ওজনামৃত

বছর তিনেক আগে ওজন কমানোর প্রচেষ্টায় হাটাহাটি শুরু করেছিলাম। সেই সাথে খাওয়া-দাওয়াও কমিয়েছিলাম, বিশেষ করে ভাত। ফলাফল আমার ওজন একসময় ৮৯ কেজি থেকে কমে ৭৫ কেজিতে নেমে আসে। আমার উচ্চতা (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) অনুযয়ী আমার আদর্শ ওজন হওয়া উচিত ৬৮-৭০ কেজির মতো। মানে আমি আমার আদর্শ ওজনের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছিলাম। 

বিধি বাম। এরপরই শুরু হলো করোনার উৎপাত। বাইরে যাওয়া বন্ধ, হাটাহাটি বন্ধ। ওজন চুপিসারে আবার বাড়তে শুরু করেছিলো। এরপর ২০২১ সালের ৪ঠা মে আম্মা মারা গেলেন। এরপর আব্বাও ব্যাপক অসুস্থ্য হয়ে গেলেন। অসুস্থ্য আগে থেকেই ছিলেন, কিন্তু সেবার ইউরিন ইনফেকশন হয়ে অবস্থা খূবই খারাপ হয়ে গেলো। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার বলেছিলেন বয়স অনুযায়ী তার ইনফেকশন অনেক বেশী। দেখা যাক কি হয়। ১১ দিন পর বাসায় নিয়ে আসার পর দেখা গেলো আব্বা আর তেমন নড়াচড়া করতে পারেন না, খাওয়াতে হয় NG Tube দিয়ে। হাটাচলা অবশ্য আগেই বন্ধ হয়েছিলো, কিন্তু তখন পাশ ফিরতে পারতেন, হাত-পা নাড়া-চাড়া করতে পারতেন। এবার সব বন্ধ, গায়ে মশা বসলেও তাড়াতে পারেন না। কথাবার্তা বলা কিংবা বুঝতে পারাও মনে হয় দিন দিন কমে আসছিলো। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের ১৩ই ডিসেম্বর চলেই গেলেই। 

যাই হোক। এই সময়টা আমার হাটাচলা ধরতে গেলে বন্ধই। ২ বছর বা বেশী সময় হয়তো উত্তরার বাইরেই আর যাওয়া হয় নাই। বাসা থেকে বের হতাম কেবল ঔষধ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিস কিনতে। আর যেতাম হাসপাতালে আব্বার ডাক্তারের কাছে পরামর্শের জন্য। আব্বা মারা যাওয়ার পর ওজন মেপে দেখি প্রায় ৮৫ কেজি। সুতরাং আবার হাটাহাটি শুরু। 

এবার দেখা গেলো ওজন ৮০ কেজিতে এসে থেমে গেলো। এর আগেরবারও একই কাহিনী হয়েছিলো। ওজন ৮০ কেজির নিচে নামাতে বেশ কসরত করতে হয়েছিলো। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেখতেছি কোন সপ্তাহে ওজন কমে তো পরের সপ্তে আবার একটু বাড়ে। তারপরের সপ্তাহে হয়তো আরেকটু কমলো তো পরের সপ্তাহে আবার বেড়ে গেলো। এই বাড়া-কমার রেঞ্জ ১ কেজির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আজ সকালে ওজন ছিলো ৮০.৮ কেজি, আগের সপ্তাহে ছিলো ৮০.৭ কেজি। তারও এক সপ্তাহ আগে ছিলো ৮০.৯ কেজি। গত ৩ মাসে সর্বনিম্ন ওজন ছিলো ৮০.৩ কেজি। 

গত শুক্রবারে ওজন মাপার পর হাটা বন্ধ করলাম। উদ্দেশ্য ছিলো ওজন কতটুকু বাড়ে দেখা। এই এক সপ্তাহ দুপুরে ভাত খাই নাই। সকালে আর রাতে রুটি। শুক্রবারে সকালে বাসায় খিচুড়ি রান্না হয় সকালের নাস্তায়, সেটা খেয়েছি। শবেবরাতে হালুয়া খেয়েছি, গোটা তিনেক বরফি। ওজন বেড়েছে ০.১ কেজি মানে ১০০ গ্রাম। কাল থেকে আবার আগের নিয়মে হাটা শুরু করবো। চেষ্টা থাকবে প্রতিদিন ১০+ হাজার ষ্টেপস হাটার।

অপেক্ষায় রইলাম কবে নাগাদ ওজন ৭৫ কেজি … অতঃপর ৭০ কেজি হয়।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।