প্রাইম ব্যাংকের প্রাইমডিজি

আমার একাউন্ট সোনালি ব্যাংকে। এমনিতে সোনালি ব্যাংকের ব্যাপারে বড় কোন অভিযোগ নাই। মাসে হয়তো ২/১ বার ব্যাংকে যাই টাকা তোলা বা জমা করার জন্য। আর যেতে হয় আব্বার পেনশনের জন্য। তবে এই করোনাকালে ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে ব্যাপক ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হয়েছে। সেই সাথে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। মনে মনে একটা অনলাইন ব্যাংক এর অভাব অনুভব করছিলাম।
 
প্রাইমডিজি সম্পর্কে জেনে একদিন সব কাগজপত্র, ছবি ইত্যাদির স্ক্যানড কপি নিয়ে বসলাম পিসির সামনে। আমার মনে হয়েছিলো ডিজিটাল যেহেতু, হয়তো বিকাশ / রকেট / নগদ এর মতো সব কিছুই ডিজিটালি সাবমিট করতে হবে। আমাকে কেবল নাম ঠিকানা নমিনি ইত্যাদি গৎবাধা সব জিনিস পূরন করতে হলো। কোন কাগজপত্র / ছবি সাবমিট করতে হলো না।
 
ফর্ম ফিলআপের সময় ছোট একটা ভুল হয়েছিলো। আমি মনে করেছিলাম তাদের উত্তরায় একটি শাখা। সেটাই নির্বাচন করেছিলাম। পরে জানলাম আমার বাসার কাছে আরো একটি শাখা আছে গরীব এ নেওয়াজ এ।
 
দুই দিন পরেই হেড অফিস থেকে ফোন আসলো। এক আপার সাথে কথা হলো। তাকে শাখার ব্যাপারটা বলতেই উনি বললেন তিনি গরীব এ নেওয়াজ শাখায় আমার এপ্লিকেশন ফরোয়ার্ড করে দিবেন। কাগজপত্র কি নিতে হবে সেটাও বলে দিলেন।
 
ঈদের পর ফোন আসলো উত্তরা শাখা থেকে। আমি যখন বললাম আমি ভুলে উত্তরা শাখা দিয়েছিলাম তখন তিনি জানালেন সমস্যা নাই। আমার এপ্লিকেশন টি প্রিন্ট করে গরীব এ নেওয়াজ শাখায় গেলেই হবে। এখানে বলে রাখা ভাল অনলাইনে ফর্ম ফিলআপের পর একটা পিডিএফ কপি জেনারেট করে সব তথ্য সহ। পরে ভাইসাব আরো একদিন ফোন করেছিলেন। যাই হোক আমি একদিন সব নিয়ে গরীব এ নেওয়াজ শাখায় গেলাম। এক আপাকে সব কাগজপত্র দিয়ে শাখার ব্যাপারটা বললাম। তিনি প্রিন্ট কপি দেখতে দেখতে জানতে চাইলেন ইনকাম সোর্স কি। বললাম সঞ্চয়পত্র। জানালেন প্রুফ লাগবে। কি প্রুফ, সঞ্চয়পত্রের ফটোকপি। অথচ হেড অফিসের আপা বা উত্তরা শাখার ভাইসাব এই প্রুফ নিতে হবে সেরকম কিছু বলেন নাই। হেড অফিসের আপা ইনকাম সোর্স জানতে চেয়েছিলেন, সেটা এপ্লিকেশনেও ছিলো। তিনি কেবল মিলিয়ে নিচ্ছিলেন।
 
গরীব এ নেওয়াজ শাখার আপা যখন ইনকাম সোর্সের প্রুফ ছাড়া এপ্লিকেশন নিতে চাচ্ছিলেন না তখন আমি সব কাগজপত্র ফিরিয়ে নিয়ে তার নাম এবং ডেজিগনেশন জানতে চাই। কেন জিজ্ঞাসা করায় বললাম হেড অফিস বা উত্তরা শাখা থেকে ফোন করলে তো বলতে হবে অমুকে এই কাগজ ছাড়া একাউন্ট করেন নাই তখন উনি আমাকে অপেক্ষা করতে বলে ম্যানেজার সাহেবকে খূজতে লাগলেন। পরে ম্যানেজার সাহেবের সাথে আলাপ হলো। উনি খূব চমৎকার ভাবে জানালেন তার কাছে ফরোয়ার্ড করা হলে তিনি একাউন্ট করে দিতে রাজি আছেন, কোন সমস্যা নাই। তারপর নিজেই উত্তরা শাখায় ফোন করে কথা বললেন। শেষে বললেন আমি যেন একটু কষ্ট করে উত্তরা শাখায় যাই। সেখানে একাউন্ট হয়ে গেলে তার শাখা থেকেই সব লেনদেন করা যাবে।
 
আমার আর লেফট-রাইট করতে মন চাইলো না। আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে সোজা গেলাম অল্প একটু সামনেই ইষ্টার্ন ব্যাংকের শাখায়৷ প্রাইম ব্যাংকে দেয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র, ছবি নিয়েছিলাম সেগুলো দিয়েই ইনষ্টা একাউন্ট খুলে ফেললাম। তারাও একটা এপ ডেভেলপ করেছে, এখন কেবল ব্যাংক অফিসিয়ালরাই সেটা ব্যবহার করে একাউন্ট খুলে দিতে পারেন। এপ একটু ঝামেলা করছিলো, তারপরও আপা বেশ ধৈর্য্য নিয়ে কাজ শেষ করলেন। আমি টাকা জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে বের হয়ে আসলাম। এখানেও ইনকাম সোর্স সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। উত্তর শুনে কাকে যেন ফোন দিলেন। তারপর আমাকে জানালেন আমি মাসে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা লেনদেন করতে পারবো।
 
প্রাইম ব্যাংকের প্রাইমডিজি আসলে ডিজিটাল মোড়কে এনালগ সার্ভিস। যদিও বলা হয়েছে ব্যাংক থেকে কেউ বাসায় এসে কাগজপত্র সব নিয়ে যাবেন, বআমার ক্ষেত্রে এরকম কোন কথা ব্যাংকের কেউ বলেন নাই। ব্যাংকের ওভারঅল সার্ভিস কেমন জানি না, তবে শুরুতেই যে অভিজ্ঞতা হলো তাতে আর কোনদিন প্রাইম ব্যাংকের ধারে কাছেও যাব না, শিওর থাকতে পারেন।

ফেসবুকের এই গ্রুপে পোষ্ট দিয়েছিলাম। সেখানে বিভিন্নজনের মন্তব্য দেখতে পারেন।

ভাল থাকুন সব সময়।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।