হিজড়া

কোন হিজড়ার সাথে প্রথম কবে সাক্ষাত হয়েছিলো মনে নেই।  রাস্তাঘাটে দেখেছি অবশ্যই, কিন্তু কখনই তেমন কিছু জানা হয়নি।  এক বন্ধু চকবাজারে ব্যবসা শুরু করার পর মাঝে মধ্যে দেখতাম।  প্রতি বৃহস্পতিবার চকবাজারে অলিখিত ‘ভিক্ষুক দিবস’।  কিছুক্ষণ পর পরই দেখা যায় কেউ না কেউ এসে দাড়াচ্ছে।  হিজড়া’রাও সেদিন বের হয়।  দোকানে দোকানে ঘুরে।  কেউ দেয় কেউ দেয় না।  তারপরেও মনে হয় ভালই আয় হয় সবার।  চকবাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান / দোকানের সংখ্যা তো গুণে শেষ করা যাবে না।  আর শুধূ চকবাজারই বা বলি কেন।  এদিকে লালবাগ থেকে ধরে সদরঘাট, আরেকটু এগিয়ে নবাবপুর, বংশাল।  পায়ে হেটে যতো ঘুরতে পারা যায়।  আর এরা (ভিক্ষুক / হিজড়া) তো আসলে একা না।  দল / উপদলে আছে। 

যা বলছিলাম।  চকবাজারে যখন আসতো, কেউ দিতো, কেউ দিতো না।  এনিয়ে কখনও কোন ঝামেলা করতো না।  হয়তো একবারের জায়গায় দুইবার / তিনবার বলতো।  এর বেশী আর কিছু না।  একটা ঘটনার কথা অবশ্য শুনেছিলাম।  বিসমিল্লাহ টাওয়ারের এক দোকানে একবার টাকা চাওয়ার পর না বলায় কোন এক হিজড়া ‘দিবা না ক্যান’ বলে কাঁচের শোকেসের উপর ঘুষি মেরে ভেঙ্গে ফেলেছিলো।  এরপর সেই দোকান আর আর আশে-পাশের দোকানের কর্মচারিরা মিলে বেদম পিট্টি দিয়েছিলো।  এছাড়া আর কোন অঘটনের খবর শুনি নি।  তখন এদের সাথে মাঝে মধ্যে সূখ-দূঃখের আলাপও হয়েছে। এক হিজড়া তো আমাকে ডাকতো ‘নানা’ বলে।  তখন ওদের সম্পর্কে ধারণা হয়েছিলো  সৃষ্টির গ্যাঁড়াকলে পরা অসহায় মানব সন্তান হিসেবে। 

বাচ্চা জিম্মি করে টাকা আদায়
এই ধারণা পূরোই বদলে যায় উত্তরা আসার পর।  এখানে এরা প্রচন্ডভাবে সংঘবদ্ধ এক অপরাধী চক্র।  প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে।  সূযোগ পেলেই জিম্মি করে ফেলছে এখানকার অধিবাসীদের।  এদের অত্যাচারে বিভিন্ন সেক্টরের মালিক সমিতি এদের সাথে এক অনৈতিক চুক্তি করেছে।  বিয়ের অনুষ্ঠান, নতুন বাচ্চা হলে সমিতির কাছে ২০০০.০০ টাকা দিয়ে রশিদ নিতে হয়।  হিজড়ারা পরে সমিতি থেকে টাকা নিয়ে নেয়।  তারপরও শান্তি নেই।  সূযোগ পেলেই ঢুকে পরে নানা বাহানায় টাকা দাবি করে।  বিশেষ করে যাদের বাসায় ছোট বাচ্চা আছে তারা থাকে আতঙ্কে।  হিজড়ারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ায়।  কোন বাসার বারান্দায় বাচ্চার কাপড় চোখে পড়লেই হলো।  আমার অবশ্য ধারণা বিভিন্ন বাসার দাড়োয়ান / কাজের লোকের মাধ্যমেই তারা খবর পায়।  আমাদের বাসায় যে ২/৩ বার হানা দিয়েছে প্রতিবারই গেট খোলা পেয়ে ঢুকে পরেছিলো।  একবার কেবল বাসায় অতিথী এক মেয়ে না বুঝে গেট খুলে দিয়েছিলো।  দাড়োয়ান, কাজের লোক কিংবা ভাড়াটিয়াদের নিয়ে এই এক বিরাট সমস্যা।  যতোই বলা হয় গেট বন্ধ রাখতে হবে, কোন লাভ হয়না।  উঠে গিয়ে গেট খুলতে বা চাবি ঘুরিয়ে গেট খুলতে কেন যে তাদের এতো আলসেমি সেটার মর্ম আজ পর্যন্ত বুঝলাম না।  ভাড়াটিয়া হয়তো দোকানে যাবে, গেট সামান্য একটু খুলে রেখে যাবে।  কেন বাবা।  বাড়িওয়ালা তো গেটের চাবি দিয়েছেই। চাবি নিয়ে বের হওয়ার মতো কষ্ট মনে হয় আর নাই।  দাড়োয়ান না থাকলে ফোন করে যে চাবি দিয়ে গেট খুলে দিতে বলবে সেটাও তাদের মাথায় থাকে না। 

মাত্র কয়েকদিন আগেই উত্তরায় কিছুদিন আগে আসা এক ছোট ভাই এর বাসায় হিজড়ারা ঢুকে ব্যাপক উৎপাত করেছিলো।  শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওরা ৯৯৯ এ কল করায় পুলিশ এসেছিলো।  এরপরও মনে হয় হাজার দূ’য়েক টাকা নিয়ে যায়।  ওরা নাকি ২০/৩০ হাজার টাকার কমে নেয় না।  ফোন পেয়ে পুলিশ এসেছিলো এটা অবশ্যই ভাল খবর। তবে সাধারণত পুলিশও এদের এড়িয়ে চলতে চায়।  আমার বোনের বাসায় এরকম একবার উৎপাত করে চলে যাওয়ার সময় ছবি তুলতে গেলে এক হিজড়া পরনের সালোয়ার খুলে, কামিজ বুক পর্যন্ত তুলে ফেলেছিলো। 

ফেসবুকের কল্যানে দেখতে পাই এরা এখন কেবল উতরা না, রাস্তা-ঘাট, বাস-ট্রেণ সব জায়গাতেই  ব্যাপক ভাবে চাঁদাবাজি করছে, জনসাধারণ হেনস্তা হচ্ছে।  বিভিন্ন টিভি রিপোর্টেও দেখানো হচ্ছে অনেকেই অপারেশন করে হিজড়া হয়ে এসব অপরাধী চক্র গড়ে তুলছে।  হয়তো ভয়াবহ কোন ঘটনা ঘটার পর  সবার টনক নড়বে।  

 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।