় সেটা হয়নি, কারণ এই ক্যামেরা ছিলো কম্প্যাক্ট অটোফোকাস ফিল্ম ক্যামেরা। সব কিছুই ছিলো অটো। পূরো ক্যামেরায় একটি মাত্র বাটন, শাটার বাটন। আর সেটা টিপলেই ছবি উঠতো। আমি নিজে ফিল্ম কিনে যতোটা ব্যবহার করেছি তার চেয়ে বেশী ব্যবহার করা হয়ে বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয়-স্বজনদের প্রয়োজনে। ২/৩টি বিয়ের প্রোগ্রাম মনে হয় এই ক্যামেরা দিয়েই কাভার করা হয়েছিলো। তবে একসময় এর ব্যবহার সীমিত হয়ে যায়। কারণ আর কিছু না, অর্থনৈতিক। দীর্ঘদিন বেকার ছিলাম। সেসময় আয়ের একমাত্র উৎস ছিলো টিউশনি। ফিল্মের দাম খূব বেশী ছিলো না হয়তো (মোটামুটি ৮০-১২০ টাকায় ফিল্ম কিনতাম), কিন্তু প্রসেসিং করে ছবি প্রিন্ট করাটাই ছিলো খরচের। সব মিলিয়ে ৩৫০-৪০০ টাকার ধাক্কা। বেকার জীবনে তখন অনেক টাকা। অনেক কাল পরে মোহাম্মদপুর থেকে উত্তরায় বাসা শিফট করার সময় ক্যামেরা কেমন করে যেন ভেঙ্গে গিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত পুরাতন জিনিসপত্রের সাথে ভাঙ্গারীওয়ালার কাছে চলে গিয়েছিলো।
এরপরের ক্যামেরা ছিলো ডিজিটাল ক্যামেরা। এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিলো শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের একজন কম্পিউটার ব্যবসায়ীর সাথে। কাল পরিক্রমায় তার সাথেও ভাল বন্ধুত্ব তৈরী হয়ে গিয়েছিলো এবং এখনও সেটা অব্যাহত আছে। যদিও মাঝে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি এখন আর কম্পিউটারের ব্যবসা করেন না। সে সময় কম্পিউটার সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে তার দারস্থ হতাম। সাল মনে নেই, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে তার দোকানে একদিন হাজির হলাম। উদ্দেশ্য বাজারে সদ্য আসা মারকারি ডিজিক্যাম কাম ওয়েবক্যাম কেনা। সেসময় দাম ছিলো ৩৫০০ টাকা। খূব সম্ভবত ২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ছিলো সেটা। ইউএসবি দিয়ে কম্পিউটারে কানেক্ট করে ওয়েবক্যাম হিসাবে ব্যবহার করা যেতো। আর এমনিতে ডিজিটাল ক্যামেরা। বিল্টইন মেমরি ছিলো, তাতে বেষ্ট কোয়ালিটির ২৭টি ছবি সংরক্ষণ করা যেতো। কোন মেমোরি কার্ড ব্যবহারের সূযোগ ছিলো না। সেটা বেশ কিছুদিন ব্যবহার করেছিলাম।
