কয়েকদিন আগেই লিখেছিলাম এই বিষয় নিয়ে। আবারো লিখছি। গত সপ্তাহে একজন সরকারী কর্মকর্তার বাসায় আগুন লাগে এবং তার স্ত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়ে পরদিন হাসপাতালে মারা যান। পরে জানা যায় ভদ্রমহিলা নিজেই আগুন লাগিয়েছিলেন। তিনি ছোট বেলা থেকেই কিছুটা অপ্রকৃতস্থ ছিলেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
বাসায় সাধারণ একজন রোগী থাকলেও বাসার লোকজন এমনিতে খূব একটা ভাল থাকেন না। আর মানসিক রোগী থাকলে সব সময়ই টেনশনে থাকতে হয়। আর আত্মহত্যা প্রবণ কোন রোগী থাকলে সেই যন্ত্রণা মনে হয় শতগুণ বেড়ে যায়। সমস্যা হলো আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজ এই মানসিক রোগ অথবা আত্মহত্যা প্রবণতাকে মনে হয় না খূব একটা সিরিয়াসলি নেন। এরকম রোগীকে যে সবসময় চোখে চোখে রাখতে হয় সেটা হয়তো অনেকেই মনে করেন না। অনেকেই হয়তো নানা কিছুর দোহাই দেন (আর্থিক এবং অন্যান্য), কিন্তু শেষ বিচারে ক্ষতি তাদেরই হয়।
ছোট বেলার এক ঘটনা বলি। একই কলোনীতে বসবাসরত এক বড় ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর ছাত্র। পরীক্ষার ফলাফল অসম্ভব রকমের ভাল। একই বিভাগের এক ছাত্রী সেই বড়ভাই এর কাছ থেকে নিয়মিত নোট নিতেন। বড়ভাই একসময় সেই মেয়ের প্রতি দূর্বল হয়ে পরেন, কিন্তু কোন ভাবেই তার মনের কথা প্রকাশ করতে পারেন নি। সময়ের স্রোতে সেই মেয়ের একদিন বিয়ে হয়ে যায় আর তখন থেকেই বড়ভাই এর মানসিক সমস্যার শুরু। বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। একবার বাথরুমে ঢুকে ব্লেড দিয়ে রগ কেটে ফেলেছিলেন। বাসার লোকজন টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। সে যাত্রায় বেঁচে যান বড়ভাই। লম্বা সময় হাসপাতালে শারীরিক এবং মানসিক চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেই ধরতে গেলে আবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এবারের অস্ত্র ছিলো বাবার লাইসেন্স করা পিস্তল। এবার আর বিফল হননি। একটি শিক্ষিত পরিবারে একজন আত্মহত্যা প্রবণ তরুন ছিলো যে বার বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তো সেখানে পিস্তলের মতো মারণাস্ত্র রাখার কোন যুক্তি তো দেখি না। আবার রাখতেই যদি হয় তো সহজে নাগাল পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা কেন। এসব প্রশ্নের হয়তো উত্তর কোনদিনই কেউ দিবে না।
আসলে আমরা পড়ালেখা করে ছোট বড় ডিগ্রি নিয়ে ভাল একটা চাকরি জোগাড় করতে পারলেই আসলে শিক্ষিত হয়ে যাই। কোন কিছুর গভীরে প্রবেশ করার মতো শিক্ষা আমাদের থাকে না। হয়তো বেশীরভাগ মানুষের জীবন এভাবেই জোড়াতালি দিয়ে চলে যায়। যারা জোড়াতালি দিয়েও কোন সমধানে আসতে পারেন না, তারাই হয়তো ধূকে ধূকে মরেন। তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে হয়তো সাময়িক সমাধান পেতে পারেন, কিন্তু ভবিষ্যতে সেটাই যে আপনার ঘাড়ে চেপে বসবে না তাই বা কে জানে।
ভাল থাকবেন।
Image by Gordon Johnson from Pixabay
ফেসবুক মন্তব্য