
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে ভর্তি হওয়ার যে ২/৩ জনের সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিলো, তাদের একজন হলো জেফরি। জেফরি অবশ্য তার পিতৃপ্রদত্ত নাম না, পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিলো জাকারিয়ার হোসেন ওরফে বাচ্চু। লিটল ফ্লাওয়ারে বাচ্চু নাম নিয়ে হাসাহাসি হতে পারে এই আশংকায় সে নিজের ডাক নাম বলতো জেফরি। আবার কেউ তার বাসায় গেলে আগে থাকতেই বলে দিতো যাতে তার আসল নাম মানে জাকারিয়া বলে। আমার এই মূহুর্তে পূরো নামটা ঠিক মনে পড়ছে না, জেফরি নামে একজন গিটারিষ্ট ছিলেন। তো জাকারিয়া ওরফে জেফরি সেসময় আবার গিটার নিয়ে বেশ ভাব-টাব নিতো। আর ওর বাসায় ইংরেজী গানের ভাল কালেকশন ছিলো। ওর কাছ থেকেই অনেক শিল্পী, গ্রুপ বা ব্যান্ডের নাম প্রথম শুনেছি। আলাপে আলাপে একদিন জানলাম রেডিও বাংলাদেশ (তখনকার নাম) থেকে প্রতিদিন দূপুর বেলা একটা প্রোগ্রাম হয় ওয়ার্ল্ড মিউজিক নামে, যেখানে মূলত ইংরেজী গান বাজানো হয়। আর প্রতি রবিবার হয় ইওর চয়েস, শ্রোতাদের অনুরোধের আসর। আমাদের ডে স্কুলের কারণে কেবল শনি-রবিবার কেবল ওয়ার্ল্ড মিউজিক শুনতে পারতাম। তবে রবিবারে ইউর চয়েস অনুষ্ঠান ছিলো সেসময়ের অন্যতম প্রিয় অনুষ্ঠান। তখনকার ডিজে আনওয়ারুল আর সাদিয়ার কন্ঠস্বর মনে হয় এখনও কান পাতলে শুনতে পারি। দুজনেরই কন্ঠস্বর / ইংরেজী উচ্চারণ ছিলো অসাধারণ আর সাদিয়ার কন্ঠস্বর তো এক কথায় মায়াবী। এই অনুষ্ঠান শুনে শুনে আমার ইংরেজী গানের জ্ঞান আরো বাড়ছিলো। রেডিও বাংলাদেশ শুনতে শুনতেই আস্তে আস্তে কেমন করে যেন শর্টওয়েভে টিউন করা শুরু করলাম।

শুরুতে শর্টওয়েভ টিউন করা খূব একটা আনন্দদায়ক ছিলো না আমার জন্য। টিউনিং এর যে স্কেল ছিলো, সেটার দুই মিলিমিটার জায়গায় দেখা যেতো অনেকগুলো ষ্টেশন গাঁদাগাঁদি করে আছে। তার মধ্যে থেকে কাঙ্খিত ষ্টেশন টিউন করা অনেকটা খড়ের গাঁদা থেকে আলপিন খূঁজে বের করার মতো ব্যাপার ছিলো। একে তো অনেক ষ্টেশন তারপর শর্টওয়েভ প্রপোগেশন এর কারণে ঢেউ এর মতো একবার জোরে শোনা আবার ধীরে ধীরে ফেড হয়ে যাওয়া। একসময় রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেলো ব্যাপারটা। তখন তো আর এখনকার মতো ইন্টারনেট ছিলো না যে ব্যাপারগুলো বুঝতে পারব। নিজে নিজেই অনেকটা প্র্যাকটিস করার মতো খূ-উ-ব ধীরে ধীরে টিউনিং নব ঘুরানো শুরু করলাম। একসময় দেখা গেলো টিউনিং নবের উপর পূরো নিয়ন্ত্রন চলে এসেছে। খূব সহজেই ষ্টেশন গুলো টিউন করতে পারছি। রেডিও হয়ে উঠলো বিশ্ব’কে জানার নতুন দ্বার।
[চলবে …]
ছবি : টাইম সিগনাল ষ্টেশন WWVH থেকে পাওয়া QSL কার্ড
ফেসবুক মন্তব্য