স্বপন ভাই ১৯৭১ সালে পড়তেন দশম শ্রেণীতে। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন একটু ডানপিটে স্বভাবের। স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হওয়ার পর একদিন খবর আসলো স্বপন ভাই’কে খূঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বেশ কিছুদিন পর সবাই জানলো স্বপন ভাই মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছেন। মাঝে মাঝে খবর আসতো তার সতীর্থ যোদ্ধাদের মাধ্যমে, একবার শোনা গেল কোন একটা অপারেশনে গিয়ে তিনি আহত হয়েছেন। একদিন দেশ স্বাধীন হলো, স্বপন ভাই ফিরলেন। এরপর আর তার পড়ালেখা হঢনি। নানা রকম কাজ করেছেন। বিডিআর এ জয়েন করেছিলেন সৈনিক হিসেবে, টিকতে পারেননি বেশী দিন। সেই সময়ই বাধিয়ে বসেন যক্ষা। সেটা নিরাময় হলেও তার ফুসফুসের কার্যক্ষমতা খূবই কম। দোকানদারী করেছেন, ফটোগ্রাফী ষ্টুডিও চালিয়েছেন, সিনেমার লাইনেও কাজ করেছেন। কিন্তু কোনটাতেই থিতু হতে পারেননি। এখন কচুক্ষেত বাজারের কাছে ছোট একটা দোকান চালান – জননী ফুড কর্ণার। গ্রাহক মূলত গার্মেন্টসের কর্মীরা। এখনও প্রতিদিন ২০০-৩০০ সিঙ্গারা বানান নিজে, সহকারী তার স্ত্রী আলো। একমাত্র মেয়ে পড়ছে ক্লাস নাইনে। আপাতত জীবন চলছে ধুকপুক করে, হার্ণিয়া ধরা পড়েছে। কিন্তু অপারেশন করা যাচ্ছে না ফুসফুসের কাহিল অবস্থার কারণে।
স্বপন ভাই যুদ্ধ করেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর আন্ডারে। আজ অনেকদিন পর তার সাথে দেখা। আমি একটু ক্ষোভ প্রকাশ করলাম বঙ্গবীরের ভূমিকায়। জিজ্ঞাসা করলাম উনি (বঙ্গবীর) কি অনুতপ্ত দেশের জন্য যুদ্ধ করে। স্বপন ভাই উত্তর দিলেন “আমি নিজেই তো অনুতপ্ত, হুদাই যুদ্ধ করছি”। এরপর আরো কিছু বলতে চাইলেন, পারলেন না। অস্ফুটে কিছু একটা বললেন, বোঝা গেল না … কান্না আটকানোর চেষ্টা করছেন তখন স্বপন ভাই। আমি তখন বাক্যহারা। আস্তে করে বললাম, আপনার সাথে বসতে হবে। আপনার যুদ্ধকালীন স্মৃতিগুলো মনে করার চেষ্টা করতে থাকেন। আমার সাথে শেয়ার করবেন, আমি করবো অন্যদের সাথে। মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন …
(মার্চ ২৯, ২০১৩ সালে ফেসবুকে লিখেছিলাম স্বপন ভাই’কে নিয়ে)
ফেসবুক মন্তব্য