বাণিজ্য মেলা

কয়েকদিন ধরেই চিন্তা করছিলাম যাব। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতা করে, পত্রিকা পড়ে দেখা যায় ১২টা বেজে যায়। তখন আর বের হতে ইচ্ছা করে না। আজ শেষ পর্যন্ত বের হলাম এবং রওনা হলাম হাড়ি-পাতিল মেলার দিকে। শেষ কবে গিয়েছিলাম মনে নাই, তবে সেটা আগারগাঁও এ ছিলো। যানযট, ধূলোবালি আর যানবাহনের অপ্রতুলতায় ঐদিকে আর যেতে ইচ্ছা করতো না। গত কয়েক বছর অবশ্য আব্বা-আম্মার অসুস্থতা আর মৃত্যুর কারণে যাওয়া হয় নাই। অবশ্য করোনার সময় মেলা হয়েছিলো কিনা সেটাও মনে করতে পারছি না।
 
নতুন জায়গায় যাওয়া একটা সমস্যাই বটে, যদি নিজের গাড়ী না থাকে। তবে এবার দেখলাম বিআরটিসি শাটল বাস সার্ভিস চালু করেছে। আমার জন্য কাছের ষ্টপেজ হলো কুড়িল। বাসে করে কুড়িল বিশ্বরোড নেমে তারপর বিআরটিসি’র দোতলা বাসে চড়লাম। ভাড়া ৩৫ টাকা। ৩০০ ফিট দিয়ে সোজা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার দিকে। পথের দৃশ্য বেশ ভাল। কাছাকাছি এসে বাস দেখি মেইন রোড ছেড়ে গ্রামের পথ ধরলো। অবশেষে জায়গা মতো। তবে বাস যেখানে থামে সেখান থেকে মেলায় যেতে কিছুটা হাটতে হয়। টিকেট কাউন্টারও করেছে শেষ মাথায়।
 
৫০ টাকার টিকেট কেটে ঢুকলাম। টিকেটে কোন পুরস্কার নাই।
 
প্রথমেই চোখ গেলো কনভেনশন সেন্টারের দিকে। তার সামনে একটা ঝড়ণা। ঝড়ণার ছবি তোলার সময় হেলিকপ্টারের শব্দ পেয়ে ক্যামেরার মাথা উপরে তুলতে গিয়ে নিচে নামিয়ে ফেললাম। পরে উপরে যখন উঠালাম হেলিকপ্টার গায়েব।
 
এরপর ভিতরে ঢুকে ঘোরা শুরু করলাম। কনভেনশন সেন্টার বেশ বড়। ভিতরে ষ্টল আছে। আবার সেন্টারের বাইরে তিন দিকে আরো ষ্টল। আগারগাঁও এর মতো ব্যাপক আওয়াজ নাই। ধূলাও নাই। ভীড় খূব বেশী না। এক তো সপ্তাহের মাঝে, তারপর বেটাইম। স্কুল কলেজের পোলাপান আসছে বেশ কিছু, জোড়ায় জোড়ায় বলাই বাহুল্য।
 
কেনার মতো জিনিস খূব একটা নাই। তবে মহিলারা গৃহস্থালী পণ্য আর জামাকাপড় কিনতে পারেন। বিদেশী ষ্টল বলতে ভারত, পাকিস্তান আর ইরানের কিছু ষ্টল দেখলাম। তবে সেগুলো কোনটাই অফিসিয়াল না, মনে হলো ব্যক্তি উদ্যোগে। আর জিনিসপত্র বেশীরভাগই দেশী আর চাইনিজ। এক সাইডে বিভিন্ন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ষ্টল। যেমন ওয়ালটন, মিনিষ্টার, আখতার ইত্যাদি। সেখানে বিদেশী একটা কসমেটিকস এর ষ্টল দেখলাম। নাম শুনি নাই।
 
ফেরার পথে আমি নাবিস্কো থেকে এসোর্টেড বিস্কুট আর অলিম্পিক থেকে বিভিন্ন ধরণের কেক এর প্যাকেট কিনলাম। অলিম্পিকের ষ্টলে দুটো বিস্কুট দিলো টেষ্ট করার জন্য। আর কেক কেনার সময় বঙ্গ (ওটিটি) এর গিফট কার্ড দিলো, এক মাসের সাবস্ক্রিপশন।
 
আরেকটা ব্যাপার চোখে পড়লো। মেলায় বেশ কিছু আচারের দোকান আছে। আগে কোন মেলায় আলাদা আচারের দোকান চোখে পড়েছিলো কিনা মনে করতে পারলাম না।
 
মেলায় দুই-তৃতীয়াংশ ঘোরার পরই আমার ক্যামেরার মেমরি ফুল হয়ে গিয়েছিলো। বাকিটা আর ভিডিও করা হয় নাই। 
 
ফেরার পথে চিন্তা করলাম কুড়িলে নেমে দুই ব্যাগ নিয়ে আবার উত্তরার বাসে উঠা কঠিন হবে। তাই সোজা গেলাম ফার্মগেট, সেখান থেকে মেট্রোতে উত্তরা। টাকা একটু বেশী লাগলেও আরামে আসা গেছে। মেলা থেকে ফার্মগেটের ভাড়া ৭০ টাকা। 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।