এভাবেই এগিয়ে চললো আমার ডিএক্সইং। টু-ইন-ওয়ানে রেডিও শুনতে গেলে সমস্যা হলো ছোট্ট এক জায়গায় সব ষ্টেশন গাঁদাগাদি করে আছে। একটা থেকে আরেকটা আলাদা করা বেশ কঠিন। আবার আয়োনোস্ফিয়ারের কারণে সবদিন অনুষ্ঠান ভাল শোনাও যেতো না। এক্ষেত্রে অবশ্য ভোয়া, বিবিসি, ডয়েচে ভেলে এদের সার্ভিস বেশ ভাল ছিলো। কারণ তারা যে এলাকায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতো করতো তার আশেপাশেই ট্রান্সমিটার স্থাপন করতো। যতদূর মনে পড়ে ডয়েচেভেলের ট্রান্সমিটার ছিলো শ্রীলঙ্কায়।
আরেকটা বিষয় ছিলো ফ্রিকোয়েন্সি জানা। এসব এনালগ সেটে সরাসরি ফ্রিকোয়েন্সি জানা বা বুঝার কোন স্কোপ ছিলো না। রেডিও’র যে স্কেল ছিলো তাতে মিটার ব্যান্ড দেখে এবং অনুষ্ঠান প্রচারের সময় যে ফ্রিকোয়েন্সি বলতো সেটা মিলিয়ে বুঝতে হতো আমি আসলে কোন ফ্রিকোয়েন্সিতে অনুষ্ঠান শুনছি। সাধারণত প্রতি আধ ঘন্টা অন্তর ষ্টেশন আইডি (ষ্টেশনের নাম) এবং এক ঘন্টা অন্তর ষ্টেশন আইডি, সময়, ফ্রিকোয়েন্সি এসব বলা হতো। সময় বলা হতো জিএমটি বা ইউটিসি সময়, যা বাংলাদেশের সময়ের চাইতে ৬ ঘন্টা আগে। যেমন ০ আওয়ার্স জিএমটি বা ইউটিসি মানে হলো আমাদের সকাল ৬টা। আঞ্চলিক এবং বিভিন্ন ভাষার অনুষ্ঠানগুলি অবশ্য এই সময় এর সাথে সাথে আঞ্চলিক সময় ও বলতো। যেমন – বিবিসি বাংলা সার্ভিস জিএমটি/ইউটিসি সময়ের সাথে সাথে সাথে লন্ডন, বাংলাদেশ এবং ভারতীয় সময় বলতো।
১৯৮৯ সালে খূব হঠাৎ করেই সুইডেন যাওয়ার সূযোগ হয়ে গেলো। যাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথম চিন্তা যে করেই হোক একটা ডিজিটাল রেডিও কিনতে হবে। ঢাকায় তখন কিছু ডিজিটাল সেট পাওয়া যেতো বটে, কিন্তু দাম ছিলো সাধ্যের বাইরে। বাইতুল মোকাররম / ষ্টেডিয়াম মার্কেটে ঘুরতে ঘুরতে একদিন সুইমিং পুলের কাছের এক দোকানে আবিস্কার করলাম বেশ কয়েকটা ডিজিটাল রেডিও। দোকানদার’কে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম দাম কেমন। বাংলাদেশে সাধারণত এসব মার্কেটে দাম জিজ্ঞাসা করা বিরাট হ্যাপা। কারণ দাম বলেই তারা আশা করে কাষ্টমার জিনিসটা কিনবে। কিছু না বলে চলে আসতে গেলেও ঝামেলা, কোন একটা দাম আপনাকে বলতেই হবে। আর যদি বলেন যে কিনবেন না, তখন তো বিরাট অপরাধ – তাহলে দাম জিজ্ঞাসা করলেন কেন। এখন অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা ভাল। অনেক দোকানেই জিনিসের গায়ে প্রাইস ট্যাগ থাকে। তবে বাইতুল মোকাররম বা ষ্টেডিয়াম মার্কেটে এখনও একই অবস্থা। কিছু কিছু দোকানের, বিশেষ করে ক্যামেরার দোকানের ফেসবুক পেজ আছে। সেখানে অবশ্য প্রাইস পাওয়া যায়।

অবশেষে সুইডেন রওনা হলাম। আব্বা যাওয়ার সময় প্লেন টিকেটের বাইরে আমার হাতে দিলেন ৭৫ ডলার (জ্বি, ৭৫ ডলার, পূরো ১০০ ডলারও না)। যেহেতু চাচার বাসায় উঠবো এবং ছোট-খাট একটা সামার জব করবো, তাই। আমি অবশ্য একটু হতাশ হয়েছিলাম ৭৫ ডলার হাতে পেয়ে। তবে শেষ পর্যন্ত আমার এই ৭৫ ডলার আর ভাঙ্গাতে হয়নি। ১৯৯০ সালে যখন দেশে ফিরলাম তখন এই ৭৫ ডলার আমার পকেটেই ছিলো।
ছবি : Philips D2935 Radio (সূত্র : ইন্টারনেট)
[চলবে]
ফেসবুক মন্তব্য