ইউটিউবার হতে চাইলে

অনেকেই জানতে চান কিভাবে ইউটিউব এ আসবেন। কেউ বা শুরুতেই জানতে চান কোন নিশ (বিষয়) নিয়ে কাজ করবেন অথবা মানিটাইজেশন পাবেন। আমি আমার অভিজ্ঞতা কিছুটা শেয়ার করি।

১. প্রথমে ভিডিও করা শিখুন। আপনার হয়তো কোন ক্যামেরা নেই, আছে সবেধন নীলমণি একটা ছোটমোট মোবাইল। সেটাতে ছবি তুললে হয়তো নিজের চেহারাই নিজে চিনতে পারেন না। এটা দিয়েই শুরু করে দিন। শুরুতেই দামী কোন কিছু কিনতে যাবেন না আবার।

২. ছোট পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা আছে অথবা ডিএসএলআর। টুকটাক ছবি তুলেন এবং মোটামুটি ভালই ছবি তুলেন। এবার ভিডিও করার দিকে নজর দিন।

[আমি ২০০৭ সাল থেকে কম্প্যাক্ট ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ২০১০ সাল থেকে ডিএসএলআর ব্যবহার করি। এতোদিক কেবল ফটোগ্রাফিই করেছি। ভিডিও সত্যিকার অর্থে করাই হয় নাই। এখন ভিডিও করতে গিয়ে বুঝি আমি আসলে তেমন কিছুই জানি না ভিডিও তৈরী সম্পর্কে]

৩. ভিডিও তৈরী করতে গেলে (মোবাইল/কম্প্যাক্ট/ডিএসএলআর) প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো সোজা করে ভিডিও করা কোন রকম কাপুনি ছাড়া। হাতে নিয়ে করতে গেলে এই সমস্যা আপনাকে ফেস করতেই হবে। এরজন্য বিভিন্ন জিনিস আছে। যেমন মোবাইল হোল্ডার, হ্যান্ডেল, মিনি ট্রাইপড, সাধারণ ট্রাইপড, প্রফেশনাল ট্রাইপড, গিমবাল, ষ্টাবিলাইজার ইত্যাদি। এসব কিছুরই দাম আছে। মোবাইল হলে এর জন্য হোল্ডার, হ্যান্ডেল, মিনি ট্রাইপড এর দাম অপেক্ষাকৃত কম। শুরুতে এসব না কিনে চেষ্টা করুন হাতে নিয়ে কিভাবে অপেক্ষাকৃত কম কাপুনি ছাড়া এবং মোবাইল সোজা রেখে ভিডিও করতে পারেন। তাড়াহুড়া করবেন না, আস্তে-ধীরে ভিডিও করুন। তাড়াহুড়া করলে এমনিতেই ভিডিও’র কোয়ালিটি কমে যায়। মানে ভিডিও ঝাপসা হয়ে যাবে। যদি কাপুনি মিনিমাম পর্যায়ে রাখতে পারেন সেটা এডিটিং সফটওয়্যারে আরো কমিয়ে আনতে পারবেন।

৪. আপনি কম দামী মোবাইল দিয়েই ভিডিও করেন আর পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ক্যামেরা দিয়েই ভিডিও করেন – ভালো ভিডিও রেকর্ড করার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে পর্যাপ্ত আলো থাকতে হবে। সঠিক আলো ছাড়া কোন ক্যামেরাতেই ভাল ভিডিও ধারণ করা যায় না। শুরুতে তাই দিনের আলোতে ভিডিও করুন। তাই বলে প্রখর রোদ্রে না। সরাসরি সূর্যের আলো পড়ছে না এমন জায়গা বেছে নিন। প্রয়োজনে সাদা কাগজ বা বোর্ড দিয়ে আলো ফেলুন সাবজেক্টে। (নাটক/সিনেমা’র শুটিং দেখে থাকলে বুঝবেন ব্যাপারটি)

৫. সাউন্ড নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়বেন। কারণ বাইরে শুটিং করতে গেলে সাউন্ড সেভাবে রেকর্ড হবে না। প্রয়োজনে পরিবারের অন্য কারো মোবাইল দিয়ে আলাদা করে সাউন্ড রেকর্ড করুন। পরে মূল ভিডিও’র সাথে যোগ করে দিবেন।

৬. পোষ্ট প্রসেসিং / এডিটিং – এই কাজটিও করবেন আপাতত মোবাইলে। অনেক ধরণের ফ্রি এপ আছে। যে কোন একটি বেছে নিন। অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে বাদ দিন। লেখা এড করুন শুরুতে এবং শেষে।

৭. আপাতত ফেসবুকে অনলি মি করে অথবা ইউটিউবে প্রাইভেট করে আপলোড করুন।

৮. আত্মীয়-স্বজন / বন্ধুবান্ধবদের দেখান নিজের মোবাইল থেকে। এমন কাউকে অবশ্যই দেখাবেন যারা মূখের উপর ঠাঁস করে সমালোচনা করতে পারে। রাগ করবেন না বা হতোদ্যম হবে না। তাকে জিজ্ঞেস করুন কি ভুল ছিলো বা কিভাবে আরো ভাল করা যাবে।

খূব সহজে বলে ফেললাম হয়তো। তবে এপর্যন্ত আসতে আপনার যথেষ্ঠই সময় ব্যয় করতে হবে। আপনি হয়তো বার বার নতুন ক্যামেরা / গিয়ার কেনার জন্য অস্থির হবেন। নিজেকে সংযত করুন। টাকা জমিয়ে রাখুন, জমানো টাকার একটা অংশ ব্যয় করুন ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখার জন্য (যদি আপনার বাসায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন না থাকে)। প্রাথমিক ভাবে মোবাইল ভিডিও তৈরীর বিভিন্ন ভিডিও দেখুন। এরপর ধাপে ধাপে লাইটিং, সাউন্ড কিভাবে উন্নত করা যায় সেরকম ভিডিও। সবশেষে জোর দিন ভিডিও এডিটিং কিভাবে করবেন সেসব ভিডিও। বাসায় নিজের ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ থাকলে ভিডিও এডিটিং এর কাজ সেখানেই করুন। পরবর্তীতে ভাল ক্যামেরা কিনলে এই জ্ঞান আপনাকে যথেষ্ঠই সাহায্য করবে।

এপর্যন্ত আসতে পারলে এবার খূঁজে বের করুন আপনার পছন্দের বিষয়, যেটি নিয়ে আসলে আপনি ইউটিউবে ঝাঁপ দিতে চান। এপ্রসঙ্গে অন্য কোন দিন।

[এখানে বলে রাখা ভাল এই মূহুর্তে আমি কিন্তু ইউটিউবার না, ছোট একটা চ্যানেল ছিলো, গোটা বিশেক ভিডিও আর ১০০- সাবস্ক্রাইবার ছিলো। কিছুদিন আগে পুরো চ্যানেল মুছে দিয়েছি আবার নতুন করে শুরু করবো বলে।]

Featured Image – Logo vector created by freepik – www.freepik.com

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।