সনি ক্যামেরা দিয়ে টুকটাক ছবি তোলা ভালই চলছিলো। সামহোয়্যারইন ব্লগে ব্লগার আড্ডা কিংবা পিকনিকে ছবি তুলছিলাম আর সেই সাথে নেট ঘেটে অনেক বিষয় জানছিলাম। একসময় মনে হলো এই ক্যামেরায় আর চলবে না, ম্যানুয়ালি কন্ট্রোল করা যায় এমন কোন ক্যামেরা কিনতে হবে। প্রথমেই মাথায় আসলো ডিএসএলআর এর কথা, কিন্তু দাম যে অনেক বেশী। এর মধ্যে কেউ কেউ ব্রিজ ক্যামেরা কিনেছে দেখলাম। আইডিবি’তে খূব সম্ভবত ফুজি’র একটি মডেল দেখলাম, পেন্সিল ব্যাটারিতে চলে। দাম এরাউন্ড ১৫ হাজার টাকা। এক আড্ডায় একজনের হাতে সেই ক্যামেরা দেখে বিশেষ আগ্রহী হয়েছিলাম। কিন্তু যিনি কিনেছিলেন তিনি সরাসরি বললেন তার টাকা জলে গেছে। ম্যানুয়াল মোড আছে ঠিকই কিন্তু বাকি সব ভাল না। বিশেষ করে ব্যাটারি নিয়ে যন্ত্রনা হয় বেশী। দেশী ব্যাটারি তো কয়েক স্ন্যাপেই শেষ, এলকালাইন ব্যাটারি হলে মোটামুটি ছবি তোলা যায়। কিন্তু দামে পোষায় না। দমে গেলাম অনেকখানি। ঠিক করলাম ডিএসএলআরই কিনবো, যা থাকে কপালে।
আমি প্রাথমিকভাবে ৪টি ব্র্যান্ড/মডেল ঠিক করেছিলাম বিভিন্ন জনের সাথে আলাপ করে আর বিভিন্ন ওয়েব সাইটে রিভিউ ইত্যাদি দেখে। তবে পছন্দ করার মূল ভিত্তি ছিলো আমার বাজেট আর বাংলাদেশে পাওয়া যাবে এমন সব ক্যামেরা। তবে সমস্যা হলো দু’টোই ছিলো সীমিত। আমার বাজেট ছিলো সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা আর ঢাকার বাজারে ক্যানন-নাইকন ছাড়া আর কোন ব্র্যান্ড সচরাচর পাওয়া যায় না। আমার পছন্দ ছিলো যথাক্রমে ১. নাইকন ডি৩০০০ ২. ক্যানন ইওএস ১০০০ডি ৩. সনি আলফা ২৩০ আর ৪. অলিম্পাস ই৪৫০। এরমধ্যে শেষেরটা আবার মাইক্রো ফোর থার্ডস গোত্রের। কোন এক মেলায় এক ষ্টলে এই মডেল দেখেছিলাম। সেখানে একজনের সাথে আলাপও হয়েছিলো। কথা ছিলো মেলার পরে আমি মতিঝিল থেকে কিনবো এবং আমাকে মেলার স্পেশাল প্রাইস দেয়া হবে। আমি যথা সময়ে একদিন সেই ভদ্রলোককে ফোন করে বললাম আসতেছি, ক্যামেরা রেডি করে রাখে যেন। অফিসের কাছে গিয়ে ফোন দিলাম, কয় তালায় যেতে হবে জানার জন্য। ভদ্রলোক সোজা বলে দিলেন এই মডেল আর নাই, শেষ হয়ে গেছে। আমি পুরো হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। অলিম্পাস বাতিল হয়ে গেলো। তবে সেদিন মনে হয় ঘটনাটি আমার জন্য শাপে-বর হয়েছিলো। এখন মাঝে মধ্যে চিন্তা করি সেদিন অলিম্পাস কিনলে এখন লেন্স পেতাম কোথায় আর অন্যান্য একসেসরিজই বা কোথায় পেতাম।
