২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় সিনহা মো. রাশেদ খানকে। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর, যিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর একদল তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর জন্য কক্সবাজারে গিয়েছিলেন।
তথ্যচিত্র নির্মানে কক্সবাজারে গিয়ে সিনহা এবং তার সঙ্গীরা ওসি প্রদীপের কোন গোপন কর্মকান্ড জেনে ফেলেছিলেন। আর তারই জেরে ওসি প্রদীপের নির্দেশে ইন্সপেক্টর লিয়াকত রাস্তায় সিনহা এবং তার সঙ্গীকে আটক করেন। পরে ওসি প্রদীপের নির্দেশে লিয়াকত মেজর (অবঃ) সিনহাকে গুলি করেন। ফলশ্রুতিতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এই হত্যাকান্ডে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা বাহিনীর বর্তমান এবং সাবেক কর্মকর্তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেনাপ্রধান এবং পুলিশ প্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে একসঙ্গে বসে রাষ্ট্রীয় দুই বাহিনীর মধ্যকার সম্পর্কে অটুট রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এরপর কক্সবাজারের পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ বদলে ফেলা হয়। সব পরিদর্শককে সরানোর পর পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়। সেই ঘটনার পর কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও কমে যায় লক্ষ্যণীয় হারে। সিনহা হত্যার আগের সাত মাসে যেখানে ১৮৪ জন মারা গিয়েছিলেন; পরের পাঁচ মাসে তা চারজনে নেমে আসে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস যে মামলা করেন, তার কাজও চলে দ্রুত গতিতে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের পর র্যাব তদন্তভার নিয়ে পাঁচ মাসে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর অভিযোগ গঠন করে ২৯ কার্যদিবসে শুনানি করে গত ১২ জানুয়ারি রায়ের দিন ঠিক করে দেন বিচারক ইসমাইল।
৩৬ বছর বয়সী সিনহা ছিলেন রোমাঞ্চপ্রিয় এক যুবক। খুন হওয়ার দুই বছর আগে সেনাবাহিনীর চাকরি ছাড়েন অন্যভাবে জীবন শুরু করার জন্য। ছোটবেলা থেকেই ছিল ভ্রমণের শখ, ‘জাস্ট গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গিয়েছিলেন কক্সবাজারে। তার সাথে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ। তাঁদেরও নানাভাবে হয়রানী করা হয় তৎকালীন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
আজ মামলর রায়ে আসামী প্রদীপ এবং লিয়াকত এর ফাঁসীর আদেশ দিয়েছেন বিচারক। বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, টেকনাফ থানার কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও এএসআই সাগর দেব এবং সিনহার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলার তিন সাক্ষী, পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ’কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল-মামুন, এএসআই মো. লিটন মিয়া, এবং এপিবিএন এর এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ’কে খালাস দেয়া হয়।
তথ্যসূত্র : বিডিনিউজ২৪ প্রথম আলো সারাবাংলা
ছবি : প্রথম আলো
ফেসবুক মন্তব্য