ক্যামেরা কথন – ৪

ক্যামেরাতো কিনলাম । এখন !?! ক্যামেরা হাতে নিলেই মনে হতো – এই বুঝি গেলো। তারপর এক সময় টুকটাক ছবি তোলা শুরু হলো। তবে শুরুতেই একটা ভুল করলাম। ডিএসএলআর কিনেছি, এখন কি আর অটো মোডে ছবি তোলা শোভা পায়। শুরুতেই শুরু করলাম ম্যানুয়াল মোডে ছবি তোলা। জ্ঞান বলতে ছিলো অল্প কিছু ইবুক আর কয়েকটা ইউটিউব ভিডিও থেকে আহরিত। ফলাফলও হলো তথৈবচ। মনে হলো ১৫ হাজার টাকার পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরাতেই তো ভাল ছবি তুলতাম, এই মরার ডিএসএলআর এর পিছনে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করার কি দরকার ছিলো !!!
Munajat

পরিচিত-অপরিচিত অনেকের সাথে মিশতে শুরু করলাম। ফেসবুক / ফ্লিকার ভিত্তিক ফটোগ্রাফি গ্রুপগুলোর সাথে ফটোওয়াকে যেতে শুরু করলাম। ফ্লিকারে নিয়মিত হওয়া চেষ্টা করলাম। কে ছোট কে বড় বাছ বিচার না করেই ক্যামেরা এবং ফটোগ্রাফি বিষয়ে প্রশ্ন করে নিজের জ্ঞান বাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কারণ এছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলো না। ফটোগ্রাফি কোর্স করতে পারলে ভাল হতো, কিন্তু নিজের ব্যস্ততা এবং যেখানে থাকি সেখান থেকে নিত্য যাতায়াত ছিলো সবচাইতে বড় সমস্যা। আর এপর্যায়ে এসে অনুধাবন করলাম আমার আশেপাশে যারা আছে, অল্প কয়েকজন বাদ দিলে সেভাবে সাহায্য করার কেউ নাই। মানে সাহায্য করার মানসিকতাই গড়ে উঠে নাই। ভাবটা এমন যে ‘আমি মিয়া কত কষ্ট কইরা  মাথার ঘাম পায়ে ফেইলা এসব শিখছি আর তুমি মিয়া আইসাই জিজ্ঞাসা কইরা সব শিখ্যা ফালাইবা, তা হয় নাকি। খাইট্যা শিখো।’ আমার চাইতে বয়সে বড় অথবা সমবয়সী খূব কম মানুষই পেয়েছিলাম সে সময়, বেশিরভাগই ছিলো বয়সে ছোট। আর তাদের কে জিজ্ঞাসা করা মানে তাদের’কে আকাশে তুলে ফেলা। ভাব যা ছিলো। বুঝলাম যা করার নিজের মতো করে আমাকেই করতে হবে। তবে একজন ভদ্রলোকের কথা না বললেই না। তিনি হলেন হুমায়ুন বাদশা, আমাদের সকলের প্রিয় কালপূরুষ’দা। উনি তখন রাজউক এর কর্মকর্তা। ব্লগস্ফিয়ার মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিচয় হওয়ার পর জানলাম শুধূ ক্যামেরা বা ফটোগ্রাফি না, যে কোন ইলেক্ট্রনিক্স আইটেমের ব্যাপারেই তার জ্ঞান অসাধারণ। আর ক্যামেরা / লেন্স সম্পর্কে যা জানেন, খূবই ভাল জানেন। যদিও উনি ফিল্ম ক্যামেরার যুগের মানুষ, ফিল্ম ক্যামেরাই বেশী ব্যবহার করতেন তখন। যে কোন প্রশ্নে তিনি তার যা জানা ছিলো সবই জানাতেন অকপটে। অনেক কিছু জানা এবং বুঝা হয়েছিলো তার কাছ থেকে।

নাইকন ডি৩০০০

খোঁজ করতে করতে একদিন হঠাৎ করেই জানলাম রফিকুল ইসলাম সাহেবের নাম। তিনি নাকি বাংলায় দু’টো বই লিখেছেন, দু’টোই আবার ডিজিটাল ফটোগ্রাফি নিয়ে। আমি প্রথম কিনলাম ফটোগ্রাফি : কলাকৌশল ও মনন। এটাই মূলত ক্যামেরা ও লেন্স সম্পর্কে আমার জ্ঞান ব্যাপক ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলো। আমি একই সাথে ইউটিউবে ভিডিও দেখা শুরু করলাম। বই পড়ে যেটুকু জ্ঞান বাড়ছিলো, ইউটিউব ভিডিও দেখে বলা চলাে সেটি পরিপূর্ণ হচ্ছিলো। এই দুই এর সমন্বয়ে ডিএসএলআর ক্যামেরায় ম্যানুয়াল মোডে ছবি তোলার শিক্ষা এগিয়ে চলছিলো। তবে একটা ঘাটতি তখনও ছিলো এখনও আছে আর তা হলো ছবি ক্রিটিক করে ভাল-মন্দ বলার বা ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়ার কেউ ছিলেন না। একজন ভাল ফটোগ্রাফার হতে চাইলে কেবল টেকনিক্যাল বিষয়গুলো জানাটাই মূখ্য না। ছবি আসলে কেমন হচ্ছে সেটি জানাও দরকার। বলা হয়ে থাকে একটি ছবির ৩০% হয়তো টেকনিক্যাল বিষয়, বাকি ৭০% ফটোগ্রাফির বাদ বাকি অংশ – যাকে আমরা বলতে পারি নান্দনিকতা।

[চলবে]

ছবি পরিচিতি
প্রথম ছবি : মুনাজাত। নাইকন ডি৩০০০ এ তোলা আমার পছন্দের একটি ছবি। ইজতেমার সময় এয়ারপোর্ট রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে তোলা। ছবিটি এডোবি ক্যামেরা র দিয়ে পোষ্ট প্রসেসিং এবং ফটোশপে কিছু ঘষামাজা করা হয়েছে এই অবস্থায় আনতে। Aperture f/8, Shutter Speed 1/125 sec, ISO 200 with 18-55mm Kit Lens এখানে মূল ছবিটি পাবেন
দ্বিতীয় ছবি : নাইকন ডি ৩০০০, ১৮-৫৫ মিমি লেন্সের বর্তমান অবস্থা। কোন কোন জায়গায় ছাল-চামড়া উঠে গেছে, ধূলা-ময়লা জমেছে, কিছু কিছু জায়গায় (যেসব জায়গায় স্ক্রু আছে) জং (rust) ও পড়েছে।
Camera : Nikon D7100, Lens AF 28-80mm, Aperture f/6.30, Shutter Speed 1/15 sec, ISO 100
ক্যামেরা ট্রাইপডের উপর ছিলো। দুইপাশে ২টি LED লাইট (প্রতিটায় ১৩০টি করে LED) এবং উপরে কিছুটা কোনাকুনি ২০ ওয়াটের ২টি LED লাইট, আমব্রেলা ব্যবহার করা হয়েছে ডিফিউজ করার জন্য।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।