সেদিন হঠাৎ ই ফেসবুকে দেখি তপনের ষ্ট্যাটাস। সে নাকি গত আটদিন ধরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। ওর স্ত্রীও নাকি ডেঙ্গু আক্রান্ত। তবে সে বাসায় আছে। তপন আমার প্রায় সমবয়সী চাচাত ভাই, আমার চাইতে একবছরের বড়। গাজীপুর ভাওয়াল কলেজের কৃষিবিজ্ঞানের শিক্ষক।
খবর দেখে সাথে সাথেই ফোন দিলাম। বললো গত ২/৩ দিন নাকি অবস্থা বেশ খারাপ ছিলো। শরীরে এতো প্রচন্ড ব্যথা যে সামান্য মোবাইলও তুলতে পারছিলো না। তবে অন্যান্য কোন সমস্যা নাই। প্লাটিলেট ঠিক আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো ২/১ দিনের মধ্যেই রিলিজ করবে। জিজ্ঞেস করলাম পরিস্থিতি কেমন বোধ করছো। বললো গাজীপুর সদর হাসপাতালে নাকি থাকার মতো পরিবেশ নাই, তাই সরাসরি এখানে চলে এসেছে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও চাপ অনেক। তারপরও সবাই সাধ্যমতো চেষ্টা করছে।
এদিকে সপ্তাহ খানেক আগে আমারও সর্দি জ্বর শুরু হয়েছিলো। প্যারাসিটামল খাওয়ার পর জ্বর চলে গেলো, কিন্তু ঠান্ডা আর যায় না। এর মধ্যে ২দিন আগে আবার জ্বর। প্যারাসিটামল খেলাম। ভোরের দিকে হাত-পা এর তালু মনে হলো জ্বলছে। আর সারা শরীর ম্যাজ ম্যাজ করছে। সময়ের সাথে সাথে সেটাও আস্তে আস্তে কমে এলো। আমি অবশ্য বিভিন্ন জনের কাছে শুনে রীতিমতো জলচিকিৎসা আরম্ভ করে দিয়েছি। প্রচুর পানি পান করছি। সাথে ভিটামিন সি এবং খাওয়ার স্যালাইন।
গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ করে প্রচন্ড জ্বর, সাথে ডায়রিয়া। মনে হলো ডায়রিয়ার কারণেই হয়তো জ্বর এসেছে। প্যারাসিটামল আর খাওয়ার স্যালাইন চলতে থাকলো। রাতে ডিনারের আগেই ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো। তবে সেটা আবার ফিরে এলো রাত ৩টার দিকে। তবে এবার জ্বরের তীব্রতা কম। তিন্তু হাত-পা এর তালুঃতে মনে হয় কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে সারা শরীরে এক ধরণের অস্বস্থি। ভোর হওয়ার পর আস্তে আস্তে সবই কমে এলো।
একসময় মনে হলো তপনের সাথে কথা বলি। ফোন দিলাম। ও তখন বাসায় ফিরে এসেছে। তবে আরো কিছু টেষ্ট করতে হবে। ওর আবার হার্টের কিছু প্রব আছে। একটা রিং লাগানো হয়েছিলো কয়েক বছর আগে। বছর দুই আগে কি এক জটিলতায় মাথায় একটা অপারেশন করতে হয়েছিলো। ফলে তাকে নিয়মিতই ঔষধ খেতে হয়। ডেঙ্গু হওয়ার পর নিয়মিত ওষধগুলি সব বন্ধ করে দিয়েছিলো ডাক্তার। টেষ্ট করলে জানা যাবে সেসব আবার শুরু করতে পারবে কিনা।
কথায় কথায় জানলাম ডায়রিয়া ডেঙ্গু জ্বরের স্বাভাবিক অনুসঙ্গ। সেই সাথে হাড়ের ব্যাথা। আমার অবশ্য হাড়ে কোন ব্যথা নাই। তপন বললো আমি যেন ডেঙ্গুর টেষ্ট করিয়ে ফেলি। এমনিতে চিকিৎসা বলতে তেমন কিছু না। যত পরিমান তরল পান করা যায়, ততো ভাল। হাসপাতালে অবশ্য ওকে আইভি স্যালাইন দিয়েছিলো নিয়মিত।
বাসায় দূঃজন রোগী আছে, আব্বা আর আম্মা। এই অবস্থায় আমি রোগী হলে হয়তো সবারই মানসিক অবস্থা খারাপ হতে পারে। এই চিন্তা করেই আসলে ডাক্তারের কাছে যাই নাই। তবে আজ পাড়ার ডাক্তারের কাছে গেলাম। তিনিও শুনে বললেন ডেঙ্গু নাও হতে পারে। হাড়ের ব্যাথা নাকি মারাত্মক, জ্বর ভাল হলেও এই ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়ার কারণে যে ব্যথা হয় সেটা অনেকদিন থাকে। তার পরামর্শ হলো টেষ্ট ইমিডিয়েটলি করে ফেলেন। তারপর বুঝা যাবে কি করা যায়। প্রেশার ১৪০/৮০, একটু হাই যদিও। ডেঙ্গু টেষ্টের সাথে সিবিসি টেষ্টও করিয়ে ফেলতে বললেন। কাল যাবো টেষ্ট করতে।
সবাই ভাল থাকবেন। নিজের এবং পরিবারের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
আপডেট : ডেঙ্গু টেষ্ট নেগেটিভ। তবে প্লাটিলেট কাউন্ট বেশ কম।
ফেসবুক মন্তব্য