দ্য ওয়াচার

ইদানিং একটা বিষয় প্রায় অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। নেটফ্লিক্সে কোন মুভি বা সিরিজ দেখার পর (কোন সময় আগে) সেটা নিয়ে গুগল সর্চ করা। কখনও শুধূই অন্যদের রিভিউ পড়ার জন্য কখনও পিছনের ঘটনা জানার জন্য। একাজটি বেশী করি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরী করা কোন মূভি বা সিরিজ দেখার পর। 
কযেকদিন আগে দ্য ওয়াচার দেখা শেষ করলাম। আপাতত ৭ পর্বের সিরিজ। ভবিষ্যতে নতুন সিরিজ আসবে কি না জানি না। দেখা শেষ করেই দ্বারস্থ হলাম গুগলের। প্রথমেই জানলাম এটা পিছনে আসলেই একটি সত্য ঘটনা আছে। তবে এই সত্য ঘটনার ভিতর আবার আরেকটি সত্য ঘটনা কায়দা করে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। 

মূল ঘটনা : ২০১৪ সালের জুনে ডেরেক এবং মারিয়া ব্রডাস ৬৫৭ বুলেভার্ড এর বাড়িটি ক্রয় করেন। এর পরপরই তারা ‘দ্য ওয়াচার’ এর কাছ থেকে প্রথম চিঠিটি পান। এরপর বাড়ির কিছু কাজ (রেনোভেশন) করার সময় আরো কিছু চিঠি পান। খোজ নিয়ে জানতে পারেন তার আগের মালিকও এমন চিঠি পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি পাত্তা না দিয়ে চিঠিগুলি ফেলে দেন। ‘দ্য ওয়াচার’ এক পর্যায়ে তার সন্তানদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত তারা এই বাড়িতে তাদের ৩ সন্তান’কে নিয়ে আসেন নাই। ৬ সপ্তাহ পর তারা ঠিক করেন বাড়ীটি তারা আবার বিক্রি করে দিবেন। অর্থাৎ তারা এই বাড়িতে কখনই বসবাস করেন নাই। (সূত্র : এই লিংকে)

কে এই ওয়াচার : সেটি এখন পর্যন্ত জানা যায় নাই। পুলিশ আশে-পাশে বসবাসকারী কয়েকজন’কে সন্দেহ করলেও অধিকতর তদন্তে কাউকে অভিযুক্ত করা যায় নাই। 

জন গ্রাফ : সিরিজে জন গ্রাফ নামে একটি চরিত্র আছে। সিরিজে দেখানো হয় এই বাড়ীতে জন গ্রাফ তার স্ত্রী, ২ সন্তান আর মা’কে হত্যা করে নিরুদ্দেশ হয়। হত্যাকান্ডের আগে তিনি তাদের সব ফ্যামিলি ফটো থেকে নিজের অংশটি কেটে ফেলেন। যাতে তাকে কেউ চিনতে না পারেন। পরে অবশ্য দেখানো হয় যে তিনি আসলে সেই বাড়ীর বেসমেন্টের এক গোপন কুঠুড়িতে বসবাস করছিলেন। সেই কুঠুড়ি আবার এক গোপন টানেলের মাধ্যমে এক প্রতিবেশীর বাড়ীর সাথে সংযুক্ত।

আসল ঘটনা হলো এই জন গ্রাফ বাস্তবে জন লিষ্ট। জন লিষ্ট তার স্ত্রী, ৩ সন্তান এবং মা’কে হত্যা করে নিরুদ্দেশ হন এবং ১৮ বছর আত্মগোপনে থাকেন। তবে ৬৫৭ বুলেভার্ডের এই বাড়ীটির সাথে  এই ঘটনার কোন যোগসূত্র নাই। 

জন লিষ্ট হত্যাকান্ড ঘটানোর পর প্রায় এক মাস পর মৃতদেহগুলি খূঁজে পাওয়া যায়। হত্যাকান্ডটি ঘটানো হয় নভেম্বর ৭, ১৯৭১ সালে। জন লিষ্ট এরপর পালিয়ে ডেনভার চলে যান। সেখানে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন রবার্ট পিটার বব ক্লার্ক। আরো পরে ১৯৮৫ সালে তিনি ডেলোরেস মিলার নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন। তারা পরে ভার্জিনিয়াতে বসবাস শুরু করেন, সেখানে লিষ্ট (বব) একাউনটেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন।

১৯৮৯ সালে America’s Most Wanted সিরিজে জন লিষ্ট এর কাহিনী প্রচার করা হলে ডেলোরেস এর এক বান্ধবী জন লিষ্ট’কে চিনতে পেরে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ১৯৯০ সালে ৪ খুনের অপরাধে জন লিষ্ট এর যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। (সূত্র : এই লিংকে)

আমার কাছে অবশ্য ইন্টারেষ্টিং মনে হয়েছে জন লিষ্ট এর মানসিকতা। তার সাথে আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণের বেশ মিল আছে।। জন লিষ্ট’কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো ৪ জনকে হত্যার পর তিনি নিজে আত্মহত্যা করেন নাই কেন। উত্তরে জন লিষ্ট বলেছিলেন আত্মহত্যা মহাপাপ। যারা তার হাতে নিহত হয়েছেন তারা সবাই স্বর্গে যাবে। কিন্তু সে যদি আত্মহত্যা করতো তবে কোনদিনও স্বর্গে যেতে পারতো না। এখন কোন সময় নিজের অপরাধ স্বীকার করে হয়তো ঈশ্বরের ক্ষমা পেতে পারেন।

সময় পেলে দেখতে পারেন দ্য ওয়াচার। চলছে নেটফ্লিক্সে।
ভাল থকবেন। 

ফটো : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।