জ্বীন-ভুত

প্যারানরমাল বিষয়টির সাথে প্রথম পরিচয় মনে হয় এক্স ফাইলস এর মাধ্যমে।  কোন এক কালের প্রচন্ড জনপ্রিয় এই সিরিজের বিভিন্ন এপিসোড এখনও নেটে পেলে দেখি আগ্রহ নিয়ে।  আগে হয়তো অনেক কিছু বুঝতাম না, এখন এটলিষ্ট বুঝার চেষ্টা করি।  আমাদের দেশে অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে আমরা জ্বিনের আসর অথবা ধর্মীয় কোন বিষয় দিয়ে সেটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি।  ফলে সেসব ঘটনার কার্যকারণ আর কখনও জানা হয় না।  

আজ ফেসবুক মনে করিয়ে দিলো ২০১৫ সালের এক ষ্ট্যাটাসের কথা।  কোন এক ‘ডেসপারেটলি সিকিং’ গ্রুপে একজন মহিলা পোষ্ট করেছিলেন।  আমি তার পোষ্ট হুবহু কপি-পেষ্ট করলাম। 

ডেস্পারেটলি সিকিং সল্যুশনস
আমার বাসার উপরের তলায় একটা অফিসের মতো ৩-৪টা রুম আছে আর অফিসের ছাদ টিনের চালের।  আমাদের বিল্ডিং এর সব কাজের লোক এবং কেয়ারটেকার (মোট ৩ জন) রাতে সেখানেই ঘুমায়।  কিন্তু অনেক আগে থেকেই সেখানে রাতে টিনের চাল দিয়ে লোকজনের হেটে যাওয়ার শব্দ পাওয়া যায় এবং সাথে ঝড়ের মতো বাতাশ বয়ে যায়। প্রথম প্রথম চোর মনে করে পাহারার ব্যাবস্থা করা হয় কিন্তু দিন দিন ঘটনা আরোও পরিস্কার হতে থাকে যখন আমার ৩জন গৃহকর্মী তাদের অভিজ্ঞতার কথা আমাদের জানিয়ে চলে যায়। কিছুদিন আগে নাকি রাতে একজন তার পাশ দিয়ে অদ্ভুত (!) কাউকে হেটে যেতে দেখেছে। 

হুজুর থেরাপি দেওয়া হয় তারপরেও কোন কাজ হচ্ছে না। ঘটনা সেখানে সীমাবদ্ধ থাকলেও কোন সমস্যা ছিল না। এখন আমার বাসার লিভিং রুমেও একই সমস্যা শুরু হয়েছে।  আমার ছোট বোন বেশ কিছু প্যারা-নরমাল এক্টিভিটি দেখেছে। মাঝে মাঝে আমিও দেখি রাতে কেউ আমাকে দেখছে কিংবা কেউ আমার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে।  উল্লেখ্য এর ফলে এখন পর্যন্ত কারো কোন ক্ষতি হয় নাই এবং আমাদের বাসার পাশেই মসজিদ।  এসব বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষি আমাদের বাসার যারা মেহমান হিসেবে ছিলেন তারাও। 

কারো কাছে কি কোন সল্যুশনস আছে ?

এর পরিপ্রেক্ষিতে যেসব উত্তর এলো তার কয়েকটি নমুনা
কমেন্ট ১. “I know everybody is suffering from different mental illness. My elder sister is a renown psychiatrist. I have already consulted with her regarding this issue. Even she noticed those paranormal activities.
Now tell me…”
কমেন্ট ২. “লোকে বলে আমাদের বাসার পাশে মসজিদ থাকার কারনে অনেক জীন তাহাজ্জুদ এর নামাজ পরতে আসে এবং যাওয়ার সময় আমরা টের পাই।”

তবে সবচাইতে যুক্তিগ্রাহ্য কমেন্ট ছিলো এটি। 
“During the day the house absorbs heat from the sun in the building materials. At night, as it cools down, so does the building materials in your house. If you remember 6th grade science, warm items expand, cool items contract. So during the day your house warms up and some of the materials expand or “puff up”(not by much, but enough to shift them slightly. At night the air cools outside and the building materials start to contract. As they do they start to shift back into their original position. Like earthquakes though they don’t just do so gradually. Pressure builds and then releases all at once in spots. That’s the creaking and snapping you hear. When they talk about the house “settling” they mean it’s settling into it’s original position.”

কমেন্ট ৩ আসলে লজিকাল।  যেহেতু টিনের চাল এবং তারা বেশীর ভাগ সময় টিনের চালের উপর দিয়ে হেটে যাওয়ার শব্দ শুনে, তো রাতের বেলা এমন হতেও পারে। আর অনেক রাত্রে সামান্য শব্দও অনেক জোরে শোনা যায়।  আরেকজন যুক্তি দিয়েছিলো বিড়াল হেটে যাওয়ার।  এটাও হতে পারে। আমার পাশের বিল্ডিং এর চারিদিকের ফাকা যায়গাটা টিনের চাল। । গভীর রাত্রে কারো হেটে যাওয়ার শব্দ শুনে মনে করছিলাম চোর।  পরে আরেকদিন দিনের বেলা একই রকম শব্দ শুনে গিয়ে দেখি বিড়াল হেটে যাচ্ছে।  বিড়ল যখন এই টিনের উপর দৌড়ায়, গভীর রাতে ঘুমের মধ্যে শুনলে ।ভৌতিক ই লাগে।। 

মনে হয় ২০০ এর উপর কমেন্ট আসছে।  পোষ্টদাত্রী জ্বীনের ব্যাপারটা এতোটাই বিশ্বাস করে ফেলছে যে সে আর অন্য কিছু শুনতে নারাজ।  ইন্টারেষ্টিং বিষয় হলো প্রচুর লোক তার পালে হাওয়া দিতেছে। 

মানুষ যখন কিছু দেখতে চায় বা শুনতে চায়, তখন সে সেটা দেখে বা শুনে।  ব্যাপারটা আসলে ঘটে মানুষে অবচেতন মনে।  আমি আমার একটা উদাহরণ দেই। আমি আমার রুমের যেখানে বসে কম্পিউটার চালাই সেখান থেকে পাশের বিল্ডিং এর গেটের বেলের শব্দ আর আমাদের বাসার দরজার বেলের শব্দ ২টাই শোনা যায়। ২টার শব্দ একই রকম, পাশের বাসারটা জোরে শুনি, মাঝে কোন বাধা নাই বলে আর আমাদের একটু আস্তে শুনি কারণ আমার রুমের দরজা আটকানো থাকে আর ফ্যান চললে আওয়াজ কম শোনা যায়। এমন বেশ কয়েকবার হয়েছে যে আমি বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখি কেউ নাই।  এখন আমার নিজের ব্যাখ্যা হলো আমি অবচেতন মনেই হয়তো এই বেলের আওয়াজ শুনেছি।।

ফেসবুকে ইদানিং সর্ব বিষয়ে ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেয়ার প্রবণতা মারাত্মক হারে বেড়ে গেছে।  এমনকি যেখানে জাগতিক সমাধান আছে সেখানেও ধর্ম টেনে আনা হচ্ছে অহেতুক ভাবে। 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।