অমীমাংসিত রহস্য

নেটফ্লিক্সে ডকুমেন্টারি দেখছি ‘আনসলভড মিষ্ট্রিজ’। মূলতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা (বিশেষ করে  খুন) যেগুলো অনেক বছর ধরে কোন কিনারা করা যাচ্ছে না তার উপর ভিত্তি করে এই সিরিজ। ভাবতে অবাক লাগে এতো উন্নত একটি দেশে এখনও অসংখ্য মামলা অমীমাংসিত অবস্থায় আছে। কোন কোন কেস প্রায় ৫০ বছর আগের। 

গতকাল দেখলাম ফ্রান্সের এক কাহিনী। আদর্শ পরিবার বলে পরিচিত ছিলো এরা। পরিবারে বাবা-মা এবং ৪ ছেলে-মেয়ে। ছেলে ৩ জন আর মেয়ে একজন। তারা আবার বেশ ধার্মিক। ছেলে-মেয়েদের সবাই প্রাইভেট ক্যাথলিক স্কুল-কলেজে পড়তো। পাড়া প্রতিবেশীও তাদের খূব প্রশংসা করতো। কর্তার বন্ধুদের বক্তব্যও একই রকম। এমন অমায়িক, বন্ধুবৎসল মানুষ আর হয় না। সবাই একবাক্যে জানালো সে একজন আদর্শ পিতাও।

এরকম এক আদর্শ পরিবার একদিন হঠাৎ করে নাই হয়ে গেলো। প্রতিবেশীরা ভাবলো হয়তো কোথাও বেড়াতে গিয়েছে। বাসার দরজায় এক নোটিশও দেখা গেলো যে কুরিয়ার সার্ভিস থেকে কোন পার্সেল আসলে যেন সেগুলো ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়। কোন এক প্রতিবেশীর একটু সন্দেহ হলো। বাসার সামনে একটি বাদে সব গাড়ীই আছে। তাহলে কি এক গাড়িতে ৬ জন মানুষ আর ২টা কুকুর গেলো !!! এতো অসম্ভব। প্রতিবেশী পুলিশে ফোন দিলেন। পুলিশ আসলো, দরজার তালা খুলে ভিতরেও ঢুকলো। তবে সন্দেহজনক কিছু না দেখে ফিরে গেলো। পর পর কয়েকদিন তারা আসলো এবং ফিরে গেলো। হঠাৎ করেই কিছু চিঠি আসলো বাসায়। সেখানে বলা হয়েছে যে তারা আসলে আমেরিকার ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সীর হয়ে কাজ করতো। নিরাপত্তার কারণে তাদের আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশের সন্দেহ হলো। এবার পরিদর্শনের সময় ব্যালকনির নিচে তারা সন্দেহজনক কিছু খূজে পেলো। দেখা গেলো সেখানে মাটি খোড়া হয়েছিলো। পুলিশ মাটি সরাতেই পেয়ে গেলো কিছু ব্যাগ। এক এক করে বের হয়ে আসলো ৫টি লাশ। স্ত্রী এবং ৪ সন্তান। কিন্তু কর্তার কোন হদিস নাই। পুরো শহরের মানুষ স্তম্ভিত হয়ে গেলো। 

এবার জোরে-শোরে শুরু হলো খোঁজা। সিসিক্যাম, ক্রেডিট কার্ড রেকর্ড ইত্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা গেলো কর্তা তখন অনেক দূরে, ফ্রান্সের আরেক প্রান্তে চলে গেছেন। সেটি একটি পাহাড়ী এলাকা। পুলিশ প্রশিক্ষিত কুকুর এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার করেও কোন কিছু খূজে পেলো না। পুলিশ ধারণা করলো জলপথ ব্যবহার করে কর্তা হয়তো অন্য কোন দেশে পালিয়ে গেছে। তারপর আরো দূরে। 

কিন্তু কারণ কি ছিলো এই হত্যাকান্ডের !?! পুলিশ তদন্ত করে খূজে পেলো কর্তা আসলে ব্যবসায় সূবিধা করতে পারছিলো না। দিন দিন তার অর্থ সম্পদ কেবল কমছিলো। আরও জানা গেলো কর্তার বাবাও কপর্দকহীন অবস্থায় হার্ট এটাকে মারা গিয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর কর্তা কেবল একটি আংটি আর একট রাইফেল পেয়েছিলেন। ট্র্যাজেডি হলো এই রাইফেল দিয়েই সে ৫ জনকে হত্যা করেছিলো। ভিসেরা পরীক্ষায় ঘুমের ঔষধের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ঘুমের মধ্যে মাথায় গুলি করা হয়। হয়তো কর্তা তার মেকি জীবন-যাপনের বোঝা আর বহন করতে পারছিলো না। এরকম হত্যাকান্ডের পর সাধারণত হত্যাকারী আত্মহত্যা করে। কিন্তু কর্তা তা করে নাই। সে পালিয়ে গেছে। পুলিশ এখনও তাকে খূজছে।

এই সিরিজ দেখতে দেখতে আমার মনে হলো উন্নত দেশের শিক্ষিত মানুষদের সাথে বাংলাদেশের মানুষদের পার্থক্য খূব একটা নাই। কোন ঘটনা ঘটলে আমরা যেমন সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপকারে নিজস্ব মতামত দিতে থাকি, সেখানেও তাই। এক একজন এক্সপার্ট অপিনিয়ন দিতে থাকে। আবার তাদের আইনও অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন। কেউ যদি পুলিশের তদন্তে সহযোগীতা করে না চায়, পুলিশ জোর করে কিছু করতে পারে না। ফলে তদন্তও শেষ হয় না। 

ভাল থাকুন নিরন্তর।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।