পলায়ন

সময় ১৯৮৭/৮৮ সাল। বড় চাচা সুইডেনে রাষ্ট্রদূত হয়েছেন। প্রথমে চাচা-চাচী দু’জনে যাবেন। কাপড়-চোপড় ছাড়া আর কিছু নেয়ার নাই। তবে সাথে করে দুইজন গৃহকর্মী নিয়ে যাবেন। একজন পূরুষ বাবুর্চি, আরেকজন মেয়ে। বাবুর্চির বয়স বছর ৪০ আর মেয়ে গৃহকর্মী ১৯/২০ বছরের। 

আমি বড় চাচার প্রচেষ্টায় সামার জব নিয়ে সুইডেনে গেলাম ১৯৮৯ সালে। ভিসা ৪ মাসের। পৌছানোর ২ দিন পর চাচা একদিন ডাকলেন কথা বলার জন্য। এটা সেটা জিজ্ঞাসা করার পর বললেন ভিসা শেষ হলে যেন আমি সোজা দেশে ফিরে যাই। সুইডেনে থাকার চেষ্টা না করি। এরপর ব্যাখ্যা করলেন কেন। তিনি যে গৃহকর্মী নিয়ে এসেছিলেন তারা দুইজনই কয়েক মাস আগে বাসা থেকে পালিয়ে গেছে এবং এসাইলাম চেয়েছে। কারণ হিসেবে বলেছে তাদের খূব কম বেতন দেয়া হতো এবং তাদের চলাফেরায় কোন স্বাধীনতা ছিলো না। চাচা এই দুইজনের কারণে সুইডেনে এবং দেশে দুই জায়গাতেই বেকায়দা অবস্থায় আছেন। 

সুইডিশ কর্তৃপক্ষ (ইমিগ্রেশন) গৃহকর্মীর বেতনের অংক শুনে প্রথমে বিশ্বাসই করতে চায় নাই। পরে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত তাদের আশ্ব্ত করেন যে বাংলাদেশে একদম এন্ট্রি লেভেলের সরকারী কর্মকর্তারা এমনই বেসিক বেতন পান। কুক কিংবা হেল্পিং হ্যান্ডদের বেতন বাংলাদেশে আরো কম। 

চাচা তার গৃহকর্মীদের সাথে দেখা করে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুইডিশ কর্তুপক্ষ জানায় তারা অপারগ। তারা তাদের জিম্মায় আছে এবং তাদের এপ্লিকেশনের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে কোন রকম যোগাযোগ করা যাবে না। 

ঘটনা আসলে ছিলো অন্য রকম। এই দুইজন সাধারণত বাসার বাইরে খূব একটা যেতো না। কারণ ভাষা। দুজনেই ইয়েস, নো, ভেরি ওয়েল ছাড়া তেমন কিছু বলতে পারতো না। বাবুর্চি মাঝে মধ্যে বাইরে গেলেও তার দৌড় ছিলো বাসার কাছের গ্রোসারী ষ্টোর। আর মেয়ে গৃহকর্মী বাইরে যেতো চাচীর সাথে। দুরে কোথাও বেড়াতে গেলে দু’জনকেই সাথে করে নিয়ে যাওয়া হতো। 

বাবুর্চি একবার অসুস্থ্য হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। সেসময় ডাক্তারের সাথে কথা বলার প্রয়োজনে তার জন্য একজন বাঙ্গালী দোভাষী দেয়া হয়েছিলো। ঘটনা যা বুঝা যায় দোভাষীই হয়তো তাকে এভাবে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলো। বাবুর্চি হাসপাতাল থেকে ফিরে গৃহকর্মী মেয়ের সাথে কথা বলে পরিকল্পনা ঠিক করে। বাইরে থেকে কেউ হয়তো তাদের সাহায্য করেছিলো। না হলে তাদের একার পক্ষে পুলিশের কাছে গিয়ে এসাইলেম চাওয়া কোন ভাবেই সম্ভব ছিলো না। ভাষাগত সমস্যা ছাড়াও ঠিক কোথায় যেতে হবে, কিভাবে কি করতে হবে এসব জানা থাকার কথা ছিলো না। 

এসব ক্ষেত্রে কেস সুরাহা হতে সাধারণত কয়েক বছর লাগত সেসময়। দেশে আসার পর চাচীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ওদের কোন খোঁজ পেয়েছেন কিনা। চাচা-চাচী দেশে ফেরার পর তাদেরও নাকি কেস নাকচ করে দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিলো। 

[পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশী কুটনীতিকের যুক্তরাষ্ট্রের বাসা থেকে কয়েক বছর  আগে তার গৃহকর্মী পলায়নের খবর পড়ে আমার এই ঘটনা মনে পড়লো]

 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।