ঢাকা টাঙ্গাইল হাইওয়ে

অনেকদিন পর ঢাকার বাইরে গেলাম। গেলাম ঘাটাইলে, দুলাভাই এর দেশের বাড়ী। আমাদের বাড়ী অবশ্য ঘাটাইলের আগে কালিহাতী উপজেলায়। আমি ঘাটাইল গিয়েছিলাম শেষবার ২০১৫ সালে, দুলাভাই এর মেঝ বোন বেগম আপার দাফনে। 

এবারের সফরে প্রথমে যে জিনিসটা চোখে পড়লো তা হলো ঢাকা টাঙ্গাইল হাইওয়ে। অনেক প্রশস্থ হয়েছে। ৪ লেনের হাইওয়ে। দুইপাশে আবার ধীরগতির যানবাহনের জন্য সার্ভিস লেন আছে। তবে ঢাকা থেকে ভুলতা পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলমান। আগের চাইতে রাস্তার অবস্থা ভালই, তবে ঢাকা গাজীপুর এক্সপ্রেস ওয়ের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলা সম্ভব না। এখনও প্রচুর কাজ বাকি। ভুলতা থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত সার্ভিস লেন সব জায়গায় নাই। বিশেষ করে কোনাবাড়ির কিছু অংশে। সেখানে দেখলাম থ্রি হুইলারগুলি মেইন হাইওয়ে দিয়ে চলছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে উল্টাপথে যাত্রী নিয়ে চলছে। তবে মেইন হাইওয়ে এবং বিভিন্ন সেতুগুলি খূবই চমৎকার। বিশেষ করে আগের সেই চিপা সেতুগুলি ভেঙ্গে নতুন প্রশস্থ সেতু করা হয়েছে। সড়ক এবং সেতু’র মাঝে ডিভাইডার থাকায় মুখোমুখি সংঘর্ষের সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। 

কালিয়াকৈর থেকে মহাসড়কে চলতে আপনার বেশ ভাল লাগবে। ধীরগতির যানবাহনগুলি নিয়ম মেনে সার্ভিস লেন দিয়ে চলছে। একমাত্র ব্যতিক্রম কিছু মোটর সাইকেল। তারা নিজেদের এবং মোটর সাইকেলের কারিশমা দেখানোর জন্য মূল সড়ক দিয়ে বাস-ট্রাকের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে। একজন মোটর সাইকেল আরোহীর পিছনে একজন মহিলা দেখলাম পাশ ফিরে বসেছেন এবং মোটর সাইকেল চলছে মূল সড়ক দিয়ে। এটা যে কতোটুকু বিপদজনক সেটা তারা হয়তো বুঝেও বুঝে না। একপাশের সার্ভিস লেন থেকে অন্য পাশের সার্ভিস লেনে যাওয়ার জন্য জায়গায় জায়গায় আন্ডারপাস আছে। পথচারী পারাপারের জন্য আছে ওভারব্রীজ। 

মহাসড়কে দেখা গেলো ট্রাকগুলি বেশ নিয়ম মেনে চলছে। তারা নিয়মিত গতিতে যে কোন একটি লেন ব্যবহার করে চলছে। কালেভদ্রে তারা লেন পরিবর্তন করে। তবে কোন কোন ট্রাক অতিরিক্ত মালামাল বহন করছে। এক ট্রাকে দেখা গেলো এমনভাবে মাল বোঝাই করা হয়েছে যে সেগুলো একদিকে কাত হয়ে আছে। স্পিডে মোর ঘুরতে গেলে উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

কিছু কিছু বাস বেপরোয়া গতিতে চলে এবং ঘন ঘন লেন পরিবর্তন করে। কিছু কিছু প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। 

এলেঙ্গা থেকে ঘাটাইল পর্যন্ত আবার সেই দুই লেনের রোড। এই সড়ক অবশ্য মহাসড়কের অংশ নয়। মাঝে কোন ডিভাইডার নাই। থ্রি হুইলার, বাস-ট্রাক প্রাইভেট কার সমানে চলতেছে। ওভারটেক করতে গেলে ব্যাপক সাবধানে থাকতে হয়। 

আমরা ঢাকায় ফিরেছি ১লা মে। মে দিবস উপলক্ষে রাস্তায় বাস-ট্রাক ছিলো না বলতে গেলে। তাই বেশ আরামে আসা গেছে। সময় লেগেছিলো দুই ঘন্টার মতো। 

এবারের সফরে আরেকটা বিষয় বেশ চোখে পড়লো। প্যাডেলচালিত কোন রিক্সা বা ভ্যান নাই, সবই এখন ব্যাটারিচালিত। ব্যাটারীচালিত থ্রি হুইলার তো আছেই, সাথে আছে সিএনজি। একজনের কাছে শুনলাম টাঙ্গাইলের অনেক মানুষই এইসব সিএনজি’তে করে ঢাকায় আসা-যাওয়া করে। সিএনজিওয়ালারাও ৫ জন যাত্রী নিয়ে নিয়মিত ৫/৬ বার ঢাকায় আসা-যাওয়া করে। 

কালিহাতীর কাছে আরেকটি অদ্ভুত বাহন দেখলাম – ৩ চাকার ট্রাক, ৩ টনের। এটা খূব সম্ভবত ট্রাক্টরের ইঞ্জিন দিয়ে বানানো হয়েছে। এই দেশের মানুষ নিঃসন্দেহে ক্রিয়েটিভ। 

আপাতত এপর্যন্তই। আবার হয়তো সহসাই বের হয়ে পড়বো ঘুরতে। 

ভাল থাকুন।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।