আমার চোখ ছোটবেলা থেকেই ট্যারা। সেটা নিয়ে এই বড়বেলায় এসেও পিছন থেকে নানা কথা শুনি। ক্লাস সিক্সে থাকতে একজন শিক্ষক যখন ক্লাসে ‘কানা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন রাগে / দূঃখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর থেকে আসলে এসব আর গায়ে মাখি না। তাসনুভা আনান শিশির ঠিক কতোটা হ্যারাসের শিকার হয়েছেন সেটা হয়তো নিজের ঘটনা দিয়ে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারি। যদিও আমার ঘটনা খূবই সাধারণ। তবে কানা, খোড়া, ল্যাংড়া বলাটা আমাদের অনেকের কাছেই ডাল-ভাতের মতো ব্যাপার। আর আছে গায়ের রং ব্যাপার। এদেশে কালো মেয়ের কোন কদর নাই। বিয়ের সময় সবাই সুন্দরী আর ফর্সা মেয়েই খোঁজে। কোনটায় ঘাটতি থাকলে সেটা পোষাতে হয় যৌতুক দিয়ে।
অনেকেই দেখছি শিশিরের খবরের সাথে কোরান-হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে নানা কথা বলছেন বা বলার চেষ্টা করছেন। তারা আল্লাহ’য় বিশ্বাস স্থাপন করলেও শিশিরের মতো মানুষ বা আমার মতো ট্যারা চোখের মানুষ অথবা শারীরিক খুত সম্পন্ন মানুষ (ইন জেনারেল) যে তাদের আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সেটা আসলে তারা আদতে বিশ্বাস করেন কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সত্যিকার অর্থে বিশ্বাস স্থাপন করলে এরকম হ্যারাসমেন্ট কোনদিনই আসলে হতো না। বিশ্বাস এবং আচরণ পরস্পর সাংঘর্ষিক এরকম আরো বহু উদাহরণ হয়তো দেয়া যাবে।
ফেসবুকে নীলাভ নামে একজন ছেলে আছে। তার আচার আচরন কথা বলার ষ্টাইল কিছুটা মেয়েলী। ফুড কোর্ট গ্রুপে মাঝে মধ্যে সে ফুড রিভিউ দেয় সেখানে ভদ্রলোকের সন্তানরা তাকে কি পরিমান হ্যারাস করে তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এখন নীলাভ যদি কখনও ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে নিজেকে ঘোষনা করে তাহলে হয়তো এইসব ভদ্রলোকের সন্তানরাই এসে কোরান-হাদিসের আলোকে জাজমেন্ট দিবে নীলাভ আসলে কি পরিমান পাপিষ্ঠ।
পাশ দিয়ে সার্টিফিকেট পাওয়াটাই শিক্ষিতের একমাত্র মাপকাঠি না। নিজের ভিতরের অন্ধকার যতক্ষণ না দূর করতে পারছেন, অন্যকে সম্মান দিতে না পারছেন – আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষই না।
পাশ দিয়ে সার্টিফিকেট পাওয়াটাই শিক্ষিতের একমাত্র মাপকাঠি না। নিজের ভিতরের অন্ধকার যতক্ষণ না দূর করতে পারছেন, অন্যকে সম্মান দিতে না পারছেন – আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষই না।
ফেসবুক মন্তব্য