এরপরের ডিজিটাল ক্যামেরা ছিলো ৭ মেগা পিক্সেলের। তখন ইন্টারনেট ব্যবহার করি, যদিও শম্বুক গতি ছিলো নেটের। নেটেই পরিচয় হয়েছিলো একজনের সাথে, তার বোনের জামাই আবার ফটোগ্রাফার। ‘ম্যাপ’ নামের এক ফটো এজেন্সির সাথে যুক্ত ছিলেন ভদ্রলোক। তার সাথে আলাপ হওয়ার পর এবং তার এবং অন্যান্যদের তোলা ছবি নেটে দেখে আবারও নতুন করে আরেকটু ভাল মানের ক্যামেরা কেনার আগ্রহ তৈরী হতে শুরু করলো। ভদ্রলোক’কে একদিন আমার বাজেট জানিয়ে অনুরোধ করলাম একটি ডিজিটাল ক্যামেরা কিনে দেয়ার, যেহেতু এই বিষয়ে তার ভাল জ্ঞান আছে। আমার বাজেট ছিলো মনে হয় ১৫ হাজার টাকা। তিনি একদিন জানালেন ক্যামেরা কেনা হয়েছে। সাল ছিলো ২০০৭ সাল। আমি গিয়ে কালেক্ট করে আনলাম Sony Cybershot DSC S650 ক্যামেরা। ৭ মেগাপিক্সেল, ৩ এক্স অপটিক্যাল জুম। এই ক্যামেরা কেনার পরপরই বলা চলে ব্লগিংও শুরু হলো। সামহোয়্যার ইন ব্লগ তখন সদ্য জন্ম নেয়া বাংলা কমিউনিটি ব্লগ। সেই পুরাতন বন্ধুর মাধ্যমেই এই ব্লগের সাথে পরিচয়। শুরুতে কেবল পড়তাম। একদিন মনে হলো আমিও তো শুরু করতে পারি। সেসময় কেন জানি মনে হয়েছিলো ছদ্মনাম ব্যবহার করাটাই ভাল হবে, যদিও অনেকেই স্বনামেই ব্লগিং করতেন সামু ব্লগে। যাই হোক, ছদ্মনাম পছন্দ করতে গিয়ে পড়লাম মহা ফ্যাঁসাদে। কোনটাই পছন্দ হয় না। শেষ পর্যন্ত চিন্তা করে দেখলাম যেহেতু আমি ক্যামেরাধারী, তাই আমার ব্লগীয় নাম ক্যামেরাম্যান। ঘাপলা বাঁধলো নতুন একটি ইমেইল এড্রেস খুলতে গিয়ে। নেটের শম্বুক গতির কারণে ইয়াহু’তে কোনভাবেই কোন কাজ করথে পারছিলাম না। বন্ধু শুনে বললো তার অফিসে যেতে। সে আবার টিএন্ডটি’তে চাকরি করে, তাই অফিসে নেট ভাল পায়। সে আমার নামে নতুন এক ইমেইল খুলে সামু ব্লগে একাউন্ট করে দিলো। ফিরে আসার সময় কাগজে সবকিছু লিখে দিয়ে দিলো। বাসায় এসে তো মাথায় হাত। সামু ব্লগে ঠিক মতোই ক্যামেরাম্যান নামে একাউন্ট খুলেছে, কিন্তু ইয়াহু মেলের আইডি দেখে চক্ষু ছানাবড়া। কি আর করা। সেই ইমেইল আইডি নিয়ে অনেক হাসাহাসি হয়েছে অনেক। অনেক পরে সামু ব্লগের আরিল্ড’কে বলে সেটা পরিবর্তন করেছিলাম। কিন্তু কিছুদিন আগে আবার জানলাম সেই মেইল আইডি আবার চলে এসেছে। তাদের সার্ভারের কোন একটি সমস্যায়, কিন্তু অনেক আগেই আমি মেইল আইডিটি মুছে দিয়েছি। অনুরোধ করার পরও সেই ক্যামেরাম্যান ব্লগের লগইন ডিটেইলস আর ফেরত পাই নাই। যদিও আমাকে জানানো হয়েছিলো সেটা দেয়া হবে। কি আর করা।
সনি ক্যামেরা দিয়ে আমি প্রচুর ছবি তুলেছি। যদিও ম্যানুয়াল মোড ছিলো না, তারপরও প্রোগ্রাম মোড ব্যবহার করে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে ছবি তোলার। মূলত এই ক্যামেরা দিয়েই আমার ফটোগ্রাফির হাতেখড়ি। নেট ঘেটে ক্যামেরা সংক্রান্ত সাইট ঘেটে অনেক কিছুই জানতে পারছিলাম। কিন্তু সঠিক ক্যামেরার অভাবে কোন কিছুই কাজে লাগাতে পারছিলাম না। একসময় মনে হলো ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনতেই হবে। শুরু হলো টাকা জমানো।
সব ছবি নেট থেকে নেয়া
ফেসবুক মন্তব্য