এরপর চিন্তা করলাম প্রথম ডিএসএলআর কেনা যখন ভেস্তেই গেলো, আরো কিছুদিন অপেক্ষা করি। দাম-টাম যদি কমে কিছু। বিভিন্ন ফ্লিকার গ্রুপে সাজেশন চেয়ে পোষ্ট দিলাম। সেখানে সবাই বললো ক্যানন-নাইকনের বাইরে না যেতে। কারণ খূব স্পষ্ট – লেন্স, একেসেসরিজ সহ আফটার সেলস সার্ভিস এই দুই ব্র্যান্ডেরই আছে দেশে। বাকি সব তথৈবচ অবস্থা। এরপর শুরু হলো বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে দাম এবং ষ্টকে আছে কিনা জানার চেষ্টা করা। এক এক জায়গায় দাম এক এক রকম। কোন কোন ক্ষেত্রে দামের পার্থক্য বেশ প্রকট। কোন কোন ফ্লিকার গ্রুপে আবার সেকেন্ডহ্যান্ড ক্যামেরার অফার দিচ্ছিলো অনেকেই। যেমন নাইকন ডি৩০০০ চাচ্ছিলো ৩০ হাজার টাকা, যেখানে নতুনের দাম ছিলো ৩৩-৩৫ হাজার টাকা। চিন্তা করে দেখলাম ডিএসএলআর ক্যামেরা সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানি না, ৩/৪ হাজার টাকা বাঁচানোর জন্য রিস্ক নেয়া ঠিক হবে না।
সেবার ঈদের কয়েকদিন মাত্র বাকি। ২০১০ সালের আগষ্ট মাসের ২৫ তারিখ চলে গেলাম বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে। তখন এত ক্যামেরার দোকান ছিলো না। কয়েক দোকান ঘুরে দেখলাম। সবাই দাম বলে কিন্তু ক্যামেরা দেখায় না। দেখাতে বললে বলে আপনি কনফার্ম করেন, করলে এনে দিচ্ছি। কি মুশকিল। তবে দাম সবারই এক ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা। মনে হলো ক্যামেরা একজনের কাছেই আছে, তাই দাম একই। কিন্তু কথা হলো কোন সেই দোকান। ফ্লিকারে অনেকেই সাজেশন দিয়েছিলো ক্যামেরা জোন থেকে নেয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত সেখানেই গেলাম। সেখানেও দাম ৩৩,৫০০ টাকা। তবে ক্যামেরা তাদের বায়তুল মোকাররম ব্র্যাঞ্চ থেকে আনাতে হবে। বললাম নিয়ে আসেন। দামের ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত রফা হলো ৩০০ টাকার একটা ইউভি ফিল্টার দিবে ফ্রি। আমি আরো ৫০০ টাকা দিয়ে ১ জিবির একটা মেমোরি কার্ড নিলাম। জীবনের প্রথম ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনা হয়ে গেলো।
বাসায় গিয়ে ক্যামেরা নেড়ে-চেড়ে দেখার সময় সাথের দেয়া সিডি’তে দেখলাম নাইকনের সাইটে প্রোডাক্ট রেজিষ্ট্রেশনের ব্যবস্থা আছে। আর সেই রেজষ্ট্রেশন করার সময় লাগলো বিপত্তি। কিছুতেই রেজিষ্ট্রেশন হয় না। যতবারই সিরিয়াল নাম্বার দেই প্রতিবারই বলে এটা হয়তো গ্রে প্রোডাক্ট। গ্রে প্রোডাক্ট হলো ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আনা প্রোডাক্ট মূলত। তবে পরে জেনেছিলাম কেবল ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আনা না, বাইরের ইউজড প্রোডাক্ট সব কিছু ঘষে মেজে একবারে ঝকঝকে করে শেষমেষ ফার্মওয়্যার রিইনষ্টল করে বাংলাদেশে নতুন বলে চালানো হয়। আবার কেউ বলে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ফেইল করা অনেক প্রোডাক্টই দেশে কম দামে ইম্পোর্ট করে বিক্রি করে। এ তালিকায় কম্পিউটার আইটেম বেশী। এনিয়ে ফ্লিকারের এক গ্রুপে পোষ্ট দিয়েছিলাম। সেখানেও কেউ কেউ হাসাহাসি শুরু করেছিলো।
মনে কিছুটা শংকা নিয়েই নাইকন ডি৩০০০ ক্যামেরা ব্যবহার শুরু করলাম, সাথে লেন্স ১৮-৫৫ মিমি।
ফেসবুক মন্তব্য