আলাপন ৩০-৫-১৮

ইদানিং ঘুম নিয়ে দেখি অনেকেরই সমস্যা। সমস্যা হয়তো আগেও ছিলো, কিন্তু সেসময় বাংলাদেশে ফেসবুক ছিলো না। সে কারণে হয়তো জানাও হয় নাই এতো মানুষ রাত্রে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। আমি কোন এক কালে শোয়া মাত্রই ঘুমাতে পারতাম, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই অবস্থাও পাল্টেছে। এখন আর শোয়া মাত্রই ঘুমাতে পারি না। মাঝে-মধ্যে ঘুমের সমস্যাও হয়। তবে সবচেয়ে বেশী সমস্যা যেটা হয় সেটা হলো অনেক সময় ঘুম ভাঙ্গার পর মনে হয় আমি হয়তো স্বপ্ন দেখছিলাম বা আদৌ ঘুমায় নাই।

বেশ অনেক বছর আগে একবার ঘুম নিয়ে বিকট এক সমস্যায় পরেছিলাম। সময় ছিলো রোজাার। ঘড়িতে এলার্ম দেয়া থাকলেও দেখা যেতো বাসার কেউ ই সময় মতো উঠতে পারে নাই। শেষ মূহুর্তে উঠে প্রায় না খেয়েই রোজা রাখছে। আমি তখন নতুন নতুন নেট লাইন নিয়েছি। দিনের বেলায় বাসায় অনেকেই নেট ব্রাউজ করে বলে স্পিড প্রায় থাকেই না। আমি তাই সাধারণত রাত ১০-১২টা বা ভোরের দিকে ব্রাউজ করতাম। রোজায় সবার এই অবস্থা দেখে আমি আমার ব্রাউজিং এর টাইম বাড়িয়ে দিলাম। রান্না করার জন্য উঠিয়ে দিয়ে তারপর ঘুমাতে যেতাম।

সমস্যা হলো রোজা শেষ হওয়ার পরে। আমার আর রাতে ঘুম আসে না। আমার ঘুমের টাইম পুরোই চেঞ্জ হয়ে গেলো। আমার ঘুম আসে সকাল ৮টার দিকে। এরপর ঘুম আসে ব্যাপক। জোর করে জেগে থাকতে হয় বলে সারাদিনই খারাপ যায়। সাথে মাথা ব্যাথা তো আছেই। কিছুদিন পর ব্যাপারটা প্রায় অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলো। আমি চিন্তা করছিলাম ঘুমের ট্যাবলেট খাবো কিনা। কথা প্রসঙ্গে একজন’কে সমস্যার কথা বললাম। তিনি শুরুতেই প্রশ্ন করলেন ঘুমের সময় ঘুম না আসলে কি করি। আমি বললাম নেট ব্রাউজ করি, আর কি করবো। এরপরের প্রশ্ন ছিলো ঘরে লাইট জ্বালানো থাকে, বললাম না। এবার বললেন এভাবে কোনদিনও ঘুম আসবে না। উনি আমাকে সাজেশন দিলেন আমি যেন রাত ৮টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে ফেলি আর ১০টার মধ্যে বিছানায় যাই। বাসায় রাত ৮টার মধ্যে খাওয়া শেষ করা একটু ঝামেলা, মানে রান্নাই শেষ হয় না। উনি বললেন প্রয়োজনে দুপুরের বাসি খাবার খেয়ে ১০টার মধ্যে শুয়ে পরবেন। আর শোয়ার পর রুমের লাইট ইত্যাদি সব বন্ধ করে কম্পিউটার / ফোন অফ করে তারপর বিছানায় যাবেন। কোন অবস্থাতেই কম্পিউটার বা অন্য কিছু ব্যবহার করবেন না। মানে ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় আবহ থাকতে হবে। প্রথম প্রথম খূব কষ্ট হবে, তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

দেখা গেলো রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় যেতে আমার রাত ১১টা হয়ে যাচ্ছে। আর খাওয়া আর বিছানায় যাওয়ার মধ্যে গ্যাপটা খূব বেশী হচ্ছে না। তারপরও সর্বোচ্চ চেষ্টা করলাম রাত ১১টার মধ্যে বিছানায় যেতে, খাবার যখনই খাই না কেনো। ঘুম হতো না বলে প্রথম প্রথম খূব কষ্ট হতো, তারপরও ফলো করে গেলাম এই নিয়ম। খূব আস্তে ধীরে অবস্থার উন্নতি হতে লাগলো। ১৫/২০ দিন পর মনে হলো আমার ঘুমের টাইমিং আবার আগের অবস্থায় চলে আসছে। মাস খানেক পর অবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে আসলো।

ঘুমের ব্যাঘাত হলে কখনই অন্ধকার ঘরে পিসি বা ট্যাব অথবা ফোনে নেট ব্রাউজ করবেন না। এতে কখনই ঘুম আসবে না। মনিটর থেকে যে আলো বের হয় সেটা খূবই কড়া। আর সরাসরি আলো চোখে এসে পড়ছে। ঘটনাটা আসলে চোখের সামনে একটা লাইট বাল্ব জ্বালিয়ে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করার মতো। অনেকে ঘুমানোর আগে বই পড়েন, এটা ঠিক আছে, কারণ বই থেকে সরাসরি আলো বের হচ্ছে না। ঘুমের ব্যাঘাত হলে ঘুম আসার পরিবেশ তৈরী করে নিতে হবে। পিসি, টিভি, ট্যাব, ফোন এসব সহ লাইট অফ করে নিতে হবে। মোদ্দা কথা ঘুমে ডিসটার্ব হয় এমন সব কিছু থেকে দূরে থাকতে হবে। একবার ঘুমের টাইম চেঞ্জ হয়ে গেলে সেটা ফিরিয়ে আনতে গেলে কষ্ট হবেই। ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকলে দেখবেন একসময় ঘুম ঠিকই আসতেছে।

এরপর আর কখনই রাত জাগি না। ঘুম না আসলে ছুপচাপ বিছানাতেই শুয়ে থাকি।

(এই পরামর্শ কেবল মাত্র কোন কারণে যাদের ঘুমের টাইমিং চেঞ্জ হয়ে গেছে তাদের জন্য)

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *